শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
সোমবার ● ২ মে ২০১৬
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » মহান মে দিবসের ভাবনা
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » মহান মে দিবসের ভাবনা
১২৮৭ বার পঠিত
সোমবার ● ২ মে ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মহান মে দিবসের ভাবনা

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান

১ মে বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম আর সংহতির দিন। আÍর্জাতিক অঙ্গনে শ্রমিকের শ্রমের মর্যদা ও অধিকার বাস্তবায়নের দাবীতে চেতনা জাগ্রত হয়ে ওঠে। মেহনতী মানুষের ঘামে, রক্তে ও শ্রমের অধিকারের বৈপ্লবিক অনুভব সঞ্চারিত হয়। মে দিবসে লাল পতাকার বিশাল বিশাল মিছিল। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত রাজপথ। দুনীয়ার মজদূর এক হও। শ্রমিকের মর্যদা সংগ্রাম আর সংহতির দিন হিসাবে ১ লা মে আত্মর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হয়।

শ্রমকে ভিত্তি করে সভ্যতার সূচনা হলেও শুরু থেকে শ্রমিকের মর্যদা বলে কিছুই ছিল না। শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের অবস্থা ছিল খুব নাজুক। শ্রমিকদের নাম মাত্র মুজুরি দিয়ে মালিকরা ইচ্ছামত কাজ করাতো। তাদের কাজের কোন নির্দিষ্ট কর্ম ঘন্টা ছিল না। এর প্রতিবাদ করলে মালিকরা চালাতো নির্যাতন। শ্রমিকদের ১৮ থেকে ২০ ঘন্টা কাজে লাগিয়ে মালিকরা টাকার পাহাড় গড়ে তোলে। এ সময়  শ্রমিকরা সংগঠিত ছিল না। বিচ্ছিন্ন ভাবে আন্দোলন করে তারা ক্ষতি ও নির্যাতনের শিকার হতো। ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আমেরিকায় শিল্প কারখানা গড়ে ওঠায় নব্য পুজিপতির উদ্ভব ঘটে। ক্রমন্বয়ে তাদের ভয়ঙ্কর চেহেরা উন্মেচিত হয়। এর বিরুদ্ধে শ্রমিকদের আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। আমেরিকার শহরে সর্বস্তরের শ্রমিকরা সংঘ বদ্ধ হতে থাকে। আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক সমিতি ও ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তুলতে লাগল। শ্রমের নায্য মুজুরী ও ৮ ঘন্টা কর্ম সময়ের দাবীতে আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। ১৮৮৪ সালে আমেরিকার লেবার ফেডারশেন ৮ ঘন্টা কাজের দাবীকে জোরদার করে তোলে। মালিকরা দাবী না মানলে অনির্দিষ্টকাল ধর্মঘট পালনের ঘোষনা দেওয়া হয়। ১৮৮৬ সালে ১লা মে ধর্মঘট পালনের তারিখ নির্ধারিত হয়। সকল শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘট পালনের একাত্মতা ঘোষনা করে। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের আন্দোল নস্যাৎ করতে  অত্যাচার, হত্যা, গুম করার পথ বেছে নেয়। ১লা মে ধর্মঘটের দিনের পূর্বে ৭ এপ্রিল মিসিসিপির এক কারখানা ৮ শ্রমিককে হত্যা করে লাশ মিসিসিপি নদীর তীরে ফেলে রাখে। এতে আন্দোলন জলে ওঠে। ১৮৮৬ সালে ১লা মে আন্দোলন চরম অবস্থায় পৌছায়। আমেরিকার শিকাগো শহরে হে মার্কেটের জুতার কারখানার শ্রমিকগণ রাস্তায় নেমে ধর্মঘটে একাত্মতা ঘোষনা করে। মালিকদের পোষা গোন্ডাদের দিয়ে ধর্মঘটি শ্রমিকদের উপর আক্রমন চালাতে থাকে। আন্দোলন প্রতিহত করতে ৩ মে হে মার্কেটে আহত ধর্মঘটি শ্রমিক সমাবেশে লেলিয়ে দেওয়া পুলিশের গুলিতে ৬ শ্রমিক নিহত হয়। এর প্রতিবাদে ৪ মে হাজার হাজার শ্রমিক বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ৪ মে প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশ আবারো গুলি চালায়। এতে ৫ শ্রমিক নিহত হয়। সমাবেশে শ্রমিক নেতা পার্সন্স ও ন্সাইজ বক্তৃতা করেন। প্রতিবাদ সমাবেশ চলাকালে প্রবল বৃষ্টির কারনে সভাস্থল থেকে লোকসমাগম কমতে থাকে। এ সুযোগে কুখ্যাত এক পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বে ১৮০ জনের পুলিশ বাহীনি সভাস্থলে পৌছায়। পুলিশের প্রতি বোমা হামলার অভিযোগ এনে পুলিশ সমাবেশে ০গুলি চালায়। এতে৫ জন নিহত ও শত শত লোক আহত হয়। পুলিশ শ্রমিকদের গ্রেফতার ও দমন পীড়ন নির্যাতন শুরু করে। আন্দোলন গড়ে তোলার অপরাধে ৮ শ্রমিকের বিচার করা হয় এবং কয়েক জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ৮ শ্রমিক নেতা হলেন এ্যালবাট পার্সস, আগাস্টাস স্পাইজ, স্যামুয়েল ফিভেন, মাইকল শোয়াব, জর্জ এঞ্জেল, লুই লিঙ্গ, অ্যাডাল ফিফার ও ওস্কার নিব। বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যমে পার্সন্স, স্পাইজ, জর্জ এঞ্জেল ও ফিফারের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ফাঁসির আগের রাতে লুই লিঙ্গ আত্মহত্যা করে। ১৮৯৩ সালের ২৬ জুন ইলিনবের গভর্নর অভিযুক্ত ৮ শ্রমিক নেতাকে নির্দোষ বলে ঘোষনা দেন এবং পুলিশ অফিসারকে দোষী সাবস্থ করেন। এভাবে প্রানের বিনিমিয়ে শ্রমিক শ্রেণী দৈনিক ৮ ঘন্টা শ্রমের অধিকার আদায়  করে।

১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারীসে দ্বিতীয় আÍর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেল্ন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রতিবছর ১লা মে আÍর্জাতিক শ্রমিক ঐক্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । আজ সারা বিশ্বে মে দিবস পালতি হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশে সরকারীভাবে দিবস টি পালন হচ্ছে। শ্রমিকের নির্দিষ্ট শ্রম ঘন্টা, নুন্যতম মুজুরী, বেতন বৈষম্য দুর করার দাবীতে আন্দোলন চলছে। এখন উন্নত দেশে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা, সম্মান জনক হলেও উন্নয়নশীল দেশের শ্রমিকদের ভাগ্য বদল হয়নি। বাংলাদেশ জেনেভা কনভেশনে স্বাক্ষর করে শ্রমজীবীদের অধিকারের স্বকৃতি দিয়েছে। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। আÍর্জাতিক ও সাংবিধানিক আইন আমান্য করে শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। ৭৫ ভ্গা নারী শ্রমিক দেশে তৈরী পোশাষ শিল্পে কাজ করছে। তারা বেতন বৈষম্য সহ নানা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কারখানায়  দুর্ঘটনার শিকার হয়ে শ্রমিকরা আহত ও প্রাণ হারাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তাদের সম্মানজনক ক্ষতি পূরন দেওয়া হয় না। শ্রমিক শ্রেনীর স্বার্থ রক্ষায় আইন আছে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। মে দিবসে অনুষ্ঠানে নেতাদের বক্তৃতায় প্রতিশ্রুতি শোনা যায়। আজ মে দিবসে কোথাও শ্রমিক শ্রেনী আন্দোলন সংগ্রামের হাতিয়ার হিসাবে, আবার কোথাও আনন্দ উল্লাসে দিবসটি পালিত হচ্ছে। শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি কোন পক্ষই আত্মরিক না। এ কারনে শ্রমিকদের ভাগ্য বদল হয় না। মহান মে দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক শ্রজীবী মানুষের অধিকার সমতার ভিত্তিতে এনে মানবতার ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করা। সরকার ও সংশিষ্টদের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার সমন্নত রাখতে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ও শ্রমজীবীদের সম্মান জনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার জন্য চাই ঐক্য। জয় হোক মেহনতি মানুষের, মানবতার জয় হোক।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)