

বুধবার ● ২ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » কৃষি » অবশেষে পাইকগাছার নাছিরপুর খাল উন্মুক্ত হলো
অবশেষে পাইকগাছার নাছিরপুর খাল উন্মুক্ত হলো
অবশেষে উন্মুক্ত হলো খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বহুল আলোচিত নাছিরপুর খাস খাল। ৬৮ দশমিক ১০ একরের নাছিরপুর খাল দীর্ঘদিন ধরে কখনও ইজারা নিয়ে আবার কখনো ইজারাবিহীন অবৈধ জবর দখলে রেখে খণ্ড খণ্ড করে নেটপাটা দিয়ে লবণ পানির চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছিলেন দখলদাররা।
পাইকগাছার তালতলা থেকে হরিঢালী অবধি আলোচিত নাছিরপুর খালটি ২ জুলাই বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধার ও উন্মুক্ত করেছেন উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ ইফতেখারুল ইসলাম শামীম, সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক, কৃষি কর্মকর্তা একরামুল হোসেন, ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ দাসসহ সেনাবাহিনীও পুলিশের পরিচালনায় খাল থেকে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা হয়। প্রায় ২০৫ বিঘা জায়গার ওপর বিভিন্ন স্থানে টানিয়ে দেওয়া হয় সাইনবোর্ড। মানুষ তিন দশক পরে খালের ওপর তাদের পূর্ণ অধিকার ফিরে পেয়ে মাছ ধরার আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে।
খালটি উন্মুক্ত করার ফলে খালকে অবলম্বন করে যাদের অন্ন সংস্থান,খাল ঘিরে যাদের জীবন-জীবিকা তাদের ঘরে ঘরে এখন আনন্দের বন্যা বইছে। প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ২০টি গ্রাম তালতলা, চিনেমলা, গোয়ালবাথান, প্রতাপকাঠি, খোলা, কাজীমুছা, রেজাকপুর, কাশিমনগর, কানাইডাঙ্গা,কপিলমুনি, হরিঢালী, সলুয়া শ্রীরামপুর, হাউলি, নাছিরপুর, রামনগর, মাহমুদকাঠির মানুষের মাঝে বুধবার ছিল প্রনোচ্ছাস-উৎসব-উল্লাসের দিন। তারা বহুকাল ধরে যে দাবী পুরণে অনেক ত্যাগ, নিপীড়িত ও ভয়-ভীতির দিন কাটিয়েছেন তা পুরন হয়েছে।
সর্বশেষ ২৫ জুন ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রুহুল আমিন স্বাক্ষরিত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নাছিরপুর খাল জলমহাল ইজারা প্রদান-সংক্রান্ত এক পত্রে জানানো হয়, ১৬ জুন সরকারি জলমহাল ইজারা প্রদান-সংক্রান্ত কমিটির ৮৫তম সভায় জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি মোতাবেক জলমহালটি আপাতত উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আদালত যে রায় দেবে, সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সম্প্রতি সে লক্ষ্যে খুলনা জেলার ১০টি জলমহাল উন্মুক্ত করার কার্যক্রম শুরু করে জেলা প্রশাসন। ৩০ জুন খুলনা জেলার ভূমি মন্ত্রণালয়ে জলমহাল ইজারা সংক্রান্ত কমিটির সর্বশেষ সভায় পাইকগাছার নাছিরপুর খাল উন্মুক্ত করার ঘোষণা করা হয়েছিল।
এর আগে, পাইকগাছা উপজেলার নাছিরপুরে খাল দখলকে কেন্দ্র করে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। অস্ত্রশস্ত্রসহ দখল-পাল্টা দখলের মহড়া চালায় এলাকার প্রভাবশালী মহল। সেখানে মৎস্যজীবীদের মারধর করে উচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। স্থানীয় সূত্র জানায়, নাছিরপুর খালটি ইজারার জন্য একাধিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে টেন্ডার দাখিল করা হলেও কোনো পক্ষকে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, গত এপ্রিলে টেন্ডার কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। খালটি দখলদারিত্বের পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী শাহাদাত হোসেন ডাবলু ও তার সহযোগীদের নামে অভিযোগ করেন সেখানকার মৎস্যজীবীরা। কয়েক দফা থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে বলে জানান তারা। স্থানীয়দের কয়েকজন জানান, দখল-পাল্টা দখলকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে সেখানে সাধারণ মৎস্যজীবীদের মারধর করে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ জলমহাল থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষ যেমন ফসলের জন্য পানি দিতে পারে না, তেমনি প্রয়োজনীয় কাজেও এ পানি ব্যবহার করতে পারত না। এ বিষয়ে একাধিকবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও সমাধান হয়নি।
অবশেষে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ সাইফুল ইসলামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খাল উদ্ধার ও উন্মুক্ত করার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার পর খাল পাড়ের জেলে, কৃষক এবং সাধারণ মানুষ তাঁকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন।