শিরোনাম:
পাইকগাছা, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ১২ জুলাই ২০২৩
প্রথম পাতা » মুক্তমত » প্রকৃতি সংরক্ষণে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে
প্রথম পাতা » মুক্তমত » প্রকৃতি সংরক্ষণে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে
১৭১ বার পঠিত
বুধবার ● ১২ জুলাই ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

প্রকৃতি সংরক্ষণে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে

প্রকাশ ঘোষ বিধান   ---

২৮ জুলাই বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এই দিবসের গুরুত্ব অনেক। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য দিবসটি পালন করা হয় । যাতে ঐ দিবসের আলোচনা পর্যালোচনার মাধ্যমে বছরের বাকী দিনগুলোতে তা গুরুত্বের সাথে  পতিপালন করা যায়। প্রকৃতি ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকব। আর প্রকৃতিকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের।

আমাদের চারপাশে যা আছে তাই পরিবেশ ও প্রকৃতি। পরিবেশ রক্ষা করলে প্রকৃতি বাঁচবে,প্রকৃতি বাঁচলে মানুষ বাঁচবে।আজ মানুষের দ্বারা পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, কলকারখানার দূষণ, মাটি দূষণ, পানি দূষণ, বর্জ্য দূষণ এইভাবে সর্বপ্রকার দূষণে মানুষ দায়ী।বাংলাদেশের সংবিধানে ১৮(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবে। সংবিধানকে সমুন্নত রাখা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব।

দূষণের মাত্রা দিনদিন বাড়ছে। সকল ধরনের দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার পদক্ষেপ আমাদেরকে নিতে হবে। জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার আমাদের খাদ্যচক্রকে দূষিত করে ফেলছে যার কারণে মানুষের শরীরে নানা প্রকার রোগ বাসা বাঁধছে। বায়ু দূষণের ফলে শ্বাস কষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। বাতাসে শীসার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃদ্ধ ও শিশুরা নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। শব্দ দূষণের ফলে মানুষের  বধিরতার হার বাড়ছে।গাড়ী ও কলকারখানার ধোঁয়া পরিবেশকে দূষিত করে তুলেছে। শিশু ও রুগীর ঘুমের  সমস্যাসহ নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা  বাড়ছে। যা মানুষের কর্মের ফল।

আজ সর্বত্রই নগরায়নের ছোঁয়া। যার প্রভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে  জীবনযাত্রার মান, বাড়ছে মানুষের নানামুখী চাহিদা। কিন্তু দুঃখের বিষয়,   প্রতিনিয়ত জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রকৃতি ধ্বংস করা হচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগের হার বাড়ছে। বনজঙ্গল নিধনের ফলে শুধু আমাদের সবুজ, সতেজ প্রকৃতিকে হারিয়ে ফেলছি না, হারিয়ে ফেলছি পৃথিবীতে আমাদের টিকে থাকার অস্তিত্বকে। প্রতিটি মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য বিশুদ্ধ পরিবেশের প্রয়োজন। সুস্থ পরিবেশের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয়। কিন্তু অসচেতনতার কারণে নানাভাবে প্রকৃতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

প্রকৃতির ক্রমবর্ধমান দূষণ নিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা চিন্তিত। যত্রতত্র শিল্প-কারখানা স্থাপন, বৃক্ষ নিধন, রাসায়নিক গ্যাসের অপব্যবহার ইত্যাদির প্রভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ছাড়াও অনেক ক্ষতিকারক গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ওজন স্তর ক্ষয় হচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সূর্যের তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে,  সময়মতো  বৃষ্টি হচ্ছে না। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্ন অঞ্চলের দেশগুলো হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। বেঁচে থাকার জন্য  প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল আর প্রকৃতি সংরক্ষণ প্রতিটি ব্যক্তির নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু কিছু মানুষের অসচেতনতা, অদূরদর্শিতা আর অমানবিক আচরণের কারণে সুন্দর এ পৃথিবী যেন প্রাণী জগতের বসবাসের যোগ্যতা হারাচ্ছে। প্রকৃতিতে তৈরি হচ্ছে ভারসাম্যহীনতা। প্রতিবছর বায়ুদূষণ, পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, খরা, দাবানলসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ। ফলে অকালে মৃত্যু, বাস্তচ্যুত ও বিভিন্ন রোগাক্রান্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা মূলত বৃক্ষনিধন, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত নগরায়ন প্রভৃতি মনুষ্যসৃষ্ট কার্যকলাপের ফল। প্রকৃতিকে নিজের জায়গায় থাকতে দেই তাহলে আমরা ভালো থাকবো। আর প্রকৃতিকে  ধ্বংস করলে সে আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিবেই।

