

বৃহস্পতিবার ● ৩১ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » উপকূলের প্লাস্টিক-পলিথিন দূষণ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে
উপকূলের প্লাস্টিক-পলিথিন দূষণ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে
প্রকাশ ঘোষ বিধান
প্লাস্টিক পলিথিন দূষণের ফলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি বাড়ছে। উপকূলবর্তী এলাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে পলিথিনের ব্যবহার। স্থানীয়দের পাশাপাশি সুন্দরবন দেখতে আসা অনেক পর্যটকও খাবার ও পানীয় নিয়ে আসছেন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পাত্রে। খাবারের দোকান, চায়ের স্টল কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের প্লেট, কাপ ও চামচ ব্যবহার এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবহারের পর এসব ফেলে দেওয়া হচ্ছে পাশের নদী-খালে। আর জোয়ার-ভাটার স্রোতে এসব পৌঁছে যাচ্ছে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে, যেখানে হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ।
সুন্দরবনের সীমানা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া বলেশ্বর,পশুর, খোলপেটুয়া, শিবসা, কপোতাক্ষ, মালঞ্চ, চুনকুড়ি ও মাদার নদী এখন নিয়মিত বয়ে নিয়ে যাচ্ছে পলিথিনের বোঝা। অনেকেই না জেনে বুঝেই নদীতে ফেলে দেয় ব্যবহৃত প্যাকেট, বোতল বা গ্লাস। খাল-বিল,নালা, নদী হয়ে সুন্দরবনের গভীরে প্রবেশ করছে অপচনশীল এই বর্জ্য। আর প্লাাস্টিক পলিথিন দূষণে আক্রান্ত হচ্ছে সুন্দরবন।
গত কয়েক দশক ধরে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রাণীদের আবাসস্থল ও জীববৈচিত্র্য উভয়ের জন্যই প্লাস্টিক দূষণ মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্লাস্টিক দূষণের কারণে সুন্দরবনের মাটি, জলজ ও স্থলজ পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জ্য সুন্দরবনের গাছপালা, মাছ, পাখি এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। গবেষণায় সুন্দরবনের মাছে মাইক্রো প্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের কারণে সুন্দরবনের মাছ ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এতে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সুন্দরবনের জলজপ্রাণী ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় প্লাস্টিক পলিথিন বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতিতে চলতে হবে। শুধুমাত্র সুন্দরবনে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করলে হবে না, সমগ্র উপকূলজুড়ে এবং পর্যায়ক্রমে সারাদেশে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করতে হবে।
এখনও পলিথিন বা ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না, কারণ এর সহজলভ্যতা ও সস্তা দাম মানুষকে পুরোনো অভ্যাস থেকে বের হতে দিচ্ছে না। টেকসই ও সুলভ বিকল্প না থাকায় অনেকে বাধ্য হয়ে পলিথিনই ব্যবহার করছে। এ সমস্যার সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় প্রয়োজন।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, উপকূলীয় এলাকায় ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও বাস্তবে নেই তার প্রয়োগ। স্থানীয় প্রশাসনের তেমন কোনো উদ্যোগে নেই পলিথিন বা ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। শুধু বন বিভাগের একার পক্ষে পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয়দের সম্মিলিতভাবে সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে। বন বিভাগ বছরে কয়েকবার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালায় এবং স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক সভা করে। তবে সরকার ও বনবিভাগের অংশগ্রহণ ছাড়া ব্যাপক পরিবর্তন সম্ভব নয়। প্লাস্টিক পলিথিন দূষণ বন্ধ করার এখনই সময়, আর দেরি করলে সুন্দরবনের ক্ষতি বাড়বে।
উপকূলের ব্যবহৃত পলিথিনি জোয়ার-ভাটায় চলে যায় সুন্দরবনে। ব্যবস্থাপনার অভাবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বোতল, প্যাকেট সুন্দর বনেই ফেলেন পর্যটকরা। এজন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে। প্রয়োজন সম্মিলিত সচেতনতা। একইসঙ্গে উপকূলীয় এলাকার সাধারণ মানুষ ও শিশুদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির কাজ শুরু করতে হবে, তা না হলে, ভবিষ্যতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি সম্মুখীন হতে হবে। সুন্দরবনের প্লাস্টিক দূষণ রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে, পর্যটকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, শিল্প কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বন্ধ করা জরুরি।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট