শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ১ নভেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » পাইকগাছায় নার্সারীতে উৎপাদিত তালের চারার চাহিদা বাড়ছে
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » পাইকগাছায় নার্সারীতে উৎপাদিত তালের চারার চাহিদা বাড়ছে
২৪১ বার পঠিত
বুধবার ● ১ নভেম্বর ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পাইকগাছায় নার্সারীতে উৎপাদিত তালের চারার চাহিদা বাড়ছে

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছা বানিজ্যিক ভিত্তিতে নার্সারীতে তালের চারা উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তালের চারার চাহিদা বাড়ায় নার্সারীগুলিতে প্রচুর পরিমাণ চারা তৈরি করা হচ্ছে। পাইকগাছার সততা নার্সারীতে গত মৌসুমে প্রায় ৮০ হাজার তালের চারা তৈরীর পরিচর্যা চলছে।চলতি মৌসুমে মায়ের দোয়া নার্সারীতে প্রায ৩২ হাজার চারা তৈরির প্রস্তুতি চলছে।

তাল গাছ প্রকৃতির বন্ধু ও প্রাকৃতিক ভারসম্য রক্ষাকারী বৃক্ষ। তালগাছ পরিবেশ বান্ধব ও বজ্রপাত থেকে রক্ষাকারী গাছ। তালগাছ ভুমির ক্ষয়রোধ ও পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।তাই তালের চারা রোপন করা হচ্ছে প্রচুর পরিমানে।

তাল একটি অতি প্রাচীন ফল। একক কান্ড বিশিষ্ট এদেশে অতি পরিচিত একটি বৃক্ষ। এর কান্ড সোজা এবং চমৎকার আকৃতির পাতাগুলো পাখার মত গোলাকার। তালের জন্মস্থান মধ্য আফ্রিকা বলে ধারণা হলেও অনেকে বলেন এটি আমাদের উপ-মহাদেশীয় বৃক্ষ। তালের পত্রে অনেক উচু শিরা আছে। শিরাগুলো পত্রদন্ডের গোড়া হতে অগ্রভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত, পত্রের কিনারা কাঁটার মত। পত্রদন্ডের উভয় কিনারায় করাতের মত কালবর্ণের দাঁত আছে। পুরুষ ও স্ত্রী আলাদা গাছ উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের সব এলাকায় কমবেশী তাল উৎপাদন হলেও ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, রাজশাহী ও খুলনা এলাকায় সবচেয়ে বেশী উৎপাদন হয়। তালের কোন অনুমেদিত জাত নেই। তবে এদেশে বিভিন্ন আকার ও রংয়ের তাল দেখা যায়। আবার কোন কোন তাল গাছের বারমাসই কমবেশী তাল ধরে থাকে।

প্রায় সব ধরনের মাটিতেই তাল ফসলের আবাদ করা যায়। তবে উঁচুজমিতে এবং ভারী মাটি ইহা চাষের জন্য বেশী উপযোগী। এদেশে বাগান আকারে কোন তাল ফসলের আবাদ নেই। আগষ্ট মাস থেকে তাল পাকতে শুরু করে এবং অক্টোবর মাস পর্যন্ত পাকা তাল পাওয়া যায়। ভালো তাল বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরী করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নির্বাচিত মাতৃবৃক্ষ হতে তালের বীজ সংগ্রহ করা উচিত।---

দুই ভাবে তাল গাছ লাগানো যায়। একটি পদ্বতি হলো সরাসরি বীজ বপন করে অথবা বীজতলায় চারা উৎপাদন করে চারা রোপনের মাধ্যমে এর আবাদ করা যায়। ভাদ্র হতে কার্তিক মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। সারি থেকে সারি ৭ মিটার এবং চাবা থেকে চারা ৭ মিটার বীজের মাধ্যমে তালের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে।

