শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

SW News24
মঙ্গলবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » মুক্তমত » নদী আমাদের জাতীয় সম্পদ
প্রথম পাতা » মুক্তমত » নদী আমাদের জাতীয় সম্পদ
৩৭৭ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

নদী আমাদের জাতীয় সম্পদ

 ---

প্রকাশ ঘোষ বিধান

বাংলার অপরূপ প্রকৃতি আর উর্বর ভূমি অজস্র নদীরই দান। সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যে খ্যাতি তার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান নদীর। বাংলাদেশকে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বদ্বীপ সমভূমি বলা হয়ে থাকে। আর এইসব নদী-বিধৌত পলি, বালি, কাঁকর প্রভৃতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে বাংলা অববাহিকা। এই বদ্বীপ নদী দ্বারাই সৃষ্ট। এ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে  ছোট-বড় অসংখ্য নদ-নদী। বাড়িয়ে দিয়েছে দেশের সৌন্দর্য। নদীর জল একদিকে বাংলার মাটিকে সরস ও উর্বর করেছে, সেই সাথে মাটির নিচের জলাধার রেখে ভরপুর করে। বৃষ্টি আর নদীর জলেই বাংলার প্রকৃতি এতো সবুজ এতো সজীব। নদীর জল থেকেই বিশেষ প্রক্রিয়ায় পানীয় জল তৈরি করা হয়। নদীর দুরন্ত গতিপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ। যা ছাড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবন অচল। চাষাবাদের জলেরও অনেকটাই আমরা পাই নদী থেকে। এ দেশের মৎস সম্পদের অন্যতম প্রধান উৎসও নদী।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আমাদের দেশে নদী ও মানুষের জীবন অবিচ্ছেদ্য। সে কারণেই আমাদের মৃতপ্রায় নদী নিয়ে পরিবেশবাদীসহ সাধারণ মানুষের উদ্বেগ লক্ষ্য করা যায়। যদিও নদী রক্ষার তৎপরতা পৃথিবীজুড়েই দেখা যায়। নদী সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার পালন করা হচ্ছে বিশ্ব নদী দিবস।

১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে বিশ্ব নদী দিবস হিসেবে পালন করতে শুরু করে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল বিসি রিভারস ডে পালন দিয়ে। ১৯৮০ সালে কানাডার খ্যাতনামা নদীবিষয়ক আইনজীবী মার্ক অ্যাঞ্জেলো দিনটি নদী দিবস হিসেবে পালনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বিসি রিভারস ডে পালনের সাফল্যের হাত ধরেই তা আন্তর্জাতিক রূপ পায়। ২০০৫ সালে জাতিসংঘ নদী রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরি করতে ‘জীবনের জন্য জল দশক’ ঘোষণা করে। সে সময়ই জাতিসংঘ দিবসটি অনুসমর্থন করে। এর পর থেকেই জাতিসংঘের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা দিবসটি পালন করছে, যা দিনদিন বিস্তৃত হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে এ দিবস পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে জাতীয় নদীরক্ষা কমিটি, বিভিন্ন পরিবশেবাদী সংগঠনগুলো।

আবহমানকাল ধরে নদীমাতৃক বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা আবর্তিত হচ্ছে এসকল নদীর পানিকে ঘিরে। প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষ নদ নদীর তীরবর্তী সমতলভূমিতে বসবাস শুরু করে। নদীকে ঘিরেই বিশ্বের প্রতিটি শহর, বন্দর, গঞ্জ, বাজার প্রভৃতি গড়ে উঠেছে। নদ-নদীই মানুষের খাদ্য ও রোজগার এর প্রধান উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করে। মালামাল পরিবহন ও যোগাযোগের সহজ উপায় হলো নৌকা। মালামাল পরিবহনে খুবই স্বল্প খরচে নৌকার জুড়ি মেলা ভার। কিছুকাল আগ পর্যন্ত নদীই ছিল দেশবাসীর যোগাযোগের প্রধান পথ। নদীই ছিল ছোট্ট এই দেশটির বিচ্ছিন্নতা ও যোগাযোগের উপায়। ধীরে ধীরে প্রধান নদীগুলোর ওপর সেতু তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়ে উঠছে। নিঃসন্দেহে যোগাযোগের সহজলভ্যতাই মানুষের উন্নয়নের পথ খুলে দেয়।

বাংলাদেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, মানুষের জীবনাচরণ বেশিরভাগই গড়ে উঠেছে নদীগুলোকে কেন্দ্র করে। নদীর ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে  সভ্যতা। দেশের মানুষের খাদ্য, পোশাক সর্বোপরি সংস্কৃতি নদীকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে। বাংলা সাহিত্যে গল্প-উপন্যাস, কবিতা আর গানে এক বড় অংশ জুড়ে রয়েছে নদী। বাংলা সাহিত্যে নদী গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ও সঙ্গীত জগতে নদী গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে ঠাঁই পেয়েছে। বাঙালির জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে এ দেশের নদ-নদী। বাঙালির জীবন-যাত্রায় আর সংস্কৃতিতে এইসব নদ-নদীর প্রভাব অপরিসীম।

বাংলাদেশ একটি নদী-নির্ভর দেশ। বাংলাদেশে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সাঙ্গু, কর্ণফুলী, মাতামুহুরী, কপোতাক্ষ, ধলেশ্বরী এবং এদের উপনদী ও শাখানদীগুলো জালের মতো বিস্তৃত রয়েছে সারা বাংলাদেশ জুড়ে। তাই এ দেশকে বলা হয় নদী- মাতৃক দেশ। শত-সহস্র নদী-নালা, খাল-বিল জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গোটা দেশে। বাংলাদেশ রয়েছে অসংখ্য নদনদী।  হাজার নদীর দেশ বলা হয়  বাংলাদেশকে। তবে বাংলাদেশে ঠিক কত নদী আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান বাংলাদেশ নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে নেই। কোন নদী কোথা থেকে উৎপত্তি হয়ে কোথায় শেষ হয়েছে কিংবা একটি নদী আরেকটি নদীকে কোথায় অতিক্রম করেছে এসব যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ এখনো মানুষের অজানা। দক্ষিণ এশিয়ায় অন্তর্গত বাংলাদেশ  একটি নদীমাতৃক দেশ। শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৭০০ টি নদ-নদী বিপুল জলরাশি নিয়ে ২২,১৫৫ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৩ সালে বাংলাদেশের নদ-নদীর সংখ্যা ছিল ৩১০টি । বর্তমানে বাংলাদেশের নদীর সংখ্যা প্রায় ৭০০ টি এ নদ-নদীগুলোর উপনদী ও শাখানদী রয়েছে। উপনদী শাখানদীসহ বাংলাদেশের নদীর মোট দৈর্ঘ্য হলো প্রায় ২২,১৫৫ কিলোমিটার ।

বাংলাদেশ হিমালয় থেকে উৎসরিত ৩টি বৃহৎ নদীঃ গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার পলল দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। এটি পৃথিবীর একটি অন্যতম বৃহৎ বদ্বীপ। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রায় ৪০৫টি নদী প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদীগুলোর মধ্যে ৫৭টি হচ্ছে আন্তঃসীমান্ত নদী যার মধ্যে ৫৪টি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন এবং ৩টি বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে অভিন্ন।

বাংলাদেশের নদীর সংখ্যা কত এইটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আমাদের সমাজে ও বিসিএস ভিত্তিক বইগুলোতে ৭০০ বা ২৩০ টি এই তথ্য প্রচলিত রয়েছে। তবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর গবেষণা মতে বাংলাদেশের নদীর সংখ্যা ৪০৫ টি । বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড  বা পাউবো বাংলাদেশের নদীগুলোকে সংখ্যাবদ্ধ করেছে এবং প্রতিটি নদীর একটি পরিচিতি নম্বর দিয়েছে। পাউবো কর্তৃক নির্ধারিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী ১০২টি , উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী ১১৫টি, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী ৮৭টি, উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী ৬১টি, পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী ১৬টি এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী ২৪টি। আবার বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ১২০০ এর অধিক নদ নদী ও উপনদী রয়েছে। ইতিহাসের নানা তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯ শতকের দিকে গোটা অঞ্চলে ছোট বড় নানা ধরনের নদীর সংখ্যা ছিল সাড়ে চার হাজার নদী ছিল্ ।  পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে বর্তমানে নদীর সংখ্যা চারশ ৫টি। বেসরকারি হিসেবে তা ৭ শত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নদী শুমারিই হয়নি। তাই দেশের প্রকৃত নদীর সংখ্যা কত তা আসলে বলা মুশকিল। নদী শুমারি ও নদীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করলেই কেবল দেশের নদ-নদীর সঠিক হিসেব বের করা আনা সম্ভব।

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের সৌন্দর্যবর্ধনে নদনদীগুলো ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। নদনদীগুলো হচ্ছে জাতীয় ও প্রাকৃতিক সম্পদ। পৃথিবীতে যতগুলো নদনদী, সাগর, মহাসাগর রয়েছে সেগুলো প্রতিটি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাচীনকালে ব্যবসা বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কর্মপরিচালনায় নদীগুলো মহান ভূমিকা পালন করেছে। দেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানি করার ক্ষেত্রে নৌপথ ব্যবহার করা হতো। তাছাড়া নদীর পানি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হতো এবং নদীতে প্রচুর মৎস্য শিকার করা হতো। আর সেগুলো আমাদের খাদ্যের অভাব পূরণে সহায়ক হিসেবে কাজ করে কিন্তু অতি দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের নদীগুলো তাদের সৌন্দর্যরূপ হারিয়ে ফেলেছে। আয়তন সংকীর্ণ হচ্ছে। নদীর তীরবর্তী স্থানে অবৈধভাবে দালানকোঠা স্থাপিত হচ্ছে। নদীতে বালি উত্তোলন করা, অতিরিক্ত খনন করে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি, শিল্প কলকারখানার নোংরা ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলা, প্লাস্টিক পণ্য নদীতে ফেলা, নদীতে মাটি দিয়ে ভরাট করে সেখানে অবৈধভাবে ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে করে নদীগুলোর সৌন্দর্য বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলা যায়। সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে নদীপথ আর যাতায়াতের ক্ষেত্রে  প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ নদ-নদী দখল-দূষণে ধুঁকছে। নদ-নদী আজ অস্তিত্ব সংকটে। গত ৫০ বছরে দেশের নদ-নদীর সংখ্যা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় থাকা মোট ৩৮৩টি নদীর অনেকগুলোর অবস্থাও সংকটাপন্ন।

নদী এই দেশে জালের মতো ছড়ানো, এই নদীকে কেন্দ্র করেই মানুষের জীবন গড়ে উঠেছে৷ নদীতীরে গড়ে উঠেছে বড় বড় নগর ও বন্দর।  নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা, প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁওসহ সকল শহর-নগর৷ বাংলাদেশের নদী-তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য শহর, বন্দর ও বাণিজ্য স্থানের মধ্যে রয়েছে বাহাদুরাবাদ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, গোয়ালন্দ, সিলেট, ভৈরব, চাঁদপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, পাবনা, কুষ্টিয়া, খুলনা, মংলা, চট্টগ্রাম, চন্দ্রঘোনা, কাপ্তাই, লামা প্রভৃতি।  যাতায়াত মানেই ছিল নদীপথে যাতায়াত৷ সওদাগরী নৌকা পাল তুলে ছুটে যেতো দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে৷ বাংলাদেশে এখনো শিল্প কারখানা স্থাপনেও গুরুত্ব দেওয়া হয় নদীপথের যোগাযোগকে৷ মালামাল পরিবহণে নদীকে ব্যবহার করা গেলে খরচ কম পড়ে৷ বিশ্ব বাজারে টিকে থাকতে মালামাল বহনে নদী গুরুত্বপূণ ভূমিকা বহন করে।

পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ বাংলাদেশ।দেশের  অধিকাংশ ভূমি গঠিতই হয়েছে পলি মাটি দিয়ে৷নদী ভূমি গঠনের এই পলি বহন করে এনেছে, এখনো আনছে৷ যে নদীর পলিতে বাংলাদেশের জন্ম, সেই নদীকেই ঘিরেই বাংলাদেশ বেঁচে আছে৷ এই ভূমি গঠনের হাজার হাজার বছর পর এখনো সেই নদী মানুষের জীবনে নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রধানতম ভূমিকা রেখে চলেছে৷এক সময় বাংলাদেশের শস্যভাণ্ডার ছিল দক্ষিণাঞ্চল৷ বিশেষ করে বরিশাল অঞ্চল৷ বরিশালকে বলা হতো, ধান-নদী-খাল, এই তিনে বরিশাল৷ প্রবাদটি প্রচলিত ছিল সারা দেশজুড়েই৷

আদিকাল থেকেই বাংলাদেশের মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি৷ সেখানেও মূল ভূমিকায় নদী৷ সাম্প্রতিক সময়ে এই কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি যোগ হয়েছে৷ ব্যবস্থা হয়েছে আধুনিক সেচের৷ এজন্য বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে৷ এর সবগুলোই নদীকে কেন্দ্র করে৷ অসংখ্য মানুষের জীবিকা উপার্জনের মাধ্যম এই নদীগুলো। নদী ধ্বংস হয়ে গেলে এসব মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। দূষণ ও ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনের পাশাপাশি অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, নগরায়ন, আবাসন এবং সেতু, কালভার্ট ও স্লুইসগেট নির্মাণের ফলে ছোটবড় আরও অনেক নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে।

নদী রক্ষার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। নদী বাঁচলে আমরা বাঁচবো।তাই নদী দখল করে দালানকোঠা স্থাপন করলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নদীতে বালি উত্তোলন করা বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে, অতিরিক্ত খনন করে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি করা বন্ধ করতে হবে, শিল্প কলকারখানার নোংরা ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলা যাবে না, প্লাস্টিক পণ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করতে হবে, নদী ভরাট করে সেখানে অবৈধভাবে ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রয়োজন ড্রেজিং করে নদীর গভীরতা বাড়ানো এবং নদীতীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি করতে হবে। নদী দখল ও দূষণ রোধ করতে হবে।

বাংলাদেশের শহরের কোলঘেঁষা বেশ কিছু নদী বর্তমানে মারাত্মক দূষণের শিকার। শহরের ময়লা আবর্জনা, শিল্পবর্জ্য, বসতবাড়ির আবর্জনা ইত্যাদি প্রতিনিয়ত নদীগুলোকে বিষাক্ত বর্জ্যের বহমান আধারে পরিণত করে চলেছে। তার ওপর রয়েছে নদীতীরে অবৈধ স্থাপনা। এতে নদীগুলো ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে, পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এবং বিপন্ন হতে চলেছে নদীর মাছ ও অন্যান্য জলজ সম্পদ। সর্বোপরি নদী নিজস্ব নাব্যতা হারাচ্ছে। এ ধরনের দূষণ প্রতিরোধে প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং জনসচেতনতা।

বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো স্নেহময়ী মায়ের মতোই। নদীর অকৃত্রিম ভালোবাসার দানে এ দেশ পরিপূর্ণ। মাছে-ভাতে বাঙালি বলে যে কথাটি রয়েছে তাও এই নদীর দান। তাই এইসব নদীর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। কেননা নদী বিপর্যস্ত হলে বাংলার প্রকৃতিও বিপর্যস্ত হবে। আর এই নিষ্ঠুর প্রভাব পড়বে এ দেশের মানুষের ওপর। তাছাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবর্ধনে আমাদের নদী রক্ষার শপথ নিতে হবে। নদী আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাই নদী রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের নিজেদেরই নিতে হবে। নদী বেঁচে থাকুক যুগ যুগ ধরে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)