

শুক্রবার ● ৯ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » কৃষি » মাগুরায় লিচুর ফলন বিপর্যয় ; ভালো দাম না পেয়ে বিপাকে চাষীরা
মাগুরায় লিচুর ফলন বিপর্যয় ; ভালো দাম না পেয়ে বিপাকে চাষীরা
শাহীন আলম তুহিন ,মাগুরা থেকে : মাগুরায় চলতি বছর আবহাওয়ার নানা প্রতিকুলার মাঝে জিআই পণ্য হিসেবে খ্যাত হাজরাপুরী লিচুর ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে । প্রতি বছর কোটি টাকার উপরে লিচু বিক্রি হয় বলে জানান চাষীরা । কিন্তু এবার তীব্র তাপদাহের কারণে লিচু ফলন বিপর্যয় হয়েছে । ফলে অনেক বাগানের লিচু পুড়ে ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । লিচুর রঙও ভালো নয় এতে বিপাকে পড়ছেন বাগান মালিক ও ব্যাপারিরা ।
প্রতি বছর সদরের হাজরাপুর, হাজীপুর, মির্জাপুর, মিঠাপুর, রাঘবদাইড়, ইছাখাদা,শিবরামপুর,নড়িহাড়ির এ এলাকাগুলো লিচুগ্রাম হিসেবে খ্যাত । সাধারণত বছরের মে মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত এ গ্রাম গুলোতে লিচুর বিভিন্ন বাগানে চলে লিচু সংগ্রহের কাজ। দেশের বিভিন্ন স্থানের মহাজন ও ব্যাপারীরা ৬ মাস আগে লিচু বাগান ক্রয় করে। তারপর মে মাসের শুরুতে লিচুর বাগানে লিচু ভাঙার কাজ শুরু হয়। শুক্রবার সরজমিন হাজীপুর,হাজরাপুর ,শিবরামপুর ও নড়ি হাড়ির বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে দেখা গেছে ,অধিকাংশ বাগানের লিচু পেকে লাল হয়ে গেছে। এবার লিচুর ফলন খুবই কম। তীব্র তাপদাহ ও অসময়ে বৃষ্টিপাতের ফলে অনেক গাছের লিচু ফেটে গেছে।
লিচু চাষীরা বলছে ,এবার লিচুর ফলই খুবই কম। অনেক বাগানে লিচু গাছে ফল নাই,দানা নেই তাই আমরা বিপাকে আছি। লিচু ফুল আসতেই আমরা বাগানে পরিচর্যা শুরু করি। গাছের চারপাশে পানি দেওয়াসহ ্রস্প্রে করা হয় প্রতিটি গাছে। অধিক পরিশ্রম হয় সারাদিন কিন্তু এবার লিচুর ফলন কম হওয়ায় আমাদের উৎপাদন খরচ উঠছে না । বিভিন্ন ব্যাপারিরা আসছে বাগান দেখছে কিন্তু ফল বেশি না থাকাতে তাদের পছন্দ হচ্ছে না।
হাজরাপুর গ্রামের লিচু চাষী খলিল শিকদার বলেন,আমার ৪টি লিচুর বাগান রয়েছে। এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকলেও তীব্র তাপদাহের কারণে লিচুর ফলন ভালো হয়নি। অনেক বাগানের লিচু ফেটে যাচ্ছে। রোদে পুড়ে রঙ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমরা লিচু ভাঙার কাজ করি। ব্যাপারীরা লিচু পরিপুষ্ট না হলে বাগান কিনতে চাই না । আবার রঙ,ফলন ভালো না হলে তারা লিচু ক্রয় করে না। আমার ৪টি লিচু বাগান এবার ৬ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছি । এবার লিচুর ফলন ভালো না থাকাতে আমরা বিপাকে আছি। গত বছর এ সময় আমার ৪টি বাগান ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে ছিলাম কিন্তু এবার মাথায় হাত।
ঢাকার লিচু ব্যাপারী সুজন মুন্সী বলেন,আমি প্রতি মাগুরার হাজরাপুরী লিচু ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠায় । এবার ৭-৮টি বাগান ক্রয় করেছি । অন্যান্য বারের তুলনায় এবার লিচুর ফলন ভালো হয়নি । সব বাগানেই লিচুর তেমন ফলন নাই । লিচুর গাছে ফল কম ,দানা নেই ও রঙ ভালো নয় । তাই এবার লিচু বাগান কিনে ভালো দাম পাচ্ছি না । মে মাসের শুরুতে বিভিন্ন বাগান থেকে লিচু ভাঙার কাজ শুরু করেছি । প্রতিটি বাগানে প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি লিচু গাছ রয়েছে কিন্তু অধিকাংশ গাছে লিচু নেই ,তীব্র রোদে লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে ফলে নষ্ট লিচু ক্রেতা কিনতে চাই না । প্রতিটি বাগানে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করছে । পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করছে । এবার আমার ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে । লিচুর ভালো ফলন বিপর্যয় হওয়ায় শঙ্কায় রয়েছি । শরিফুল নামে লিচুর অন্য মহাজন জানান, মাগুরার হাজরাপুরী লিচু কদর রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে । আমি লিচু ক্রয় করে ঢাকা,নারায়নগঞ্জ,সিলেট,ফরিদপুর,রাজবাড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠায় । এবার লিচুর ভালো ফলন না হওয়াতে আমরা উপযুক্ত দাম পাচ্ছি না।
লিচু নারী শ্রমিক রিক্তা,লিপিকা,রিনা জানায় ,আমরা প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বাগানে কাজ করি। এখানে প্রতিদিন আমাদের ৪শ’ টাকা ৫শ’ টাকা দেওয়া হয়। এক বাগান থেকে অন্য বাগানে গিয়ে লিচু সংগ্রহের কাজ করি আমরা। এবার লিচু ফলন ভালো না হওয়াতে রঙও ভালো হয়নি। প্রতিটি লিচুর ধোকায় ধোকায় নষ্ট ও পোড়া লিচুর সংখ্যা খুবই বেশি। পুরুষ লিচু শ্রমিক রনি ও আকরাম বলেন,আমরা লিচু ব্যাপারীদের কেনা বাগানে কাজ করি । প্রতিদিন ২ বাগানের লিচু ভাঙার কাজ চলে। সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আমরা প্রতিটি গাছে উঠে ডাল ভেঙে লিচু সংগ্রহ করি। জনপ্রতি শ্রমিক এ কাজে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা পেয়ে থাকে। এবার লিচু ফলন ভালো না হওয়াতে আমরা প্রতিটি গাছে ফল কম পাচ্ছি এতে বিপাকে পড়ছে বাগান মালিক ও লিচুর ব্যাপারিরা।