শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

SW News24
বৃহস্পতিবার ● ১৯ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » সংবাদ কপি করে সাংবাদিকতার প্রবাণতা বাড়ছে
প্রথম পাতা » মুক্তমত » সংবাদ কপি করে সাংবাদিকতার প্রবাণতা বাড়ছে
১১২ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ১৯ জুন ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সংবাদ কপি করে সাংবাদিকতার প্রবাণতা বাড়ছে

 --- প্রকাশ ঘোষ বিধান

অন্য সাংবাদিকের প্রকাশিত সংবাদ কপি করে সাংবাদিকতার প্রবাণতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। কপি রাইট বা কপি করা সাংবাদিকের ভীড়ে প্রকৃত প্রতিবেদক বা সাংবাদিক হারিয়ে যাচ্ছে। কপি করা সাংবাদিকের প্রচার, প্রচারণা ও গলার স্বর সব সময় উচু। এসব কপি সাংবাদিকদের দৌরান্ত্যের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে মূলধারার পেশাদার সাংবাদিকরা।

সংবাদ কপি করা মানে হল, অন্য কোনো উৎস থেকে প্রকাশিত সংবাদ হুবহু বা সামান্য পরিবর্তন করে নিজের নামে প্রকাশ করা। এটি সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী এবং এর ফলে সাংবাদিকতার মান ক্ষুণ্ণ হয়। সংবাদ কপি করা একটি গুরুতর অপরাধ। সংবাদ কপি করা সাংবাদিকতার নৈতিকতা লঙ্ঘন করা, সাংবাদিকতার মৌলিক নীতি, যেমন সত্যতা ও বস্তুনিষ্ঠতার পরিপন্থী। কপি করা সংবাদে তথ্যের সঠিকতা বা গভীরতা নাও থাকতে পারে, যা সামগ্রিকভাবে সাংবাদিকতার মান কমিয়ে দেয়। অন্যের লেখা সংবাদ কপি করা হলে পাঠকরা সাংবাদিকদের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারে না।

এক শ্রেণীর সাংবাদিকদের মধ্যে চলছে এখন কপি পোস্ট প্রতিযোগিতা। মুলত সাংবাদিকতার জগতে কপি পোস্ট করা মানে চুরি করা সাংবাদিকতা। একজন দক্ষ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক অনলাইন পোর্টালে কোন বিশেষ প্রতিবেদন, অনুসন্ধানী সংবাদ আপলোড করলে সেই সংবাদ কপি করে তাদের মিড়িয়ায় প্রচার করে নিজেকে দক্ষ সাংবাদিকের পরিচিতি তৈরি করছেন। কপি পেস্ট করা এ সংবাদটি ঘুরছে সব মিডিয়ায়। সাংবাদিকতার মধ্যে এখন চরম ধরনের পাইরেসি চলছে। দেশের হাতেগোনা কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে রিপোর্ট আপলোড হয়েছে, ব্যাস এখন কপি করে শুধু ডেট লাইন আর হেড লাইন পরিবর্তন করে নিজের নামের ফাইল পাঠাতে পারলেই হলো। ওই রিপোর্টটি পাঠানোর পর তাদের অনলাইনে আপলোড হলেই বিশিষ্ট সাংবাদিক হয়ে গেলেন। তিনি ফেসবুক বা পেজে শেয়ার দিয়ে নিজের নাম নিজে ঢ়াক-ঢ়োল পিটিয়ে জানাতে থাকেন। সমাজে নিজেকে বড় মানের সাংবাদিক হিসাবে জাহির করেন।

বর্তমানে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা চর্চায় ব্যবহৃত তথ্যপ্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে স্যাটেলাইট সম্প্রচার নেটওয়ার্ক, টেলিভিশন, ভিডিও, ডিজিটাল রেডিও, ইন্টারনেট, ওয়্যারলেস যোগাযোগ পদ্ধতি যেমন, মোবাইল ফোন, ভিডিও, ডিজিটাল ভিডিও, সিডি ডিস্ক, ভি -রম এবং ভিডিও-ভয়েজ মেইল ইত্যাদি। এখন স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সকল স্তরের সাংবাদিকরা তথ্যের আদান প্রদানে এসব নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। মফস্বল সাংবাদিকরা জেলা প্রতিনিধিদের কাছে আবার জেলা প্রতিনিধিরা জাতীয় মাধ্যম-প্রতিষ্ঠানে সংবাদ প্রেরণ করছে এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করেই। নতুন তথ্যপ্রযুক্তি আসার আগে একটি সংবাদ জাতীয় পত্রিকা অফিসে প্রেরণ করতে কয়েকদিন লেগে যেত, বর্তমানে সাংবাদিকরা তা মুহুর্তের মধ্যে সম্পন্ন করছে। তবে তথ্য প্রযুক্তি ও ডিজিটাল যুগে বেকায়দায় পড়েছেন প্রকৃত ও পেশাদার সাংবাদিকরা। পেশাদার সাংবাদিকদের লেখা প্রকাশিত রিপোর্টটি কপি করে অনলাইন বা পেইজে আপলোড করে নিজের নামে প্রচার করছে। এতে পাঠক, সাধারণ মানুষ, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, পেশাদার সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সচেতন নাগরিকগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে।

