শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

SW News24
শনিবার ● ৩ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » সমর ও শান্তিতে রেড ক্রস-রেড ক্রিসেন্টে
প্রথম পাতা » মুক্তমত » সমর ও শান্তিতে রেড ক্রস-রেড ক্রিসেন্টে
৬০ বার পঠিত
শনিবার ● ৩ মে ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সমর ও শান্তিতে রেড ক্রস-রেড ক্রিসেন্টে

---   প্রকাশ ঘোষ বিধান

রেডক্রস বা রেড ক্রিসেন্ট এমন একটি মানবিক সংস্থা তারা সমর ও শান্তিতে যে কোনো দুর্যোগে দুর্ঘটনা কবলিত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়। ৮ মে বিশ্ব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস। ১৮২৮ সালের এই দিনে রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হেনরী ডুনান্ট সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১০ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর জন্মদিন ৮মে বিশ্ব রেডক্রস-রেড ক্রিসেন্ট দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়। এই মহান ব্যক্তিকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করার জন্য প্রতিবছর তার জন্মদিনটিকে বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করা হয়।

যুদ্ধে কাতর দুস্থদের সেবার উদ্দেশ্যে ১৮৬৩ সালে রেডক্রস বা রেড ক্রিসেন্টের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এর সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত। রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের কিছু মূলনীতি রয়েছে। সাতটি মূলনীতির মধ্যে রয়েছে মানবতা, পক্ষপাতহীনতা, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা, স্বেচ্ছামূলক সেবা, একতা ও সর্বজনীনতা।

১৮৫৯ সালের ২৪শে জুন ইতালির সালফেরিনো নামক স্থানে ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা ব্যাপী এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেই যুদ্ধে হতাহত হয় প্রায় ৪০ হাজার সৈন্য। যাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। তখন ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে সেই পথ ধরে ফ্রান্সে যাচ্ছিলেন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক জিন হেনরি ডুনান্ট। যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের ছটফট করতে দেখে তিনি খুবই ব্যাথিত হন এবং আশেপাশের গ্রামবাসীকে ডেকে এনে আহতদের প্রাথমিক সেবা দিয়ে জীবন রক্ষায় সাহায্য করেন। সে সময় প্রাথমিক চিকিৎসা দানকারী স্বেচ্ছাসেবকদের অধিকাংশই ছিলেন নারী। তিনি এমন একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট গড়ে তোলেন যারা শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে আহতদের সেবা করবে।

রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে জাতীয় সহযোগী মানবিক সংস্থা। যুদ্ধের সময় আহতদের যত্ন নেওয়ার জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, পরবর্তীতে সাধারণভাবে মানুষের দুর্দশা প্রতিরোধ এবং ত্রাণে সহায়তা করার জন্য জাতীয় রেড ক্রস সমিতি তৈরি করা হয়েছিল। শান্তিকালীন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসা, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, জল সুরক্ষা, নার্সদের সহায়তাকারী এবং মায়েদের সহকারীদের প্রশিক্ষণ, এবং মাতৃ ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং চিকিৎসা ক্লিনিক, ব্লাড ব্যাংক এবং অন্যান্য অসংখ্য পরিষেবা রক্ষণাবেক্ষণ। রেড ক্রস নামটি খ্রিস্টান পৃষ্ঠপোষকতার অধীনে দেশগুলিতে ব্যবহৃত হয়, অন্যদিকে রেড ক্রিসেন্ট মুসলিম দেশগুলিতে ব্যবহৃত নাম।

১৮৬৩ সালে ডুনান্টের প্রস্তাব অনুযায়ী জেনেভায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। ২৩ থেকে ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সেই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়, একটি সাদা কাপড়ের ওপর লাল যোগচিহ্নসংবলিত প্রতীক ব্যবহার করবে সংগঠন ও তার কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা। সম্মেলনে সংগঠন গঠন ও প্রতীকের উদ্ভাবক হেনরি ডুনান্টের রেড ক্রস চিহ্নটি গৃহীত হয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় আইসিআরসি। সর্বপ্রথম এই আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে রেডক্রস চিহ্ন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দুর্যোগ বা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতে রেডক্রসের সাহায্যকারী দলকে শনাক্ত করার জন্যই প্রতীক ব্যবহার করা হয়। পরবর্তী সময়ে মুসলিম দেশগুলো ক্রস চিহ্ন ব্যবহারে আপত্তি জানালে রেড ক্রিসেন্ট চিহ্নের ব্যবহার শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মুসলিম দেশ নিজ নিজ দেশের এ সংস্থার নাম পরিবর্তন করে রেড ক্রিসেন্ট নাম গ্রহণ করে। তবে উদ্দেশ্য ও আদর্শের দিক থেকে রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, একই সংস্থার দুটি প্রতীক মাত্র।

যুদ্ধকালে যুদ্ধাহত সৈন্য এবং তাদের সেবাদানকারী রেড ক্রস প্রতীকধারীদের নিরাপত্তার বিষয়কে সামনে রেখে ১৮৬৪ সালে জেনেভা সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলো চুক্তিবদ্ধ হয় যে, যুদ্ধকালে যুদ্ধাহত ও অসুস্থ সৈন্য এবং তাদের শুশ্রূষাকারী রেড ক্রস প্রতীকধারী ব্যক্তি, অ্যাম্বুলেন্স ও হাসপাতালকে নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করবে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। এ চুক্তিই ঐতিহাসিক জেনেভা কনভেনশন নামে পরিচিত। ফলে আইসিআরসি যুদ্ধাহতদের প্রতি মানবিক আচরণ নিশ্চিতকরণ, যুদ্ধবন্দি বিনিময়, রেড ক্রস-রেড ক্রিসেন্ট প্রতীকের সুরক্ষা, জেনেভা কনভেনশনের বিশ্বস্ত পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি ভূমিকা পালন করে থাকে।

১৯৭৩ সালের ৩১ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি আদেশ (পিও-২৬) জারি করেন। এ আদেশের বলে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি স্বীকৃতি লাভ করে। এরপর, ১৯৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তেহরানে রেড ক্রসের ২২তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি আন্তর্জাতিকভাবে পূর্ণ স্বীকৃতি লাভ করে। বাংলাদেশেও রেড ক্রস নাম পরিবর্তন করে রেড ক্রিসেন্ট নাম গ্রহণ করে। ১৯৮৮ সালে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলন বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯৭ মিলিয়ন স্বেচ্ছাসেবী, সদস্য ও কর্মী নিয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশে রেডক্রসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা ও সিটি করপোরেশনে রেড ক্রস-রেড ক্রিসেন্টের মোট ৬৮টি ইউনিট রয়েছে, যারা দেশের যে কোনো প্রয়োজনে সেবা দিতে প্রস্তুত। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল আহত ব্যক্তিকে স্বাধীনও নিরপেক্ষভাবে স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধকালে মানবিক সেবার লক্ষ্যে রেড ক্রস প্রতিষ্ঠিত হলেও কালের পরিবর্তনে সংস্থাটির সেবার ক্ষেত্র অনেক প্রসারিত হয়েছে। যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সংকট ও মহামারিতে রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট কর্মিরা নিঃস্বার্থভাবে নিজের কস্টের বিনিময় অন্যের মুখে হাসি ফুটিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের যেখানে অসহায় আর নিপীড়িত মানুষের আর্তনাদ আছে, সেখানে অবিরাম সেব প্রদান করে যাচ্ছে রেড ক্রস-রেড ক্রিসেন্টে। মানবতার সেবায় এ যেন এক অবিরাম যাত্রা।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)