রবিবার ● ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » পলিথিন ও প্লাস্টিক সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি
পলিথিন ও প্লাস্টিক সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি
প্রকাশ ঘোষ বিধান ঃ সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান বর্তমানে পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণের কারণে মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। লোকালয়ে ব্যবহৃত পলিথিন ও প্লাস্টিক খাল, নদী ও সমুদ্র থেকে ভেসে এসে সুন্দরবনের জমা হচ্ছে। সুন্দরবনে আগত পর্যটকদের থেকেও ব্যাপক হারে প্লাস্টিক বতল, চিপস,পলিথিন ও প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়ছে। এতে মাইক্রোপ্লাস্টিক কনা বন্যপ্রাণীর খাদ্যগ্রহণ ও প্রজননে বাধা, মাটি ও পানির গুণাগুণ হ্রাস এবং মানুষের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি করছে।
বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক ও মাইক্রোপ্লাস্টিক সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরে জমা হচ্ছে।পর্যটকদের দ্বারা ব্যবহৃত ও ফেলে দেওয়া পলিথিন ও প্লাস্টিক সরাসরি বনের মধ্যে জমা হচ্ছে, যা সৌন্দর্যহানি ও দূষণ বাড়াচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ত্রাণসামগ্রীর প্লাস্টিক বর্জ্য বনের মধ্যে জমা হয়। সুন্দরবনের আশেপাশের শহর ও কারখানা থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য নদীতে মিশে বনের দিকে চলে আসছে।
বনের পরিবেশ ও প্রাণীজগতের ক্ষতি হচ্ছে। কচ্ছপ, বানর, মাছ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী প্লাস্টিক খেয়ে বা এতে জড়িয়ে মারা যাচ্ছে। মাইক্রোপ্লাস্টিক এখন মাটি ও পানির পাশাপাশি মাছের পেটেও পাওয়া যাচ্ছে, যা খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে মানবদেহেও প্রবেশ করছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ম্যানগ্রোভের ঘনত্ব ও উচ্চতা হ্রাস করছে এবং মাটি ও পানির গুণাগুণ নষ্ট করছে।
সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ গাছগুলো (যেমন সুন্দরী, গেওয়া) মাটির ওপর উঠে আসা শ্বাসমূল বা নিউম্যাটোফোর দিয়ে অক্সিজেন গ্রহণ করে। পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য এই শ্বাসমূলগুলো ঢেকে দেয়, যার ফলে গাছ পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেয়ে মারা যাচ্ছে। হরিণ, কচ্ছপ এবং মাছের মতো বন্যপ্রাণীরা অনিচ্ছাকৃতভাবে প্লাস্টিক খেয়ে ফেলছে, যা তাদের অকাল মৃত্যুর কারণ হচ্ছে। এছাড়া মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ায় বনের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীতে প্লাস্টিক মিশে মাছের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করছে। পর্যটকদের ফেলে আসা ও জোয়ারের পানির মাধ্যমে আসা প্লাস্টিক বর্জ্য পানির গুণগত মান কমিয়ে দিচ্ছে।
খাদ্যশৃঙ্খলে মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। প্লাস্টিক কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিক মাছ ও কাঁকড়ার শরীরে প্রবেশ করছে। এর ফলে ওই অঞ্চলের মানুষ যারা এসব মাছ খাচ্ছেন, তাদের শরীরেও ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রবেশ করছে।
সচেতনতা বৃদ্ধিতে সমাধানের পথ দেখাবে। পর্যটকদের মধ্যে একক ব্যবহার্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা তৈরি করা। বনের ভেতরে ও আশেপাশে কার্যকর বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা করা। প্লাস্টিক দূষণ পর্যবেক্ষণ ও এর ঝুঁকি মূল্যায়নের জন্য একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
পলিথিন ও প্লাস্টিকের আগ্রাসন সুন্দরবনের পরিবেশ, বন্যপ্রাণী ও মানুষের জীবনযাত্রাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে, যা মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জরুরি প্রয়োজন। সুন্দরবন রক্ষায় এই দূষণ রোধে পর্যটকদের সচেতনতা এবং সরকারি পর্যায়ে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।






সুন্দরবনে নিখোঁজের দুইদিন পর প্রবাসী নারী পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার
সুন্দরবনে রাস পূজায় আটক ৩২ হরিণ শিকারিকে কারাগারে প্রেরণ
পাইকগাছায় প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণ প্রতিরোধে বনজীবিদের দক্ষতা ও উন্নয়ন কর্মশালা
সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস উৎসব ৩ নভেম্বর থেকে শুরু
শুঁটকি মৌসুমে দুবলারচরে জেলেদের উৎসব
সুন্দরবনে শামুক নিধনে হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য
পূর্ব সুন্দরবনে তিন মাসে ১৪৮ জেলে আটক, ফাঁদসহ ২৪২ টি ট্রলার ও নৌকা জব্দ
৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে খুলছে সুন্দরবনের দ্বার
উপকূলীয় গোলফল বিক্রি হচ্ছে ; অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলছে 