শিরোনাম:
পাইকগাছা, সোমবার, ২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

SW News24
শনিবার ● ৩১ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » ছোট ছোট কাজ পরিবেশে রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে
প্রথম পাতা » মুক্তমত » ছোট ছোট কাজ পরিবেশে রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে
৫৬ বার পঠিত
শনিবার ● ৩১ মে ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ছোট ছোট কাজ পরিবেশে রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে

--- প্রকাশ ঘোষ বিধান

পৃথিবীর বুকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রকৃতির কোলে কাটিয়ে দেয় মানুষসহ সমস্ত জীবসমাজ। পৃথিবীর বুকে যা আছে সব কিছূ এই প্রকৃতি পরম স্নেহে লালন-পালন করছে সন্তান স্বরুপ। প্রকৃতি যা দেয় তার কিছুই হয়তো ফেরত দেওয়া হয় না বরং মানুষের অত্যাচারে প্রকৃতির সৌন্দর্য হারাচ্ছে।

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পৃথিবীকে সুন্দর রাখতে ও সুস্থ পরিবেশে বাস করার জন্য প্রকৃতিকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার অঙ্গীকার করার মাধ্যমে পালন করা হয়  বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ১৯৭২ সালের ৫ জুন, সুইডেনের মানব পরিবেশের উপর জাতিসংঘের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে তোলার জন্য ১৯৭৩ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ জুন পালন করা হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস। দিবসটির মূল লক্ষ্য পরিবেশ দূষণের কারণ ও দূষণ থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে বের করা। এ ছাড়া মানুষকে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন করে তোলাও এ দিবসের অন্যতম একটি লক্ষ্য।

পরিবেশ রক্ষায় বনভূমির গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবেশ সুরক্ষার জন্য একটি দেশের আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা অপরিহার্য।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বরফ গলে যাওয়া, সমূদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া, লবনাক্ততা, লবনাক্ত পানির অনুপ্রবেশ, মানুষের স্থানান্তর বৃদ্ধি, তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও তাপদাহ বৃদ্ধি, ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। যার ফলে, নারীদের বন্ধাত্ব্যসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি, কৃষি, অর্থনীতি, প্রাণী সম্পদ ও মৎস্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

প্রতিবছর পৃথিবীর ৪০ শতাংশ ভূমি ক্ষয় হচ্ছে, যা সরাসরি বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যাকে প্রভাবিত করছে। ২০০০ সাল থেকে এই পৃথিবীতে খরা প্রবণ জমির এলাকা বেড়েছে ২৯ শতাংশ, যা ২০৫০ সালের মধ্যে তিন চতুর্থাংশের বেশি বেড়ে যেতে পারে। এই খরা প্রবণ এলাকা গুলিকে পুনরায় সবুজ করে তোলা সুরক্ষা দরকার। প্রতিনিয়ত যেভাবে গাছ কেটে দেওয়া হচ্ছে, তাতে আর কিছু বছরের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাবে আরো কয়েক গুণ। এই তাপমাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণে আনতে গাছ লাগানো প্রয়োজন।

২০১৮ সালের মাঠ জরিপে বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ মোট ভূমির ১৪.১% উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের ৬৪% বনের আশপাশের জনগোষ্ঠী বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশে বনজ সম্পদ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যবহার করে ১০ কোটি ৮০ লাখ মানুষ। ২০১৭–১৮ অর্থবছরে দেশে বনজ সম্পদ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ৮৫৪ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদ। বিশ্বের বনজ সম্পদ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যবহার করে ২৬০ কোটি মানুষ। বর্তমানে বনভূমিতে আবৃত বিশ্বের ৩১% এলাকা। যার আয়তন প্রায় ৪০৬ কোটি হেক্টর। ১৯৯০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিন দশকে বিশ্বে প্রায় ৪২ কোটি হেক্টর বন উজাড় হয়েছে। সারা বিশ্বে ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর এক কোটি হেক্টর বনভূমি উজাড় হয়েছে।  বিশ্বে এখন পর্যন্ত নতুন করে বন সৃজন করা হয়েছে ২৯ কোটি ৪০ লাখ হেক্টর। বিশ্বের মোট বনের ৭%। যা প্রয়োজনের তুলনায় কুব কম।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত। সমগ্র বিশ্ব এখন জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই–অক্সাইডের ঘনত্ব বেড়েই চলছে, যা ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য হুমকিস্বরূপ। জীবাশ্ম জ্বালানির অতি ব্যবহার বায়ুমণ্ডলের এই ঘনত্ব বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানিতে উচ্চ পরিমাণে কার্বন থাকে। মৃত গাছের পাতা, মৃতদেহ ইত্যাদি জীবনের উপাদান হাজার হাজার বছর ধরে মাটির নিচে চাপা পড়ে এ জ্বালানি তৈরি হয়। কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানি। পাশাপাশি নির্বিচার বন উজাড় করা, প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করা এবং জৈব জ্বালানি পোড়ানোর মতো মানুষের নানাবিধ ক্রিয়াকলাপও অনেকাংশে দায়ী।

প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মাটির ক্ষয়, পানি দূষণ এবং বন উজাড়ের মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অনেকাংশে মানুষের কার্যকলাপ পরিবেশের ক্ষতির মূল কারণ। বিশ্বে এখন এই যে ঘন ঘন ভূমিকম্প, খরা, অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল এর সবই মানুষের লোভে ডেকে আনা। মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই প্রকৃতির সবকিছু একপক্ষীয়ভাবে ভোগ করে আসছে, মানুষ তার চাহিদার সীমানাকে নির্দিষ্ট করতে ভুলে গেছে। মানুষ তার ভোগ-বিলাসপূর্ণ অফুরন্ত চাহিদা আর উন্নত জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন বন উজাড় করছে,পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তোলা ও সমুদ্র সৈকতে আবাসিক এলাকা করছে। কলকারখানার বৃদ্ধি, গ্রিনহাউস গ্যাসসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক গ্যাসের নিঃসরণ, ক্ষতিকারক কেমিক্যালের ব্যবহারসহ নানা ধ্বংসাত্মক কাজ করায় ফল হিসেবে মাটি, পানি, বায়ুদূষণ, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বরফ গলে সাগরের উচ্চতা বাড়ছে। ফলে ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে বিশ্বের বহু জনপদ। বিশ্বে এখন এই যে ঘন ঘন ভূমিকম্প, খরা, অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল নামছে তা মানুষে অপরিণামদর্শিতার কারণে ঘটছে। বিশ্বের অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি কার্বনের নিঃসরণ না কমে বরং তা বাড়ছে। এতে মানুষের দেহে অনেক নিরাময় অযোগ্য ভয়াবহ রোগের আক্রমণ হচ্ছে।

পৃথিবী তার নিজস্ব নিয়মশৃঙ্খলে আবদ্ধ। এ শৃঙ্খল তার প্রতিটি উপাদানকে একটি একক নিয়মে আবদ্ধ করে রাখে। এ নিয়মের ব্যতিক্রম হলেই দেখা দেয় বিপর্যয়। প্রকৃতি যখন বিরূপ হয় মানুষ তখন অসহায় হয়ে পড়ে। মানুষ প্রকৃতির সন্তান। প্রকৃতি যেন মাতৃশ্রদ্ধা পায়। তাই আমাদের প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানকে সম্মান করা উচিত।

পৃথিবীর অস্তিত্বসংকটের জন্য প্রকৃতি দায়ী নয়, মানুষ দায়ী। আর তাই পৃথিবী রক্ষার দায়িত্বও আমাদের নিতে হবে। কেন পৃথিবীর ক্ষতি হচ্ছে এবং কীভাবে তা কমানো যায় তা জানার জন্য সচেতনতা প্রয়োজন। পৃথিবীকে রক্ষায় কার্বন নিঃসরণ কমানো, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় মানুষকে সচেতন হতে হবে। জীবন ধারণের জন্য মানুষকে পরিবেশ-প্রকৃতির অন্যান্য উপাদানের ওপর নির্ভর করতে হয়। পৃথিবী সুস্থ না থাকলে মানুষও বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। তাই অসুস্থ পৃথিবীকে ধীরে ধীরে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তার জন্য মানুষকে পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

প্রকৃতিকে রক্ষার জন্য আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে, কারণ প্রকৃতি সমস্ত উজাড় করে দিয়েছে মানুষের জন্য। আমাদের বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন দেয় গাছ। তবে নগরায়নে গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রকৃতিকে বাঁচাতে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে, গাছের যত্ন নিতে হবে। আমাদের অনেক প্রয়োজনেই গাছ কাটতে হয়, তার বিপরীতে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পাত্র, পলিথিনের ব্যাগ ও প্লাস্টিক বর্জ্য মাটির সাথে মিশে না। প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে, যেটা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তবে এগুলো একেবারে পরিহার করা সম্ভব নয়, তবুও এর ব্যবহার সীমিত পর্যায়ে আনতে হবে। একটি নিরাপদ, টেকসই ও সুন্দর পৃথিবীর জন্য আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানি যথাসম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে। দূরবর্তী স্থানে যাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে পাবলিক যানবাহন ব্যবহার করা। কাছাকাছি পথ অতিক্রম করতে হাঁটা বা সাইকেল ব্যবহার করা। পরিবেশ দূষণের কারণ ও দূষণ থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে বের করা। পরিবেশ রক্ষায় প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলা। আমাদের এমন ছোট ছোট কাজগুলোই এই পৃথিবী রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)