সাংবাদিকতায় দায়িত্বশীল ও প্রভাবশালী অনলাইনগুলোর প্রতিটি সংবাদকর্মী বা প্রতিবেদক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিশ্চিয়তার বিষয় ও তাদের বক্তব্য নিয়ে রিপোর্ট তৈরী করে থাকেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ডেইলি রিপোর্ট তৈরী করে তা পত্রিকা অফিসে পাঠাতে হয়। ভোর থেকে গভির রাত পর্যন্ত নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ফিচার, কলাম ও প্রতিবেদন তৈরীতে ব্যস্ত থাকতে হয়। সংবাদের ক্ষেত্রে উৎস ও তথ্যদাতার উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। কিন্তু এখানে ওই সকল সংবাদকর্মী বা সাংবাদিক বিষয়টি তুচ্ছ মনে করে একই রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন তাদের অনলাইন পোর্টালে বা পত্রিকায়। এবিষয় কপি করা সাংবদিকরা কোন নিতি নৈতিকতা মানছে না। এসব অনলাইনে যারা কাজ করেন তারা আবার ফেসবুকেও রিপোর্টটি পোস্ট করতে অভ্যস্ত। অনলাইনের পাঠক ও ফেসবুকের বন্ধুরাও ওই রিপোর্টটি পড়ে বুঝে নিতে বাধ্য হন যে, সাংবাদিক কত ভালো না রিপোর্ট করেছেন। আবার আপলোড হওয়া রিপোর্টটি দেখার জন্য অন্য সংবাদকর্মীদের ফোন করে আনন্দের সঙ্গে জানান, আজকে আমার অনলাইন দেখেন আমার পাঠানো রিপোর্টটি  প্রথম পাতায় আপলোড করেছে। ওই সকল সংবাদকর্মীরা কি ভেবে দেখেছেন, যিনি প্রথম রিপোর্টটি তৈরী করেছেন তার কেমন সময় লেগেছে, একটি লাইন লিখতে কতবার ভুল হয়েছিলো, কতবার তাকে লাইনের শব্দ পরিবর্তন বা সংযোজন করতে হয়েছে। আর কতবার সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত ও বক্তব্য নেওয়ার জন্য মোবাইলে কল করতে হয়েছে। সংবাদ তৈরির পেছনে ঘটনার কেহ খোঁজ রাখে না। এছাড়া অনেক সময় একটি ঘটে যাওয়া ঘটনার রিপোর্ট তৈরীতে তথ্য পাওয়া কষ্টকর হয়, স্থানীয় বা সংশ্লিষ্টদের কাছে ফোন করেও তেমন কোনো তথ্য বা বিষয়টির পুরিপূর্ণ নিশ্চিয়তা দিতে পারেন না। এরকম রিপোর্ট তৈরী করতে পরিবর্তন ও সংযোজন করা লাগে।

বর্তমান সময়ে দেখা ও পরিচিত অনেক সংবাদকর্মী আছেন, যারা শুধু নাম মাত্র প্রিন্ট মিডিয়া বা অনলাইনের প্রতিনিধি হয়েছেন। তাদের অনেকেই সারাদিন ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরি বা নিজ ধ্ন্দা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। বিকেলে জেলা বা উপজেলার প্রকৃত সংবাদকর্মী আছে তাদের কাছে ফোন দিয়ে তার পত্রিকায় নিউজ পাঠাতে বলেন। এধরণের কপি করা সাংবাদিকদের নিউজ পাঠাতে কোনো চিন্তা ও সমস্যা নেই। কারণ তারা জানে অনলাইন নিউজ পেপারে নিউজ আপলোড হবে। তাহলে আর চিন্তা কি! ওখানে নিউজ আপলোড হলেই কপি করে তার অনলাইনে পাঠালেই তার কাজ শেষ। তিনি মস্ত বড় সাংবাদিক বনে গেলেন।

সকল সাংবাদিক ভালো নিউজ লিখতে পারবে এমনটা ভাবা ঠিক না। তবে যারা নিউজ তৈরিতে দুর্বল তার লেখার চেস্টা তো করবে। কিন্তু না, কপি করা সাংবাদিকরা সংবাদ লেখায় তাদের কোন মনোযোগ নেই। এছাড়া অনেক সংবাদকর্মী আছেন যারা একটি লাইন রিপোর্ট তৈরী করতে পারেন না। তাদের গল্প আর হাবভাব দেখলে মনে হয় তিনি না জানি কত বড় সাংবাদিক। সকালে উঠে হকারের কাছে ২-৩টা পত্রিকা নিয়ে প্যান্টের পকেটে গুজে বা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন অফিস, আদালত, ব্যাংক, বীমা, এনজিও পাড়ায়। সারাদিন এসব অফিস চষে বেড়িয়ে যার কাছে যা পান হাতিয়ে নিয়ে দিন শেষে বাড়ি ফেরেন।

আবার জেলা ও উপজেলার বেশ কিছু সংবাদকর্মী রয়েছেন যারা মাসিক ভাড়ায় নিউজ লেখা ও পত্রিকায় পাঠানোর জন্য কম্পিউটারের দোকানদার বা লোক নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন। আবার অনেকে কম্পিউটার, ল্যাপটপ খুলে বসে আছেন, কে কখন কোন অনলাইন পোর্টালে নিউজ করল, মেইল চেয়ে নিলেন না হয় অনলাইন থেকে কপি করলেন। আর এসব কপি সাংবাদিকরা নিজ মিডিয়া বা বিভিন্ন সংগঠণ থেকে সেরা সাংবাদিকতায় ক্রেস্ট বা পুরুস্কার গ্রহণ করছেন বুক চেতিয়ে।

অন্যের লেখা কপি করে সাংবাদিকতা করবেন না। আপনারও তথ্য সংগ্রহ করুন, সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে মতামত নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হন। অপরের লেখা সংবাদ কপি করে সাংবাদিকতা করা ভালো কাজ না। সংবাদ কপি করা একটি গুরুতর অপরাধ এবং এর বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার হওয়া উচিত। সাংবাদিকদের উচিত নিজস্ব সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশে মনোযোগ দেওয়া।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)