

সোমবার ● ১৯ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রকৃতি বাঁচানো অপরিহার্য
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রকৃতি বাঁচানো অপরিহার্য
প্রকৃতি ও পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ জীববৈচিত্র্য। বাস্তুতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী প্রকৃতিতে একটি প্রজাতিকে টিকে থাকতে হলে অন্য প্রজাতির প্রাণির ওপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়। জীববৈচিত্র্য বলতে পৃথিবীর জীবনের জৈবিক বৈচিত্র্য এবং পরিবর্তনশীলতা যাহা পৃথিবীর মাটি, জল ও বায়ুতে বসবাসকারী সব উদ্ভিদ, প্রাণী ও অনুজীবদের মধ্যে যে জিনগত, প্রজাতিগত ও পরিবেশগত বৈচিত্র্য দেখা যায়। কোনো একটি অঞ্চলের অন্তর্গত প্রাকৃতিক বাসস্থানে বসবাসকারী সমস্ত প্রাণী, উদ্ভিদ ও অণুজীবের প্রজাতি এবং তাদের জিনগত বৈচিত্র্যের সমাহারকে এককথায় জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভার্সিটি বলে।
দেশের জীববৈচিত্র্যের অফুরন্ত ভান্ডার হচ্ছে বন। বন প্রাণীর জন্ম, বিচরণ, প্রজনন ও বসবাসের উপযুক্ত জায়গা। বনই হচ্ছে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ধারক ও বাহক। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। বন উজাড় হচ্ছে। পরিবেশ রুক্ষ হচ্ছে। কমে যাচ্ছে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। এরই মধ্যে অনেক প্রজাতির প্রাণী দেশ থেকে বিলুুপ্তির পথে।
মানুষের বিরূপ আচরণে প্রকৃতি বিপন্ন হচ্ছে। জলাভূমি ও বন সংরক্ষণে পরিকল্পনা ও উদ্যোগের অভাব রয়েছে। দেশের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। বন উজাড় হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক প্রজাতির প্রাণী দেশ থেকে বিলুুপ্তির পথে। মানুষ, অন্যান্য প্রাণী ও গাছপালার জন্য পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন কারণে পানির প্রাপ্যতা কমে যাচ্ছে। নদ-নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। পুকুরে পানি নেই। নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য শঙ্কা তৈরি হয়েছে। একটা জলাভূমিতে বহু ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী থাকে। জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য জলাভূমি অত্যন্ত প্রয়োজন। পানি নিরাপত্তা ও জীববৈচিত্র্য একটি অপরটির পরিপূরক। জীবনের জন্য পানি অপরিহার্য। একটি রক্ষা করে অপরটি বাদ দিলে হবে না। জলাশয় জীববৈচিত্র্যের অন্যতম উপাদান।
আমাদের দেশ জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। বিশ্বের মোট পাখির ৭ দশমিক ২ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর ২ দশমিক ৬ শতাংশ বাংলাদেশে পাওয়া যায়। সারা ইউরোপে পাওয়া যায় ৬০ প্রজাতির ব্যাঙ। অথচ বাংলাদেশে আছে ৫০ প্রজাতির ব্যাঙ। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশর জীববৈচিত্র্যে অনেক সমৃদ্ধ। বাংলাদেশ দাক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ট্রানজিশন অবস্থানে আছে। পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রাণী মাইগ্রেশন এখান দিয়ে হয়ে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে দুটো ভৌগোলিক অঞ্চলের প্রাণীর সমাবেশ আমাদের এই অঞ্চলে। শীতের সময় পূর্ব ও মধ্য এশিয়া এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দুটি অঞ্চল থেকে পাখি আসে। দেশে প্রচুর পানির প্রাচুর্য। সুন্দরবনসহ বিভিন্ন ধরনের বন আছে, জলাশয় ও হাওড় আছে। স্তন্যপায়ী প্রাণীর ১১ ও মোট পাখির ৩৩ শতাংশ সরাসরি পানির ওপর নির্ভশীল।
উদ্ভিদ উর্বর পলিমাটির জমি এবং উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর কারণে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্যে খুবই সমৃদ্ধ। দেশে আছে প্রায় ২২ প্রজাতির উভচর, ১০৯ প্রজাতির অভ্যন্তরীণ ও ১৭ প্রজাতির সামুদ্রিক সরীসৃপ, ৩৮৮ প্রজাতির আবাসিক ও ২৪০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এবং ১১০ প্রজাতির অন্তর্দেশীয় ও তিন প্রজাতির সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদেশে উদ্ভিদের প্রজাতির সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি, যার মধ্যে ৩০০ বিদেশি। স্বাদু ও লোনা পানিতে আছে মোট দুই হাজার ২৪৪ প্রজাতির শৈবাল আছে। দেশে বন্যপ্রাণীর অপূর্ব সমাবেশ ও বৈচিত্র্য এক আশ্চর্য ঘটনা। তবে দেশের ভৌগোলিক অবস্থান বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ; অসংখ্য নদ-নদী, খাল-বিল, ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের বনাঞ্চল এবং মনোরম জলবায়ু বহু যুগ ধরে বাংলাদেশকে বিচিত্র বন্যপ্রাণীর অনবদ্য আবাসস্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে।