শিরোনাম:
পাইকগাছা, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১

SW News24
রবিবার ● ১৩ মে ২০১৮
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » বজ্রপাতে প্রাণহানী ঠেকাতে তালগাছ; সুরক্ষায় জনসচেতনতা
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » বজ্রপাতে প্রাণহানী ঠেকাতে তালগাছ; সুরক্ষায় জনসচেতনতা
১০৫৬ বার পঠিত
রবিবার ● ১৩ মে ২০১৮
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বজ্রপাতে প্রাণহানী ঠেকাতে তালগাছ; সুরক্ষায় জনসচেতনতা

---
প্রকাশ ঘোষ বিধান।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ বজ্রপাতের সংখ্যা বাড়ায় মানুষ ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। বজ্রপাত এর সংখ্যা বাড়ছেই। সারাদেশে কোন না কোন স্থানে বজ্রপাতে মানুষ ও গবাদিপশু মারা যাচ্ছে। এখন বজ্রপাত কোন মৌসুম মানছে না, রৌদ্রউজ্জ্বল বৃষ্টিহীন পরিবেশে বজ্রপাত ঘটছে। তবে বর্ষা মৌসুমে এলে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়ে যায়। মেঘলা আকাশ, বিদ্যুৎ এর চমক, গগন ভেদি আওয়াজ আর ঝড়বৃষ্টির মধ্যে বজ্রপাত ঘটতে থাকে। এপ্রিল ও মে এই দুই মাসে বজ্রপাতের সংখ্যা বেশী থাকে। আর এ দূর্যোগ প্রায় ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত থাকে। আগে বছরে বজ্রপাতে দুই চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যেত। আর এখন প্রতিবছর বজ্রপাত মহামারির আকার ধারণ করেছে। গত কয়েক বছরে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুর হিসাব রেকর্ড করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। মানুষের ভাবনার অন্তনেই এই দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণের। সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দূর্যোগ হিসাবে ঘোষণা করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন আর বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বজ্রপাত বাড়ছে। তাপমাত্রা যত বেশি হবে বজ্রপাত তত বাড়বে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ৪০ বছরে বাংলাদেশের তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রী বৃদ্ধি পেয়েছে। এক ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লে ২০ শতাংশ বজ্রপাত বেড়ে যায়। এ হিসাবে বজ্রপাত বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে বজ্রপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ ভীত হয়ে পড়েছে। বর্ষাকাল শুরু থেকে বজ্রপাত বেশি হয়। আর বাংলাদেশে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতের জন্য ঝুকিপূর্ণ। প্রকৃতিক বিরূপ প্রভাবে বজ্রপাত হচ্ছে, তারপরও মানুষ থেমে নেই। কি ভাবে আকস্মিক প্রাকৃতিক দূর্যোগ বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পাওয়ার জন্য স্থানীয় জ্ঞান থেকে বের হয়ে এসেছে এক অভিমত। আর তাহলো তালগাছ লাগানো। বজ্রপাত নিরোধে তালগাছ অনেকটাই কার্যকর। বিশেষজ্ঞারা বলছেন, তালগাছে কার্বনের স্তর বেশি থাকায় তা বজ্রপাত নিরোধে সহায়তা করে। কারণ তালগাছের বাকলে পুরু কার্বনের স্তর থাকে। তালগাছের উচ্চতা ও গঠনগত দিক থেকেও তালগাছ বজ্রপাত নিরোধ সহায়ক হতে পারে।
প্রকৃতি দিয়েই প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রতিরোধে প্রকৃতি বাঁচার উপায়। তাই প্রকৃতির সহায়তা নিয়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। বর্ষ মৌসুমে বজ্রপাত বাড়ছে। চলতি বছর মার্চ ও এপ্রিল মাসে বজ্রপাতে মারা গেছে ৭৬ জন মানুষ। মার্চ মাসে ১২ জন ও এপ্রিল মাসে ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২৯ ও ৩০ এপ্রিল শুধু ২ দিনেই ২৯ জন লোক বজ্রপাতে মারা গেছে। তবে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান থেকে জানাযায়, ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মৃত্যুর হার বিভিন্ন সময়ে হ্রাস বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ১৬ সাল থেকে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়। এবছর বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৯৩ জন ও গত বছর ৪৫০ জন বজ্রপাতে মারা যান। মে মাসে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। বজ্রপাত শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাড়িয়েছে। তবে বেসরকারী হিসাবে এর সংখ্যা আরও বেশি। এর সেই সাথে গবাদিপশুও মারা যাচ্ছে ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অসংখ্য গাছপালা। তবে ঘন্টায় ২ হাজার ৮শ’র মত বজ্রপাত প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়া হিসাবেই দেখছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্ধপ্রদেশে ১৩ ঘন্টায় ৩৬ হাজার ৭৪৯ টি বজ্রপাতের রেকর্ডের তথ্য জানিয়ে অন্ধপ্রদেশের দূর্যোগ প্রসমন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী ২০১০ থেকে এ পর্যন্ত বজ্রপাতের সংখ্যা ও প্রাণ হানির হিসাবে সুনামগঞ্জ জেলায় সর্বোচ্চ বজ্রপাত হয়েছে। গত ১৬ বছরে মোট বজ্রপাতে চার দশমিক ৮২ শতাংশ ঘটেছে এই জেলায়। এরপর সিলেটে চার দশমিক ৩৬ শতাংশ, রাঙ্গামাটিতে তিন দশমিক ৬০ শতাংশ, নেত্রকণায় তিন দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং দিনাজপুরে দুই দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর সব থেকে কম আক্রান্ত ৫টি জেলা হচ্ছে, বরগুনা শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ, মেহেরপুর শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ, ঝালোকাঠি শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ, জয়পুর হাট শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ ও চুয়াডাঙ্গা শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, বজ্রপাত কখন কোথায় পড়বে এর কোন নিশ্চয়তা নেই। দূর্যোগ প্রবণ বাংলাদেশের ৬৪ জেলাতেই বজ্রঝুকিতে রয়েছে।
বজ্রপাত আকস্মিক প্রাকৃতিক দূর্যোগ। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও অভিমত হলো, খোলামাঠ, রাস্তার পাশে এমনকি বিল, হাওড়-বাওড় ও বিস্তির্ণ ফসলের মাঠে উঁচু তালগাছ লাগাতে হবে। তাল, নারকেল, সুপারি প্রভৃতি উঁচু গাছ লাগানো যেতে পারে। এর মধ্যে বজ্রপাত নিরোধ হিসাবে তালগাছ উল্লেখ যোগ্য। এ গাছই বজ্রপাত শোষক হিসাবে কাজ করবে। গ্রাম অঞ্চলে মাঠে কৃষক ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষ আকস্মিক দূর্যোগ বজ্রপাত থেকে রেহায় পাবে। আগে উঁচু বিল্ডিং গুলোতে বজ্রপাত শোষক ‘থান্ডার এরেস্টার’ লাগানো হতো। এখন শহর ও গ্রাম অঞ্চলের উঁচু বিল্ডিং বানানোর সময় আগেই থান্ডার এরেস্টার লাগানোর পরিকল্পনা রাখতে হবে। তবে বজ্রপাত থেকে কিছুটা হলেও নিরাপদ থাকবে।
কাল বৈশাখী মৌসুমে ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাতের ঘটনা স্বাভাবিক। ঘনকাল মেঘের চারিপাশ ধারায় নামা বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত জনমনে উদ্বেকও তৈরি করে। বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধির কারণে বজ্রপাত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেঘলা আকাশ আর বিদ্যুৎ চমকানো থেকে বজ্রপাত ঘটতে থাকে। সব বজ্রপাত প্রকৃতির বুকে আঘাত হানে না। অধিকাংশ মহাকাশে বিলিন হয়ে যায়। আর কিছু কিছু বজ্রপাত প্রকৃতিক বুকে আঘাত হানে। বজ্রপাত যেহেতু উঁচু জায়গা আঘাত হানে, সে জন্য খোলামাঠ বা বসতবাড়ীর পাশে উঁচু গাছ হিসাবে তালগাছ বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে সবথেকে কার্যকর। যেহেতু উঁচু স্থানে বজ্রপাত হয় সে কারণে তালগাছ কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ বজ্রপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ ভীত হয়ে পড়েছে। বজ্রপাত নিরোধে তালগাছ অনেকটাই কার্যকর। তাই স্থানীয় এই জ্ঞানকে কাজে লাগানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশে তালগাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রালয় থেকে জানাযায়, এ পর্যন্ত প্রায় ৩১ লাখ ৬৪ হাজার তালবীজ রোপন করা হয়েছে। মোবাইল টাওয়ার গুলোতে আর্থিং এর ব্যবস্থা সংযুক্ত করে বজ্র নিরোধক দণ্ড হিসাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বজ্রপাত মোকাবেলায় দালান কোঠায় বজ্র নিরোধক দণ্ড লাগানো বাধ্যতামূলক করতে গণপূর্ত মন্ত্রাণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানোর জন্য দেশবাসীকে আগাম শতর্ক বার্তা দিতে দেশের ৮টি স্থানে পরীক্ষামূলক ভাবে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র বা লাইটিং ডিটেকটিভ সেন্সর স্থাপন করেছে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রাণালয়। ২০ কোটি টাকা খরচে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, পঞ্চগড়, নওগাঁ, খুলনা এবং পটুয়াখালীতে সেন্সর বসানো হয়েছে। সরকারের এতো সব উদ্যোগের পাশাপাশি এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে তালবীজ রোপনের পাশাপাশি জন সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তা হলে আকস্মিক প্রাকৃতিক দূর্যোগ বজ্রপাত থেকে মৃত্যু হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে এবং মানুষ ও গবাদিপশু সুরক্ষায় থাকবে।

লেখক ঃ সাংবাদিক





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)