বৃক্ষ থেকে নানারকম পুষ্টিকর ফল ও খাদ্য গ্রহণ করছে মানুষ। এছাড়া ঘরের আসবাবপত্র সহ প্রায় মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রে আষ্টেপৃষ্টে ধরে রয়েছে প্রকৃতি। সর্বোপরি সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ আমাদেরকে দেয় প্রশান্তির তৃপ্তি ও মানসিক শান্তি। সুন্দর প্রকৃতি নিমিষেই দূর করে তোলে মানসিক অবসাদ, ফিরিয়ে দেয় আপন সজীবতা। এতদসত্ত্বেও  যে প্রকৃতি মানুষের কল্যাণে কাজ করে সেই প্রকৃতিকে মানবসমাজ প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছে। এরচেয়ে বড় অজ্ঞতা আর কিছু হয় না।প্রতিনিয়ত বৃক্ষ নিধন, ফসলের জমিতে অতিরিক্ত সারের ব্যবহার, পাহাড় কাটা, কলকারখানার কালোধোঁয়া প্রকৃতি রয়েছে হুমকির মুখে। এসব কারণে একদিকে পৃথিবীতে বাড়ছে তাপমাত্রা, সেই সাথে বিষাক্ত খাবার গ্রহণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে, এছাড়াও নানারকম প্রাকৃতিক দূর্যোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রাণভরে নির্মল বায়ু নিতে পারছি না আমরা। সবমিলিয়ে মানবজীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। এভাবে চলতে থাকলে পুরো পৃথিবী এক ভয়ানক দুর্বিপাকে পড়ে যাবে।

প্রকৃতির ভারসম্য রক্ষার অন্যতম উপাদান গাছ। আমরা প্রয়োজনে – অপ্রয়োজনে গাছ কর্তন করছি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, আবাসন,কলকারখানা নির্মাণের নামে নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে যেখানে ২৫ ভাগ বন থাকার কথা সেখানে আছে ১৭ ভাগ।এর ফলে অক্সিজেনের সংকট হচ্ছে। বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। বন্যপ্রাণী তাদের আবাসস্থলে থাকতে না পারলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। বন যেমন অক্সিজেন সরবরাহ করে তেমনি দূষিত কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নেয়। যা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করে।

গ্রীনহাউজ গ্যাস যেমন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন,নাইট্রাস অক্সাইড বায়ুমন্ডলে অবস্থান করে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে।যার ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে।বরফ গলে সমুদ্রের পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। সাগরের পানি বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করছে। উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে।বন্যা,জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, দাবানল,খরা,ধুলিঝড়, ভূমিধ্বস ও ভূমিকম্প ইত্যাদি জলবায়ু পরিবর্তনেরই ফল।জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে বিভিন্ন দেশে  জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, দাবানল,ভূমিধস,ধুলিঝড়ের আবির্ভাব ঘটছে।

কানাডায় ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে। যারফলে দাবানলে পুড়ে গেছে অনেক জায়গা। পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজন পুড়েছে বারবার। চীন,জাপান,ভারতে দেখা দিয়েছে বন্যা।চীনে ৩০০ ফুট উপরে উঠেছে ধুলিঝড়। সবকিছুই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হচ্ছে। ২০০৭ সালে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেলে বলা হয়েছিল,২০৫০ সালের মধ্যে বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা এক মিটার পর্যন্ত বাড়বে।এর ফলে মালদ্বীপ নামক দেশটা পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাবে।এমনকি বাংলাদেশের উপকূলের ১৭ শতাংশ  ভূমি চলে যাবে সমুদ্রগর্ভে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে বাড়ছে লবণাক্ততা। সংকট দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির।

প্রকৃতিকে ভালবেসে তাকে সংরক্ষণ করতে হবে। তাহলে আমরা প্রকৃতিতে শান্তিতে বসবাস করতে পারবো। প্রকৃতি ও মানুষ অবিচ্ছেদ্য।তাই প্রকৃতিকে ভালোবাসতে না জানলে  কখনো প্রকৃতির সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যাবে না। প্রকৃতির অসুস্থতা মানুষের অসুস্থতার শামিল। প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও শিক্ষা। আমাদের অনেকেরই পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা নেই। সচেতনতার অভাব সর্বত্র। তরুণরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের মাঝে প্রকৃতি ও পরিবেশ শিক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্টি করা অতিব জরুরি। তাই প্রকৃতি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো সচেতনতা, প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হলেই  সুন্দর প্রকৃতির বাস্তবায়ন হবে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