পাইকগাছার গদাইপুরে সততা নার্সারীতে তালের চারা তৈরীর জন্য গত বছর দেড় লাখ তাল বীজ বপন করা হয়। মাটির ২ ফুট উঁচু বেড তৈরী করে তালের বীজ বপন করা হয়। অংকুরিত বীজ মাটির নিচের দিকে বাড়তে থাকে। চলতি মৌসুমে মাটি খুড়ে বীজপত্র তুলে চটের তৈরী পলিব্যাগে রোপন করে চারা তৈরীর পরিচর্যা করা হচ্ছে। সততা নার্সারীর মালিক অশোক কুমার পাল জানান, বানিজ্যিক ভিত্তিতে তালের চারা উৎপদন করছে। গত বছর দেড় লাখ তালবীজ থেকে ৮০ হাজার তালের অংকুরিত বীজ রোপনসহ আনুসাঙ্গিক খরচ হয়েছে ৯ লক্ষ টাকা। এখনো চারা তৈরীর পরিচর্যার কাজ চলছে। মায়ের দোয়া নার্সারীর মালিক মো: ইউছুপ গাজী জানান, প্রায ৩২ হাজার চারা তৈরির প্রস্তুতি চলছে।২৫ হাজার চারা টিকতে পারে, সব আটি থেকে চারা বের হয় না। চারা তৈরি করতে তার প্রায ছয় লাথ টাকা খরচ হচ্ছে। উৎপাদিত তালের চারার প্রায় ১২ থেকে ১৪ লাথ টাকা বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। চট্রগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নার্সারী, এনজিও ও সরকারি ভাবে তালের চারা ক্রয়ের জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হযেছে। তাছাড়া উৎপাদিত তালের চারা সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বানিজ্যিক ভিত্তিতে বিক্রি করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

তার নার্সারীতে তাল বীজতলা তৈরীর পর সবসময় ভিজিয়ে রাখা হচ্ছে। ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যেই বীজ অংকুরিত হতে শুরু করবে। বীজ অংকুরোদগমের সময় বীজপত্রের যে আবরণী বের হয়ে আসে তা দেখতে শিকড়ের মত কিন্তু আসলে তা শিকড় নয়। এই বীজপত্রের আবরণীর মাঝে ফাঁপা থাকে, অগ্রভাগে ভ্রূণ অবস্থান করে এবং টিউবের আকৃতিতে বৃদ্ধি পায়। হলদে রং-এর জার্মটিউবের অগ্রভাগে ভ্রূণ আবৃত থাকে এবং তা সাধারণত মাটির নীচের দিকে বৃদ্ধি পায়।

জার্মটিউব লম্বা হবার পরেই ভ্রূণের কান্ডের আবরণী এবং ভ্রূণ মূলের আবরণী-এর বৃদ্ধি শুরু হয়। জার্মটিউবের মতো ১৫-৪০ সে. মি. লম্বা হয়ে থাকে। জার্মটিউব লম্বা হবার ১০-১৫ সপ্তাহের মধ্যে একটি পাতলা আবরণীতে পরিণত হয়। এ অবস্থায় চারায় কেবল ১টি শিকড় থাকে। চারার গোড়া ও শিকড়ের গা হতে ছোট ছোট অনু শিকড়ও গজাতে শুরু করে। মৌসুমী বৃষ্টিপাত আরম্ভ হওয়ার পরপরই পলিব্যাগে উত্তোলিত ৩০-৩৫ সে. মি. লম্বা পাতা বিশিষ্ট চারা মাঠে রোপন করা হবে। তবে মাটিতে প্রচুর পরিমাণে আর্দ্রতা থাকলে অথবা পানি সেচের ব্যবস্থা থাকলে চারা এপ্রিল- মে মাস পর্যন্ত লাগানো যেতে পারে। চারা রোপণের পর অন্তত প্রথম তিন বছর রোগ- বালাই ও কীট -পতঙ্গের আক্রমণের হাত হতে চারা রক্ষা করা আবশ্যাক। এ বিষয় উপজেলা কুষি অফিসার কুষিবিদ অসিম কুমার দাশ বলেন, তালের চারা তৈরি করে নার্সারী মালিকরা যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি তালের চারার গুরুত্ব সম্পর্কে সাধারণ জানতে পারছে।তালগাছ বজ্রপাত রোধক বৃক্ষ।কৃষকরা বজ্রপাতে বেশী আক্রান্ত হয়, তাদের খোলা মাঠে কাজ করেতে হয় তাই বজ্রপাতে কৃষক বেশী মারা যায়। রাস্তার পাশে ও থোলা মাঠের উচু স্থানে সরকারি ভাবে ও কৃষি অফিস থেকে তাল বীজ ও চারা রোপন করা হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষকদের তালের চারা রোপন করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)