

মঙ্গলবার ● ১৫ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » জলবায়ু পরিবর্তনে সমস্যা বাড়ছে পাইকগাছায় ; জন জীবনে পড়েছে প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তনে সমস্যা বাড়ছে পাইকগাছায় ; জন জীবনে পড়েছে প্রভাব
প্রকাশ ঘোষ বিধান ;
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বসবাস করছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় পাইকগাছা এলাকার মানুষ। সেই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে তাদের জীবন ও জীবিকা। লবণাক্ততার কারণে কৃষক তার জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন না, হালের পশু ও অন্যান্য গৃহপালিত পশুর খাদ্যের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে উপকূলের চাষযোগ্য জমি হারাচ্ছে ঊর্বরতা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূল অঞ্চলের মানুষের সুরক্ষা নির্বাহ করে উপকূলীয় বেড়ীবাঁধের উপরে। দূর্যোগে এই বাঁধ তাদের ভরসার একমাত্র স্থল। তবে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে উপকূলীয় জনপদে বসবাসকারী জনসাধারণ। এখন দুর্বল বেড়িবাঁধ ও বাঁধের উচ্চতা কমে যাওয়ার কারণে সাগরে জোয়ারের পানির চাপ বাড়লেই উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। বাঁধগুলো এতেটাই নাজুক পয়ে পড়েছে যে ঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাস নয় এখন জোয়ারের পানির চাপেই ভেসে যায়। আবার অতি বৃষ্টি হলেও বাঁধ ধসে যায়। অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষের জন্য লবণপানি ঢোকানোর জন্য যত্রতত্র বাঁধের ভেতরে ছিদ্র করা বা পাইপ বসানোর ফলে বাধগুলো ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। তাছাড়া পানি নিস্কাশনের জন্য বিভিন্ন পোল্ডারে নির্মিত জলকপাট বা স্লুইস গেইট অকেজো ও পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে উপকূলবাসীর সারাক্ষণ শঙ্কা থাকে কখন আবার বাঁধ ভেঙে নোনা পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে চিংড়ি ঘের, পুকুরের মাছ, ফসল আর বসতি। যোগায়োগের কাঁচা-পাকা রাস্তা ভেঙ্গে বিধ্বস্ত হচ্ছে, যানবাহনসহ সাধারণ মানুষের চলাচল ব্যাহত হয়। তাছাড়া খুলনা-ঢাকাসহ সারাদেশের সাথে যোগাযোগের একমাত্র প্রধান সড়কের ঝুকিপূর্ণ মোড় সরলীকরণ ও ভাঙ্গা স্থান সংস্কার না হওয়ায় সড়ক দূর্ঘটনা বাড়ছে। আর রাস্তার পাশে মাটি না দেওয়ায় চালকরা যেমন ঝুকি নিয়ে গাড়ী চালাছে তেমনি পথচারিরাও থাকে দূর্ঘটনা আতঙ্কে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে উপকূলে। এতে সহায়-সম্পদ হারানোর পাশাপাশি সুপেয় পানির সংকট, চিকিৎসার অভাব, নারী-শিশুদের নিরাপত্তাহীনতা জীবনযাত্রা ও পরিবেশকে বিষিয়ে তুলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি কমে গেছে। সময়মত বৃষ্টি হচ্ছে না। খরা, ঝড়, বৃষ্টি ও নদীভাঙন আমাদের নিত্যসঙ্গী। এক দিকে কপোতাক্ষ নদের বোয়ালিয়া,রাড়ুলী,আগড়ঘাটা, দেলুটি, সোলাদানা ও গড়ুইখালী এলাকার নদী ভাঙছে অন্য দিকে শিবসা নদী ভরাট হয়ে গেছে। কয়েক বছরে মাটিতে বেড়েছে লবণাক্ততা। দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন ঘটায় পাইকগাছায় নদী ভাঙ্গন, বন্যা, খরা ও জলাবদ্ধতার পাশাপাশি মাটি ও পানির লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। এতে ক্রমেই ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে উপকূলে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে জনপদ তলিয়ে যাচ্ছে। এতে সহায়-সম্পদ হারানোর পাশাপাশি সুপেয় পানির সংকট, চিকিৎসার অভাব, নারী-শিশুদের নিরাপত্তাহীনতা জীবনযাত্রা ও পরিবেশকে বিষিয়ে তুলেছে। দুর্যোগ ও ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবের উপকূলীয় পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির সংকট তীব্র হয়। নষ্ট হয়ে যায় সুপেয় পানির উৎস। সুপেয় পানির জন্য তাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় নারীরা সহজে স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পান না। নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে। পুষ্টিহীনতা, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া ও তাপমাত্রাজনিত শারীরিক জটিলতায় ভুগছে। একারণে প্রতিনিয়ত এই অঞ্চলের মানুষকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে স্বাস্থ্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায়।
বছরের বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট নদীভাঙনে গত কয়েক বছরে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বহু কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব পড়ছে পাইকগাছা এলাকায়। ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা ও মাটির লবণাক্ততা উপকূলের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীতের সময় অধিক শীত, গ্রীষ্মে প্রচন্ড গরম এবং বর্ষায় অতিবৃষ্টির ফলে দুর্ভোগ বাড়ছে। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাসে নদীভাঙনে এসব এলাকার বহু মানুষ উদ্বাস্ত হচ্ছে। এতে সহায়-সম্বল হারিয়ে বাসস্থান ছেড়েছেন অনেক মানুষ।
লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট