শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
রবিবার ● ১২ আগস্ট ২০১৮
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » হাতি বনের প্রতিবেশ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » হাতি বনের প্রতিবেশ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
১২০৩ বার পঠিত
রবিবার ● ১২ আগস্ট ২০১৮
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

হাতি বনের প্রতিবেশ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

---
প্রকাশ ঘোষ বিধান।
পৃথিবীর স্থলপ্রাণীদের মধ্যে সর্ববৃহৎ প্রাণী হাতি। শুঁড়কে হাতের মত ব্যবহার করতে পারার জন্য এর নাম হাতি। হাতি দলবদ্ধ জন্তু। তবে ক্রমাগত আবসস্থল ধ্বংস, খাদ্যাভাব এবং মানুষের সাথে দ্বন্ধে দিন দিন হাতির সংখ্যা কমছে। প্রকৃতির বড় বন্ধু হাতি হুমকির মুখে। প্রকৃতির এ বন্ধুকে সঙ্কটাপন্ন প্রাণী হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। সারা বিশ্বে এশিয়ান হাতির সংখ্যা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার দাবি করা হলেও বাংলাদেশে এ সংখ্যা ২শত এর বেশি হবে না আর সারা বিশ্বে ৪ লাখের মত আফ্রিকান হাতি টিকে আছে। হাতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানুষের হানা ও প্রকৃতিতে খাদ্য সংকটের কারণে হাতির সংখ্যা দিন দিন কমছে।
১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবস। হাতি সংরক্ষণের জন্য জনসচেতনতা তৈরি করতে প্রতি বছর ১২ আগস্ট পালন করা হয় বিশ্ব হাতি দিবস। বাংলাদেশের বন বিভাগ সহ বিভিন্ন সংগঠন দিবসটি পালন করে থাকে। এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য জনসচেতনতা তৈরি করা। পৃথিবীতে দুই প্রজাতির হাতি আছে। এশিয়ান হাতি ও আফ্রিকান হাতি। যদিও শারিরীকভাবে দেখতে প্রায় একই রকম, তবুও এদের মধ্যে জৈবিক পার্থক্য রয়েছে। এশিয়ান হাতি সাধারণত লম্বায় ৬ থেকে ১১ ফুট হয়ে থাকে আর আফ্রিকান হাতির ৬ থেকে ১৩ ফুট। এশিয়ান হাতির ওজন ২ থেকে ৫ টন আর আফ্রিকান হাতির ওজন ২ থেকে ৭ টন। এশিয়ান হাতির কান ছোট আর আফ্রিকান হাতির কান বড়। এশিয়ান হাতির বুকের হাড় ২০ জোড়া আর আফ্রিকান হাতির বুকের হাড় ২১ জোড়া। আফ্রিকান হাতির স্ত্রী-পুরুষ উভয় হাতির প্রলম্বিত দাঁত আছে আর এশিয়ান হাতির ক্ষেত্রে শুধু পুরুষের দাঁত আছে। হাতি প্রায় ৬০ থেকে ৮০ বছর বাঁচে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী হাতি। ইংরেজি এলিফ্যান্ট শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ এলিফাস থেকে যার অর্থ আইভরি বা গজদন্ত। হাতি অনেক বুদ্ধিমান প্রাণী। মহিলা হাতি পরিবারের নেতৃত্বদেয়। একটি মহিলা হাতির নেতৃত্বে ১০-২৫টি হাতি একটি পরিবারের মত এক সঙ্গে বাস করে। একে পশুপাল বা হার্ড বলে। পুরুষ হাতি ৮-১৫ বছর বয়সের মধ্যে নিজ পরিবার ত্যাগ করে সঙ্গীর সন্ধানে অন্য ছোট পরিবারের সাথে থাকতে শুরু করে। হাতির অনেক ঘুমের প্রয়োজন হয় না। ৪ ঘন্টা ঘুমালেই হয়। তারা বেশিরভাগ দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে ঘুমায়। গভীর ঘুমের জন্য হাতি একপাশে ফিরে শোয় এবং জোরে জোরে নাক ডাকে। জীব জন্তুর মধ্যে হাতি পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। হাতির গর্ভকাল সবচেয়ে দীর্ঘ হয়। যা প্রায় ২২ মাস। হাতির বাচ্চার ওজন হয় ২৬০ পাউণ্ড। হাতির বাচ্চা জন্মের কিছুক্ষণ পরই দাঁড়াতে পারে। সাধারণত একটি হাতি ৬০-৮০ বছর বাঁচে। হাতির গজদন্ত জীবনভর বৃদ্ধি পায়। পূর্ণ বয়স্ত পুরুষ হাতির গজদন্ত বছরে ৭ ইঞ্চি বৃদ্ধি পায়। হতে এশিয়ান মহিলা হাতির গজদন্ত থাকে না। হাতির শুড় অনেক শক্তিশালী হয়। যা দিয়ে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পারে। পানি পান করা ও গোসলের জন্য হাতির শুড় ব্যবহার করে। শুড় দিয়ে হাতি ১৪ লিটার পানি শোষন করতে পারে। হাতির প্রিয় খাদ্য বাঁশপাতা, কলাগাছ ও লতাপাতা। প্রতিদিন একটি হাতির সর্বনিুে ১শ কেজি খাদ্য ও ১২০ লিটার পানি প্রয়োজন হয়। মানুষের মত হাতিও সানক্রিম এর প্রয়োজন হয়। তাই তারা শরীরে পানি, বালি ও মাটি ছিটিয়ে দেয়। হাতির বড় কান