

শনিবার ● ৫ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » সুন্দরবনে মধু আহরণে মৌসুম শুরু হলেও মৌয়ালদের আগ্রহ কম
সুন্দরবনে মধু আহরণে মৌসুম শুরু হলেও মৌয়ালদের আগ্রহ কম
প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছা ঃ সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হয়েছে। সুন্দরবনের দুইটি বন বিভাগ খুলনা ও বাগেরহাটের ৪টি রেজ্ঞ থেকে মধু আহরণ করা হচ্ছে। বাগেরহাটের পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই, খুলনার পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষিরা রেজ্ঞের স্টেশন থেকে পাস দেয়া শুরু হয়েছে। প্রতি বছর ১ এপ্রিল থেকে মধু আহরণ শুরু হলেও এবার ঈদুল ফিতরের কারণে তা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। ৩ এপ্রিল থেকে বাগেরহাটের পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই বন অফিস থেকে মধু আহরণের অনুমতিপত্র (পাস) দেয়া শুরু হয়। আগামী ৩০জুন পর্যন্ত মধু আহরণ চলবে ।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা গেছে, নৌকার পাশ দেওয়া শুরু হয়েছে। এ বছর মৌয়াল ও নৌকার সংখ্যা অনেক কম। পাসের সংখ্যা আশানুরূপ না হলে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে বন বিভাগ। একই অবস্থা চাঁদপাই রেঞ্জেও।
সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব বলেন, এবার সুন্দরবনে নতুন করে বনদস্যু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মৌয়ালদের নিরাপত্তায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। কোনো নৌকা যদি বনদস্যুদের কবলে পড়ে তাহলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট বন অফিসে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তবে সুন্দরবনে নতুন করে বনদস্যুদের তৎপরতা শুরু হওয়ায় অপহরণের ভয়ে মধু আহরণে মৌয়ালদের আগ্রহ অনেকটাই কম। এর মাঝে আবার বনদস্যুদের ভয়ে লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়ে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না মধু ব্যবসায়ীরাও। ফলে এবার মৌয়াল ও নৌকার সংখ্যা অনেকটা কম বলে জানিয়েছে সুন্দরবন বিভাগ।
ঈদের ছুটির কারণে ৭ এপ্রিল পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনে মধু আহরণের মৌসুম শুরু হচ্ছে। ১ এপ্রিল মধু আহরণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু না হলেও সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনের স্টেশন থেকে পাস দেয়া শুরু হযেছে। দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বনজীবী মৌয়ালদের হাতে পাশ উঠিয়ে দেন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান।
মৌয়াল ফজলুল হক বলেন, ঈদের পর আনন্দের সঙ্গে আশা নিয়ে সুন্দরবনে যাচ্ছি মধু আহরণের জন্য। কিন্তু মৌসুম শুরুর আগে অবৈধভাবে সুন্দরবন থেকে যে হারে মধু চুরি হয়েছে, জানি না আশানুরূপ মধু পাবো কিনা। অল্প জায়গায় মধু আহরণ করে আমাদের পরিবার পরিজনের ভরণপোষণ ও মহাজনের চালান ওঠানো কঠিন।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৫ মৌসুমে সরকারিভাবে দুই হাজার পাঁচ শত কুইন্টাল মধু ও ৭৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা রেঞ্জে এক হাজার কুইন্টাল মধু ও ৩৫০ কুইন্টাল মোম এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জে দেড় হাজার কুইন্টাল ও মোমের লক্ষ্য মাত্রা ৪০০ কুইন্টাল নির্ধারণ করা হয়েছে। এক এপ্রিল বুড়িগোয়ালিনী ও কোবাদক স্টেশন থেকে পাস সংগ্রহ করে নৌকা নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে মৌয়ালরা।
মৌয়াল ফজলুল হকের মতে, যে পরিমাণ মৌয়াল বনে যান তাদের জন্য মধু আহরণের এলাকা পর্যাপ্ত নয়। তাছাড়া অভয়ারণ্য থেকে মধু আহরণ না করার ফলে মধুগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আগামী দিনে সুন্দরবনের অভয়ারণ্যগুলোতেও মধু আহরণের অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
মৌয়ালদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুন্দরবনে নতুন করে বনদস্যুদের তৎপরতা শুরু হওয়ায়, অনেকেই এবার মধু আহরণে যাবেন না। বনদস্যুর হাতে অপহৃত হলে মুক্তিপণ হিসেবে ২-৩ লাখ টাকা দিতে হয়। এ কারণে এবার অনেক মৌয়াল নৌকার পাস নেননি।
মধু ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১৮ সালে দস্যুমুক্ত ঘোষণার পর সুন্দরবনে নির্ভয়ে মধু আহরণ করে আসছিলেন মৌয়াল ও অন্য বনজীবীরা। কিন্তু কয়েক মাস আগে কয়েকটি দস্যু বাহিনী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নতুন করে সুন্দরবনে বনদস্যু তৎপরতা শুরু হওয়ায় এখন বনে ঢুকলেই চাঁদা দিতে হচ্ছে। চাঁদা দিতে না পারলে বনজীবীদের অপহরণ ও নির্যাতন করা হচ্ছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগীয় কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান জানান, মধু আহরণের জন্য মৌয়ালদের ১৫ দিনের পাস দেওয়া হয়, ১৫ দিন পরে আবার নতুন করে ১৫ দিনের পাস নিয়ে বনে মধু আহরণ করতে যেতে হয়। ৩০ জুন পর্যন্ত মধু আহরণ চলবে। মৌয়ালদের জন্য নিরাপত্তায় ও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। সুন্দরবনে মৌয়ালদের নিরাপত্তায় বনরক্ষীরা কঠোর নজরদারী চালাবে। কোনো নৌকা যদি বনদস্যুদের কবলে পড়ে তাহলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট বন অফিসে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।