শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

SW News24
সোমবার ● ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » সুন্দরবনে বাঘের বাড়িতে পর্যটন কেন্দ্র
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » সুন্দরবনে বাঘের বাড়িতে পর্যটন কেন্দ্র
২৮০ বার পঠিত
সোমবার ● ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সুন্দরবনে বাঘের বাড়িতে পর্যটন কেন্দ্র

 সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের শেখেরটেক ও কালাবগী, শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্ধা ও চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক এলাকায় চারটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ার উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ।    সুন্দরবনের আলোচিত বাঘের বাড়ি শেখেরটেক এলাকায় নতুন পর্যটন কেন্দ্রে নির্মাণ করেছে বন বিভাগ। ইতিমধ্যে সেখানে পর্যটকদের যাতায়াতের অনুমতিও দেয়া শুরু করেছে। তবে বনরক্ষী ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই এলাকায় ৪০০ বছরের পুরোনো একটি কালীমন্দির রয়েছে। সেখনে বছরের পর বছর ধরে কয়েকটি বাঘ বসবাস করছে। পর্যটন কেন্দ্র চালু হলেও বাঘেরা ওই এলাকা ছাড়তে চাচ্ছে না।শেখেরটেক এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল বা রয়েছে এমন অন্তত ১০ জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই মন্দিরটি জেলেদের কাছে বাঘের বাড়ি নামে পরিচিত।

খুলনা শহর থেকে নদীপথে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার দূরে শিবসা নদীর পূর্ব পাড়ে রয়েছে শেখের খাল। তার কিছুটা দূরে কালীর খাল। এই দুই খালের মধ্যবর্তী স্থানটি শেখেরটেক নামে পরিচিত। মোগল আমলে ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ওই এলাকায় একাধিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিল। সেগুলোর ধ্বংসস্তূপ এখনো টিকে আছে। এগুলোর মধ্যে একটি কালীমন্দির অন্যতম।৪০০ বছরের পুরোনো ওই মন্দিরটি ঘিরেই শেখেরটেকে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র। বনরক্ষী ও জেলেরা জানিয়েছেন, ওই মন্দিরেই অনেক বছর ধরে কয়েকটি বাঘ বসবাস করে আসছে।

 

বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বর্তমানে সাতটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলো হলো করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট ও কলাগাছী। ওইসব স্থানে প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন। একই স্থানে বেশি পর্যটকের কারণে বনের সার্বিক পরিবেশ ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। তাই ২০২১ সালে নতুন করে আরও চারটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ার উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ। সেগুলো হলো সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের শেখেরটেক ও কালাবগী, শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্ধা ও চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক। ২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে। বন বিভাগ মনে করছে, নতুন চার পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে শেখেরটেক ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের ঐতিহাসিক নিদর্শন পর্যটকদের বেশি আকৃষ্ট করবে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘শেখেরটেক ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে। ইতিমধ্যে আমরা সীমিত পরিসরে পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি দেয়া শুরু করেছি। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর পর্যটকদের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত করা হবে।’

  বন গবেষকরা বলছেন, সেখানে নতুন পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য কোনো ধরনের গবেষণা করেনি বন বিভাগ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, ‘শেখেরটেক এলাকায় ইকোট্যুরিজম বা যা করা হোক না কেন, একটা স্টাডি (গবেষণা) করে কাজ শুরু করা উচিত ছিল। বন বিভাগ এটা করেনি। ইতিমধ্যে সেখানে প্রচুর গাছপালা কেটে কংক্রিটের ফুট ট্রেইল নির্মাণ করা হয়েছে। উচিত ছিল পরিকল্পিতভাবে পরিবেশের ভারসাম্য রেখে পর্যটন কেন্দ্রে নির্মাণ করা।’

 শেখেরটেক ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে নির্মাণকাজে সহায়তা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে চারজন বনরক্ষীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের একজন দীপক কুমার দে বলেন, ‘মন্দিরের কাছে সব সময়ই বাঘ অবস্থান করে। কারণ মন্দিরের জায়গাটা বনের অন্যান্য স্থানের তুলনায় একটু উঁচু। এখানে তিনটি বাঘ রয়েছে। একটি পুরুষ, একটি মহিলা ও এক বাচ্চা বাঘ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানতাম রাতে আলো দেখলে বাঘ আসে না। কিন্তু এখানের বাঘগুলো ক্ষীপ্ত হয়ে গেছে। এখানে শ্রমিকরা কাজ করে সেই শব্দে তারা হয়তো অসন্তুষ্ট হয়েছে। প্রতিদিন রাতেই তারা নির্মাণকাজের আশপাশে আসছে, সকালে উঠে আমরা পায়ের ছাপ দেখতে পাচ্ছি।’

 দীপক কুমার দে বলেন, ‘নির্মাণকাজের সময় মন্দিরের কাছে কিছু পাইপ ও পলিথিন রাখা হয়েছিল। বাঘেরা সেই পাইপ ছিঁড়ে দূরে নিয়ে ফেলে দিয়েছে, পলিথিন ছিঁড়েছে।’বনকর্মী বাসার বলেন, ‘এখানে নির্মাণকাজ চলায় বাঘেরা খুবই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। কয়েক দিন আগে নির্মাণকাজের জন্য কিছু পলিথিন রাখা হয়েছিল মন্দিরের কাছে। রাতে বাঘ সেই পলিথিন ছিঁড়ে খেয়েছে। পরে বাঘের পায়খানায় সেই পলিথিন বের হয়েছে।’

 শতাধিক বছর আগে প্রকাশিত সতীশ চন্দ্র মিত্রের লেখা ‘যশোহর-খুলনার ইতিহাস’ গ্রন্থও শেখেরটেক এলাকায় বাঘের আধিক্যের কথা বলা হয়েছে। বইয়ে লেখা হয়েছে, ‘এখানে সুন্দরী গাছ যথেষ্ট, হরিণের সংখ্যা অত্যন্ত অধিক এবং ব্যাঘ্রাদি (বাঘ) হিংস্র জন্তুর আমদানিও বেশি। সুতরাং আমাদিগকে এক প্রকার প্রাণ হাতে করিয়া এ বনে ভ্রমণ করিতে হইয়াছিল।’

 

সম্প্রতি ওই মন্দির এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শেখেরটেক খাল থেকে মন্দির পর্যন্ত প্রায় সোয়া এক কিলোমিটার কংক্রিটের ফুট ট্রেইল নির্মাণ করা হয়েছে। ওই ফুট ট্রেইলটি মন্দিরের চারপাশ ঘুরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটকদের বনের ওপরিভাগ দেখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার। বনের মধ্যে কিছু স্থানে ইটের রাস্তাও নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে একটি শৌচাগারের ব্যবস্থাও আছে।

 বনরক্ষীরা জানিয়েছেন, মানুষের কোলাহল, রাতে কাজের সময় আলো- এসব থাকলে বাঘ সাধারণত এলাকা ছেড়ে চলে যায়। তবে মন্দির এলাকাটি থেকে বাঘেরা কোনোভাবেই সরতে চাইছে না।

 এ প্রসঙ্গে ড. ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, ‘বন বিভাগের উচিত হবে, সেখানে সীমিত পরিসরে পর্যটক পাঠানো। কারণ পর্যটনের জন্য বনের পরিবেশ নষ্ট বা বাঘেদের যন্ত্রণা দেয়া ঠিক হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি একসময়ে বন বিভাগে চাকরি করতাম। তখন একটি বাঘ পলিথিন খেয়ে মারা গিয়েছিল। সেখানে পর্যটকরা গেলে বনে অনেক কিছুই ফেলে আসবে।’---





আর্কাইভ