শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
শনিবার ● ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বন্যপ্রাণী প্রকৃতির বন্ধু
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বন্যপ্রাণী প্রকৃতির বন্ধু
৯৪ বার পঠিত
শনিবার ● ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বন্যপ্রাণী প্রকৃতির বন্ধু

--- প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী।মানুষের লোভের কারণে বনভূমি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বন্ধু বন্যপ্রাণী। ফলে প্রকৃতি হারাচ্ছে ভারসাম্য। মানুষ ও বৈরী প্রকৃতি,বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থল ধ্বংস, খাদ্যাভাব এবং অবৈধ শিকারের কারণে দিন দিন বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া তালিকায় দীর্ঘ হচ্ছে বিপন্ন বন্যপ্রাণীর নাম। এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ১৩ প্রজাতির মেরুদন্ডী প্রাণী। 

৩ মার্চ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। বিশ্বের বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদকুল সংরক্ষণের প্রতি গণসচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস দিবস পালিত হয়ে থাকে।বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদদের রক্ষার্থের আলোচনা সভা  ও নানা রকম পদক্ষেপ পালিত হয় দিবসটি। ২০১৪ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো প্রতি বছরের ৩ মার্চ এ দিবসটি পালন করে আসছে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এই দিবসের ঘোষণা করা হয়।

২০১৪ সালে প্রথম বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসটি পালন করা হয়। জাতিসংঘভূক্ত দেশগুলো এ দিবসটি পালন করে থাকে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ৬৮তম সাধারণ অধিবেশনে ৩ মার্চকে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিশ্বের বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদকূলের প্রতি গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা এই দিবসের মূল লক্ষ্য। পরিবেশগত, জিনতাত্ত্বিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, শিক্ষা বিষয়ক, সাংস্কৃতিক, বিনোদনমূলক এবং নান্দনিক বিষয়ের সাথে যুগসই উন্নয়ন ও মানব কল্যাণের দিকে গুরুত্বরোপ করা হয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত বিবরণীতে, বন্যপ্রাণীদের অপরিহার্য মূল্য এবং বিভিন্ন অবদানের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়। এতে পরিবেশগত, জিনতাত্ত্বিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, শিক্ষাবিষয়ক, সাংস্কৃতিক, বিনোদনমূলক এবং নান্দনিক বিষয়ের সাথে যুগসই উন্নয়ন এবং মানবকল্যাণের দিকে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বিশ্বের বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদকূলের প্রতি গণসচেতনতা গড়ে তোলা, এবং সিআইটিইএস-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকার করা বলা হয় আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য যাতে বন্য প্রজাতিদের টিকে থাকতে হুমকি হয়ে না দাঁড়ায় তা নিশ্চিত করতে হবে।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৭০ সাল থেকে বিশ্বে এখন পর্যন্ত বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের ভূখন্ড থেকে হারিয়ে গেছে ৩১ প্রজাতির প্রাণী। এছাড়াও দেশে অন্তত ২১৯ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিপন্ন। এই তালিকায় আছে উভচর সরীসৃপ ও পাখি ছাড়াও স্তন্যপায়ী প্রাণী। বন বিভাগের এক হিসেবে ৪২ প্রজাতির উভচরের মধ্যে বর্তমানে ৮টি, ১৫৮টি প্রজাতির সরীসৃপের মধ্যে ৬৩টি, ৭৩৬টি প্রজাতির পাখির মধ্যে ৪৭টি, ১২৪টি স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে ৪৩টির অস্তিত্ব হুমকির মুখে আছে।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভবন নয়নাভিরাম সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার এর মধ্যে বাংলাদেশে সুন্দরবনের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বনভূমি চার হাজার ৮৩২ এবং জলাভূমি এক হাজার ১৮৫ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবনের ৪৫০টি ছোট-বড় নদী ও খাল রয়েছে। এই বনভূমি ও জলাভূমিতে বাস করে ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ ও ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী। সারাদেশে মেরুদন্ডী ও অমেরুদন্ডী প্রাণির আনুমানিক মোট প্রজাতি ১১হাজার ৮শত এর মধ্যে সুন্দরবনে রয়েছে ২ হাজার ২শত। সারাদেশে চিহ্নিত প্রজাতির সংখ্যা ৭ হাজার ৯৭০। ২০১৮ সালে করা সর্বশেষ শুমারিতে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪। সুন্দরবনের অনেক বন্যপ্রাণীই এখন ভালো নেই। বাঘ শিকার কমলেও থেমে নেই হরিণ শিকার। ইতোপূর্বে বন থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে গন্ডার, বনমহিষ, মিঠা পানির কুমির, এক প্রজাতির হরিণ, চিতা বাঘ ও চার প্রজাতির পাখি। জেলেদের জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে ডলফিন, শুশুক, কুমিরের বাচ্চা ও বিরল প্রজাতির কচ্ছপ। জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর মানুষের নানা অত্যাচারে কয়েক প্রজাতির প্রাণী এখন সংকটাপন্ন। বনের নদী-খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে মাছ ও কাঁকড়ার ওপর। বিলপ্ত হতে চলেছে ১৯ প্রকার মাছ। সুন্দরবনে গত ১৯ বছরে ৩১ বার আগুন লাগায় পুড়ে গেছে প্রায় ১০০ একর বনভূমি। এসব অগ্নিকাণ্ডে একরের পর একর বনভূমির গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়েছে। মারা গেছে বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু। পাশাপাশি আবাসস্থল হারিয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী।বন্যপ্রাণীরা নিজেদের বনেও নিরাপদ নয়।

বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকার বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে নানাভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছে। এমনকি সংবিধান এর-১৮(ক) অনুচ্ছেদে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’

পৃথিবীকে যান্ত্রিক আধুনিকতার ছোঁয়া যত স্পর্শ করছে, মানুষের মনের চাহিদা ততোধিক বৃদ্ধি পাচ্ছে।মানুষ তার নিজের স্বার্থে বনজ সম্পদ ধ্বংস করছে। আর এর ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। তারা শুধু নিজেদের বাসস্থানই হারাচ্ছে তা নয়, এর সঙ্গে তারা চরম খাদ্য সংকটে মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে প্রবেশ করে এ সমস্ত বন্যপ্রাণীরা মানুষের হাতে প্রাণ হারাচ্ছে। তাছাড়া কিছু অসাধু ব্যক্তি বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে বন্যপ্রাণী ও পাখি শিকার করছে। বিগত কয়েক বছর ধরে বনভূমির সংখ্যা কমতে থাকায় বন্যপ্রাণীরা অজান্তেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, বনের বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণেও বন্যপ্রাণীরা বিলুপ্তির পথে।

মানুষের খাদ্য, বস্ত্র ও ওষুধ- এই প্রধান তিনটি প্রয়োজনীয় উপাদান জীববৈচিত্র্য থেকে আসে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, বনভূমি ধ্বংস, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যই হুমকির সম্মুখীন। তাই বিশ্ব জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।বন্যপ্রাণী সম্পর্কে নিজেদের সচেতন হতে হবে এবং তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেও যত্নবান হতে হবে ।আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যাতে বন্য প্রজাতিদের জন্য হুমকি হয়ে না সে জন্য পশু শিকার বা পাঁচারকারিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে হবে। সেজন্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি সরকারেরকে বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় কাজ করতে হবে। তাহলে বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদকুল রক্ষা করা সম্ভব।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)