দুটি তাপ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাতির জীবনদশায় ৬ বার কষদাঁত বের হয়। আবার চিবিয়ে চিবিয়ে ক্ষয়ে যায়, কষদাঁতের শেষ সেট ৬ষ্ঠদশকে গজায়। যা ক্ষয়ে যাওয়ার পর খাদ্য গ্রহণ করতে না পারায় অনাহারে মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশের স্থায়ী বন্য হাতির আবাসস্থল হচ্ছে- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের চন্দনাইনা, বাঁশখালী, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়া। কক্সবাজারের কাসিয়াখালি, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ। বান্দরবনের লামা ও আলিকদম। রাঙ্গামাটির কাউখালি, কাপ্তাই ও লংদু এবং খাড়গাছড়িসহ দেশের ১১টি বন বিভাগে এদের বিচারণ করতে দেখা যায়। ড. রেজা খানের জরিপ অনুযায়ী ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে ৩৮০টি বন্য হাতি ছিল। ২০০০ সালে ওয়ার্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের গবেষণা অনুযায়ী ২৩৯টি। সর্বশেষ ২০০৪ সালে আইইউসিএন এর জরিপে পাওয়া যায় ২২৭টি হাতি। উল্লেখিত পরিসংখ্যান থেকে বোঝাযায় বাংলাদেশে হাতি সংখ্যা দিন দিন কমছে। আর বাংলাদেশে অভিবাসি হাতির সংখ্যা ৮৪ থেকে ১০০টি।
এক সময় বাংলাদেশের বড় বড় বনে বুনো হাতির অবাধ বিচরণ ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের বনভূমিতে স্বল্প সংখ্যক হাতি টিকে আছে। তবে আবাসস্থল ধ্বংস, খাদ্যাভাব এবং মানুষের সঙ্গে দ্বন্দের কারণে এরা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বনের প্রতিবেশ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ঐতিহ্যবাহী এই প্রাণীটি এখন মহাবিপন্ন। ৯টি কারণে বাংলাদেশে হাতি কমছে। আইইউসিএনের গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখিত কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বনাঞ্চল নিচিহ্ন হয়ে যাওয়া, খাদ্যা সংকট, চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া, যত্রতত্র জনবসতি গড়ে ওঠা এবং চোরাশিকারী নিষ্ঠুরতা সহ আরো কয়েকটি কারণ রয়েছে। বাংলাদেশ, চিন, ভারত, ভূটান, ও ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান হাতির দেখা মেলে। বর্তমানে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার এশিয়ান হাতি এবং ৩৫ থেকে ৪০ লাখ আফ্রিকান হাতি রয়েছে। কিন্তু ১শত বছর আগে আফ্রিকান হাতির মোট সংখ্যা ছিল এক কোটির উপরে। গত ১০ বছরে ৬২ ভাগ হাতি কমেছে। বন উজাড় ও হাতির দাঁতের জন্য শিকারীদের হাতে নিহত হওয়ায় হাতি কমার অন্যতম কারণ। ২০০১ থেকে ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু বাংলাদেশ বান্দরবন, কক্সবাজার জেলার ৬টি উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে দাঁত ও হাড়গড়ের জন্য ১৫২টি হাতি হত্যা করা হয়।
মানুষ নানা কারণে বনজঙ্গল উজাড় করছে। আবাদি জমি বাড়াতে বন ধ্বংস করা হচ্ছে। মানুষ জীবন জীবিকার জন্য বনের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়াতে বন্য প্রাণীর উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংকটের কারণে এরা অনেক ক্ষেত্রে লোকালয়ে ঢুকছে। তারা খাবারের জন্য ফসলের মাঠ ও মজুদ করা খাদ্য শষ্যের জন্য বাড়ি-ঘরে হানা দিচ্ছে। এরফলে মানুষের সাথে হাতির সংঘর্ষ বাড়ছে। তাছাড়া হাতির চলাচলের পথ রুদ্ধ হওয়া এবং আবাসস্থল কৃষি কাজে বেদখল হওয়ার কারণে মানুষ হাতির বিরোধ সংঘটিত হচ্ছে। তবে মানুষ ও হাতির মধ্য চলামান বিরোধ নিরসনে হাতির আবাসস্থল বন-জঙ্গল উজাড় করা বন্ধ করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য হাতিকে ফরেস্ট ইঞ্জিনিয়ার বলা হয়। তাই হাতিকে বনের ইণ্ডিকেটর স্পেসিসও বলা হয়। বনে হাতির আবাসস্থলে নিরুপদ্রব বিচারণ এবং খাদ্য সংকট নিরসন করতে পারলে হাতির সুরক্ষা অনেকাংশে সম্ভব হবে। এছাড়াও জনসচেতনতা রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। হাতি সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এ দিবসটি পালন সার্থক হবে।

লেখক ঃ সাংবাদিক।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)