

বুধবার ● ৬ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি » বিচারের অপেক্ষায় মাগুরার ১০ শহীদদের পরিবার
বিচারের অপেক্ষায় মাগুরার ১০ শহীদদের পরিবার
মাগুরা প্রতিনিধি : পূর্ণ হল গণঅভ্যুত্থানের এক বছর। গণ অভ্যুত্থানে নিহত মাগুরার ১০ শহীদদের পরিবারে কান্না যেন থামছে না। শহীদদের মৃত্যুর এক বছরে কাঙ্খিত বিচার না পাওয়ায় শহীদ পরিবারের চলছে আক্ষেপ। বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। শহীদ পরিবারের সদস্যরা আক্ষেপ করে বলেন যেসব পুলিশ সদস্যের গুলিতে নিহত হয়েছে মাগুরার ১০ শহীদ তারা আজ বাংলাদেশে এখনো চাকরি করছেন । আমরা তাদের বিচার প্রার্থনা করছি। সেদিন জুলাই আগস্ট এ শেখ হাসিনার দমনমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ঢাকার রাস্তায় ঢল নেমেছিল মানুষের। কন্ঠে তারা ধারণ করেছিল দ্বীপ্ত স্লোগান। তাদের চোখে মুখে ছিল নিপীড়ন ও বঞ্চনা বিরোধী প্রত্যয়। সেদিন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিল নারী-পুরুষ, হিজরা জনগোষ্ঠী মানুষ, শহর থেকে গ্রাম, বাঙালি থেকে আদিবাসী, তরুন থেকে পথশিশু , শিক্ষক শিক্ষার্থী, পেশাজীবী সাংবাদিক সহ সব শ্রেণী পেশার মানুষ। এমনি মাগুরার রাজপথ সেদিন থেমে থাকে নি। রাজপথে নেমেছিল ছাত্র জনতা সহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। জুলাই আগস্টে ঝরে গিয়েছিল মাগুরার দশটি তাজা প্রাণ । এরা হলো মেহেদী হাসান রাব্বি, রাজু আহমেদ, আলামিন, মিঠু বিশ্বাস, ফরহাদ হোসেন, মুত্তাকিন বিল্লাহ, শাহারিয়ার সোহান, আহাদ আলী ও সুমন শেখ।
মাগুরা সদরের বৈরুতাতৈল গ্রামের শহীদ মেহেদী হাসান রাব্বির রড় ভাই ইউনুস আলী জানান, আমার ভাই বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এদেশের নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। তার মৃত্যুর পর আমি বাদী হয়ে একটি মামলা করি। কিন্তু মৃত্যুর এক বছর পর আজও আমরা সঠিক বিচার পাইনি। তার বিচারের অপেক্ষায় আমাদের পরিবার নিরবে নিভৃতে কাঁদছে। কাঁদছে তার শিশু কন্যা, কাঁদছে তার স্ত্রী। আমার মা তার সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায়। আমরা এ মৃত্যুর সঠিক বিচার চাই।
সদরের পারনান্দুয়ালী ব্যাপারীপাড়া গ্রামের শহীদ আলামিনের বাবা আলিফ বিশ্বাস জানান, মৃত্যুর এক বছর অতিবাহিত হলেও আমার সন্তানের সঠিক বিচার পাইনি। তার কবরের কাছে আমরা প্রতিনিয়তই আসে শুধু কাঁদি। ৫ আগস্ট বিকাল তিনটায় ঢাকা সাভার এলাকার আমার সন্তান পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয় এবং সাতটায় তার মৃত্যু হয়। পুলিশের গুলিতে আমার সন্তান আজ শহীদ হল আমরা সেই পুলিশের বিচার চাই।
শহীদ মুত্তাকিন এর মা রহিমা বেগম বলেন,১৮ জুলাই আমার সন্তান পুলিশের গুলিতে আহত হয়। পরে হাসপাতাল নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই, আমি জালেমদের বিচার চাই, আমি শেখ হাসিনা বিচার চাই। মৃত্যুর এক বছর অতি বিবাহিত হলেও আমরা দেশের কাছে কাঙ্খিত বিচার পাইনি।
শহীদ মিঠু বিশ্বাসের মাতা মালা আক্তার বলেন,৫ আগস্ট ২টার পর আমার সন্তান বাড়ি থেকে চলে যায়। তারপর মিছিলে যোগ দেয় সেই মিছিলে পুলিশের গুলিতে সে শহীদ হয়। আমরা শুধু কেঁদে কেঁদে চলছি কিন্তু মৃত্যুর এক বছর পর এখনো শব্দ শুনি সে হায়েনার কন্ঠের। আমি আমার সন্তানসহ সকল শহীদদের হত্যার বিচার চাই। যারা এ হত্যার সাথে জড়িত তাদের ফাঁসি দেয়া হোক।
মাগুরার সুধীমহল বলছেন, তাই জুলাই আগস্টে নিহত সকল শহীদ আমাদের গর্ব। অবিলম্বে এই হত্যার বিচার হওয়া খুব জরুরী।
মাগুরার ইতিহাস গবেষক ডাক্তার তাসিকুজ্জামান বলেন, জুলাই আগস্ট বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সব অন্যায় অবিচার ও স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তির সুতিকাগার হয়ে উঠেছিল জুলাই বিপ্লব। তাই জুলাই একটি স্বপ্ন, জুলাই ছিল নতুন বাংলাদেশ গড়ার দিন।