শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
রবিবার ● ২৮ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » কৃষি » মাগুরার ৩৫ গ্রামে এখন লিচুর ভরা মৌসুম
প্রথম পাতা » কৃষি » মাগুরার ৩৫ গ্রামে এখন লিচুর ভরা মৌসুম
৪২৭ বার পঠিত
রবিবার ● ২৮ মে ২০১৭
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মাগুরার ৩৫ গ্রামে এখন লিচুর ভরা মৌসুম

---

এস আলম তুহিন, মাগুরা থেকে  ॥

মাগুরার লিচুগ্রাম খ্যাত সদর উপজেলার হাজরাপুর, ইছাখাদা, খালিমপুর, মিঠাপুর,হাজিপুরসহ অন্তত ৩৫ গ্রামে এখন  লিচুর ভরা মৌসুম। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে লাল রঙ্গের পাকা লিচু। মাগুরা উপর দিয়ে ঝিনাইদহ হয়ে যারা চুয়াডাঙ্গা,মেহেরপুরসহ বিভিন্ন জেলায় যান জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দুরত্বে ইছাখাদা পৌঁছলেই তারা রাস্তার দু’ধারে দেখতে পাবেন সারি সারি লিচু বাগানের এ মনোরম দৃশ্য। লিচু গ্রামখ্যাত এসব এলাকার দেড় হাজার বাগান  থেকে এবার প্রায় ১৫ থেকে ২০  কোটি টাকার লিচুর কেনাবেচা হবে বলে চাষিরা জানিয়েছেন।

সদর উপজেলার হাজরাপুর, হাজীপুর ও রাঘবদাইড় ইউনিয়নের ইছাখাদা, মিঠাপুর, গাঙ্গুলিয়া, খালিমপুর, মির্জাপুর, পাকাকাঞ্চনপুর, বীরপুর, রাউতড়া, বামনপুর, আলমখালী, বেরইল, লক্ষিপুর,  আলাইপুর , নড়িহাটিসহ ২০টি গ্রামের চাষিরা গত ২ দশক ধরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে  এই লিচু চাষ করে আসছে।

লিচু বাগানগুলো ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারিরা চাষিদের কাছ থেকে অগ্রিম কিনে নেয়া বাগানে লিচু সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন অনেক আগেই। বাগানে বাগানে চলছে লিচু সংগ্রহ ও বাজারজাতকরনের কাজ।

ইছাখাদার লিচুচাষী বিল্লাল হোসেনসহ আরো অনেকে জানান- একসময় এ এলাকার কৃষকরা ধান-পাটসহ প্রচলিত ফসল চাষে অভ্যস্ত ছিল। যা থেকে তাদের উৎপাদন খরচ উঠতোনা। যে কারণে তারা পেঁপে পেয়ারার পাশাপাশি লিচু চাষ শুরু করে। পরবর্তীতে লিচু চাষ অপেক্ষাকৃত লাভজনক হওয়ায় গোটা এলাকার কৃষকরা লিচু চাষ শুরু করে। বর্তমানে হাজরাপুর, হাজিপুর, রাঘব দাইড় এ তিন ইউনিয়নের ৩৫ গ্রামের কৃষকরা শুধু লিচুর চাষ করছে। অসংখ্য লিচু চাষি আছেন যারা শুন্য থেকে শুরু করে এখন লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন। এবার গোটা গ্রাম থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে তারা আশা করছেন । গত বছরের বিক্রি ছিল একইরকম ।

চাষীরা আরো জানান, লিচুর বাগান করতে প্রথম বছর একটু খরচ হয়। পরবর্তীতে তেমন আর উল্লেখযোগ্য খরচ নেই বললেই চলে। প্রতি বছর  লিচুর ফুল আসলে শুধু গাছে স্প্রে ও সামান্য পরিচর্যা করতে হয়। এলাকার মাটি লিচু চাষের জন্য উপযোগি। এখানে বোম্বায়, চায়না থ্রী, মোজাফ্ফর ও স্থানীয় হাজরাপুরী জাতের লিচুর চাষ হয়ে থাকে। মৌসুমের শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারী ফড়িয়া ও আড়তদারা এসে লিচুর বাগান কিনে তা  গাছ থেকে ভেঙ্গে ট্রাকে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ট্রাক লিচু এ এলাকা থেকে চালান হচ্ছে।

প্রসঙ্গত আলাইপুর গ্রামের লিচু চাষী সিদ্দিক হোসেন জানান- ৬৫০ টি গাছ নিয়ে তার একটি সুবৃহৎ লিচু বাগান রয়েছে। গতবছর যা ১৫ লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি হয়েছিল । এবার আরো দাম আশা করছেন ।

রাজবাড়ি থেকে আসা লিচু ব্যাপারী চাদ আলী জানান- হাজিপুর , হাজরাপুরের লিচু স্বাদে সুমিষ্ট ও রসালো হওয়ায় সারাদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে । এবছর তিনি ইতিমধ্যে ২ লক্ষাধিক টাকা দিয়ে ২ টি বাগান কিনেছেন। আরো একাধিক  বাগান কেরার চেষ্টা করছেন। প্রতি এক হাজার লিচুর পাইকারী দর পড়ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।   যা হাজার প্রতি ১৭০০ থেকে ২০০০ টাকা খুচরা দরে বিক্রি হচ্ছে  । ঢাকা থেকে আসা লিচু ব্যাপারী শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি হাজরাপুরের বিভিন্ন লিচু চাষির কাছ থেকে ৮ টি বাগান ১০ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন। যেখান থেকে তিনি ১০ লাখ লিচু সংগ্রহের আশা করছেন। যার পাইকারি বাজার মুল্য কমপক্ষে ১৫  লাখ টাকা। শহিদুল ইসলাম জানান, এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে।এছাড়া হাজরাপুরি লিচু স্বাদে ও রসের দিক দিয়ে অনেক ভালো হওয়ায় বাজারে ব্যাপক চাহিদা তৈরী হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে সারা দেশে হাজরাপুরি লিচুকে তারা ওই নামেই পরিচিতি করতে স্বক্ষম হয়েছেন। এ কারণে বোস্বাই, মোজ্জাফর এ ধরনের জাতের মত মাগুরার হাজরাপুরি এখন বিশেষ ব্রান্ড হিসাবে খ্যাতি পেয়েছে।

অপর ব্যাপারী আলেক মোল্যা জানান, লিচুর মুকুল আসার অগে থেকেই তারা পাইকারি দরে বাগান কিনে নেন। ফলে চাষীদের ঝুকি কমে যায়। এ কারণে দিনে দিনে এলাকায় লিচু চাষের সম্প্রসারন ঘটছে।

ইছাখাদার লিচু চাষী মিন্টু কাজি জানান -একসময় এ এলাকার কৃষকরা ধান-পাটসহ প্রচলিত ফসল চাষে অভ্যস্ত ছিল। যা থেকে তাদের উৎপাদন খরচ উঠতো না। যে কারণে তারা পেঁপে পেয়ারার পাশাপাশি লিচু চাষ শুরু করে। পরবর্তীতে লিচু চাষ অপেক্ষাকৃত লাভজনক হওয়ায় গোটা এলাকার কৃষকরা পুরোটাই লিচু চাষে ঝুকি পড়ে। অসংখ্য লিচু চাষি আছেন যারা শুন্য থেকে শুরু করে এখন লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন।

অপর কৃষক কিবরিয়া কামাল জানান, তার ৩ টি বাগানে এবার ভালো ফলন হয়েছে। তবে এক ধরনের ছোট জাতের মাছি পোকা কিছু লিচুর ব্যাপক ক্ষতি করছে। এটির প্রতিরোধে কৃষকরা ভলিউম নামে এক ধরনের কিটনাশক স্প্রে করছে। যা কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। সরকারিভাবে ফেরোমন ট্রাপ জাতীয় প্রকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহারের ব্যস্থা করলে ভালো হতো।

গোটা জেলায় প্রায় দেড় হাজার লিচু বাগান রয়েছে। যেখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লিচু চাষ করে উল্লেখিত গ্রামগুলোর প্রায় সহস্রাধিক কৃষক পরিবার আত্মনির্ভরতার পথ খুজে পেয়েছে। কৃষি বিভাগ অব্যাহতভাবে নিয়মিত খোঁজ খবর নেয়ার পাশাপাশি সব ধরণের সুবিধা এসব চাষীদের দিচ্ছে। তিনি লিচু প্রক্রিয়াজাত করার জন্য এখানে একটি  প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনে পাশাপাশি এ পণ্য বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)