রবিবার ● ২০ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » উপকূল » বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হতে চলেছে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কিয়দাংশ
বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হতে চলেছে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কিয়দাংশ
রামপ্রসাদ সরদার, কয়রা, খুলনাঃ
সুন্দর বন সংলগ্ন দুই নদ-নদীর ক্রমশঃ ভাঙ্গনে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হতে চলেছে খুলনার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন এবং উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের একাংশ।
৩৩ হাজার লোকের বসতি সমৃদ্ধ এই ইউনিয়নে কাষ্টমস অফিস, কোষ্টগার্ডের অফিস, ফরেষ্ট অফিস,নৌ-পুলিশ ফাঁড়িসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। ওয়াপদার বেড়ীবাঁধগুলোর মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় যে কোন সময় তা ভেঙ্গে গিয়ে একেবারেই আলাদা দ্বীপে পরিণত হবে দক্ষিণ বেদকাশী ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কিয়দাংশ এমনটি আশা প্রকাশ করছে এই এলাকার সাধারন জনগণ। এক সময় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকলেও ২০০৯ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে তাও শেষ করে দেয়। তবে তা আবার চালু করেছে পল্লী বিদুৎ কর্তৃপক্ষ।
কয়রা উপজেলা থেকে ২০ কিলো মিটার দূরে সুন্দরবনের মধ্যে অবস্থিত দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন। যাতায়াতের জন্য কপোতাক্ষ নদের পাশের ও শাকবাড়ীয়া নদীর ওয়াপদার বেড়ীবাঁধ ছাড়া আর কোন মাধ্যম নেই। তবে এই দুই ওয়াপদার বেড়ীবাঁধ দিয়ে পায়ে হেঁটে ছাড়া চলাই অসম্ভব। কর্ম ব্যস্ততার জন্য কিছু মানুষ মোটরসাইকেল ব্যাবহার করলেও ভঙ্গুর রাস্তার কারণে তা সকল স্থানে পৌঁছায়না। এই ইউনিয়নে রয়েছে রায়মঙ্গল কাষ্টমস অফিস, আংটিহারা নৌ-পুলিশ ক্যাম্প, কোষ্টগার্ডের স্থায়ী ক্যাম্প ও বনবিভাগের কোবাদক ফরেষ্ট স্টেশন । চারটি সরকারী কার্যালয় থেকে প্রতিবছর সরকারের কোষাগারে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব জমা হলেও যাতায়াতের জন্য একমাত্র ভরসা বেড়ীবাঁধগুলো প্রতি বছরই মেরামত করা হয় যেমন-তেমন ভাবে। বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য যে বরাদ্দ দেয়া হয় তার ৬০ শতাংশই পকেটস্থ হয়ে যায় পাউবোর কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের মধ্যে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অনেকেই।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের দুই পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে শাকবাড়ীয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদ। দশ বছর আগেও দুই নদ-নদীর দূরত্ব ২ কিলোমিটারের বেশী থাকলেও বর্তমানে ১৫০ মিটারে এসে ঠেকেছে। ২০০৯ সালে আইলার আঘাতে ৪ বছরের বেশী সময় পানিতে তলিয়ে ছিল ইউনিয়নের ৭০ ভাগ জমি। তারা আক্ষেপ করে বলেন, আইলার আগে বা পরে টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মিত নাহলেও নদি-ভাঙ্গনে ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ যেন-তেন ভাবে মেরামত করলেও বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে এলাকা প্লাবিত হয়নি বর্তমানে যেভাবে বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে এলাকা প্লাবিত হয়েছে/ হচ্ছে। আমরা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এর অবসান চাই।
সুন্দরবন অভ্যন্তরে হওয়ায় এই ইউনিয়নে অপরাধের মাত্রা একটু বেশী। এখানে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কোন অভিযাণ সচারচর করতে পারে না। বর্ষা মৌসুমে কয়রা থেকে যাতায়াতের জন্য নৌযান ছাড়া আর কোন উপায় নেই এই ইউনিয়নে। আংটিহারা এলাকায় একটি নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হলেও তাদের যানবাহন মোটরইকেলেই সীমাবদ্ধ। সড়ক ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় মোটরসাইকেলও সহজে অনেক এলাকায় পৌছাতে পারে না।
উত্তর বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান গনেশ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, শাকবাড়ীয়া নদীর ওয়াপদার বেড়িবাঁধ এবং কপোতাক্ষ নদের ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ২টি আমার নির্বাচিত এলাকায় হওয়ায় এবং টেকসই বেড়ীবাঁধ না হওয়ায় বছরের বেশির ভাগ সময় নদীর পানি চুইয়ে ও জোয়ারের পানি ছাপিয়ে নদী -ভাঙ্গন লেগেই থাকে। যে করণে ২ নদীর ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে ১৫০ মিটারে ঠেকেছে। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মিত নাহলে ২নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে একাকার হয়ে অচিরেই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হবে।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান জিএম কবি শামসুর রহমান বলেন,এই ইউনিয়নে চারটি সরকারী অফিস, ১২ টি বিদ্যালয়, ২৮ টি মাদ্রাসা, ২৪ টি মন্দির, ৪ টি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় এখন ইউনিয়নটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হতে চলেছে।তিনি আরও বলেন, ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে ২৭ কিলো মিটার সড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী। বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন ধরেছে। মেরামত করার জন্য স্থানীয় এমপিসহ বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হয়েছে। চলতি মৌসুমের মধ্যে বাঁধগুলো মেরামত না করা হলে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হবে এই ইউনিয়ন। মূল ভূ-খন্ডের সাথে কোন যোগাযোগ থাকবে না। তলিয়ে যাবে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস সমৃদ্ধ ১৭টি গ্রাম। তাই আধুনিক সভ্যতার এ যুগে এলাকাবাসী কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের মানুষের জীবন মাল রক্ষায় বেড়িবাঁধ গুলো জরুরী ভিত্তিতে সংস্কারের দাবি জানিয়েছে।