শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
মঙ্গলবার ● ৩০ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে পাওয়া সম্ভব
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে পাওয়া সম্ভব
৫০৯ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ৩০ আগস্ট ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে পাওয়া সম্ভব

---

ড. জি. এম. মনিরুজ্জামান কাজল

বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমান এক কিংবদন্তি নাম। ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এই মুক্তির সংগ্রামের একটি সুপরিকল্পিত দিক নির্দেশনা এবং যা ঐতিহাসিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এইদিন উত্তাল জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।” স্বাধীনতা সংগ্রামে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের পূর্ব ও পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং স্বাধীনতাকামী মহান ব্যক্তিদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বাংলাদেশ নামক দেশটির জন্ম দেয়। অথচ স্বাধীন এই দেশটির কিছু বিশ্বাসঘাতক ষড়যন্ত্র করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। এটি অত্যন্ত লজ্জাকর। বাঙালি জাতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নিকট আমরা চির ঋণী। অপরিশোধ্য এই ঋণ থেকে কখনোই পরিপূর্ণ মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। তথাপি আমরা যারা প্রজন্মের বাঙালি, তারা এই দায় হতে কিঞ্চিৎ মুক্ত হওয়ার জন্য কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। এ জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারলে হয়তো আমরা সামান্য কিছুটা হলেও ভবিষ্যতের ইতিহাসের নিকট দায়মুক্ত হতে পারবো। নি¤œলিখিত কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দেখানো যেতে পারে আমাদের মহান নেতার প্রতি নির্ভেজাল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

১. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের হত্যার খবর ১৬ আগস্ট বাংলাদেশের কোনো গণমাধ্যমে যথাযথ ভাবে প্রকাশিত হয়নি। এমনকি বিদেশি কোনো পত্রিকা বা সংবাদ মাধ্যমেও সরাসরি এ খবর প্রচারিত হয়নি। বরং খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠনই খবরের শিরোনাম হয়েছিলো। সেকালের এসব গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকগণ কারা এবং কি কারণেইবা তাঁরা সেদিন নিশ্চুপ ছিলেন তা অনুসন্ধান জরুরি। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবি হত্যাসহ সকল সাধারণ নারী-পুরুষের হত্যা ও নির্যাতনকারীর বিচার সম্পন্ন করা বাঙালি জাতির নিকট একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর জন্য দায়ী দেশি-বিদেশি ব্যক্তিকেও তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনা যেতে পারে।

২. ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য যুদ্ধ করে বাঙালি জাতি ভাষার স্বাধীনতা লাভ করে। পৃথিবীতে এই গৌরবময় অর্জন আর কোনো জাতির নেই। বঙ্গবন্ধু নতুন বাংলাদেশের সংবিধানে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছিলেন। বর্তমানেও সরকারি নির্দেশ অনুসারে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রয়োগের আদেশ জারি করা আছে। এই সরকারি আদেশ সুদৃঢ় এবং বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য। যেমন, প্রত্যক্ষ ভাবে অফিসিয়াল বাংলা ব্যবহারের পাশাপাশি দেশের চিকিসক কর্তৃক প্রদত্ত সেবনবিধিসহ ঔষধ ব্যবস্থাপত্র বাংলায় লেখা, ঔষধের প্যাকেটে বাংলায় নির্দিষ্ট ঔষধের নাম, প্রযোজ্যক্ষেত্রে সেবনবিধি ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখও বাংলায় লেখা যেতে পারে। এতে করে স্বল্প শিক্ষিত ব্যক্তিও সহজেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দিক নিদের্শনা পাবেন।

৩. শুধু আইন করে নয়, শিশুশ্রম বন্ধ করতেই হবে। শিক্ষা গ্রহণের অধিকার থেকে একটি শিশুও বাদ যাবে না। বার্ষিক বাজেটে শিক্ষাখাতের ব্যয় অপ্রতুল। যে বরাদ্দ পাওয়া যায় তা থেকে আবার ‘বিশেষ’ কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় নির্বাহ করা হয়ে থাকে। যেমন, দেশের ক্যাডেট কলেজ এবং সেনা কর্তৃক পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে সেনাখাতের জন্য বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠরত শিক্ষার্থীর ব্যয় নির্বাহ করা যায় কিনা তা ভেবে দেখা যেতে পারে।

৪. যত বড় নেতাই দেশের যে প্রান্তে নির্বাচনপূর্ব প্রচারণা বা যে কোনো সরকারি কাজে জনগণের নিকট পৌঁছান না কেন, তিনি সেখানে যাওয়ার পূর্বে দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিশুকে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবিবেচকের মতো দাঁড় করিয়ে রাখা অযৌক্তিক। এটি অত্যন্ত অমানবিক। বরং এজাতীয় ব্যক্তিবর্গের আগমনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শিশুদেরকে নিয়ে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে।

৫. বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও সুগঠিত নাগরিক পেতে সকল প্রকার মাদককে শুধু ‘না’ বলা নয়, সেখানে মাদকের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য আইন যথাযথ প্রয়োগ করা। তার পূর্বে পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে সন্তানকে সুশিক্ষা দান করা, নানামুখি সহশিক্ষাসহ বাঙালির সুস্থ সংস্কৃতির অনুশীলন করা জরুরি। শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্বে এবং পরে পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের জীবনের গল্প শোনানো ও বিজ্ঞানভিত্তিক মানসিকতা গড়ে তোলা; নৈতিক শিক্ষা দান করা; ভ্রমণ ও শিক্ষাভ্রমণের সুযোগ রাখা; তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব অত্যাবশ্যকীয় ভাবে পালন করতে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর শ্রেণীর তরুণ শিক্ষার্থীকে সেবামূলক স্বেচ্ছাশ্রমে উৎসাহিত করা আমাদের কর্তব্য।

৬. পরিবারে সন্তানের প্রতি ¯েœহশীল, বন্ধুসুলভ, কঠোর অথচ ভালোবাসাপূর্ণ শাসন রাখা দরকার। ধর্মনিরপেক্ষ এই রাষ্ট্রে যে সন্তান যে ধর্মেরই হোক না কেন, সে ধর্ম পালন বিষয়ে শিক্ষা দান করা। প্রত্যেকেরই সচেতন থাকতে হবে যেন তা উগ্র, জঙ্গি, জনবিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত, পশুবৃত্তিক হয়ে না ওঠে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবার কর্তৃক বন্ধু সম্পর্কে জানা ও নিজ সন্তানকে মিশতে দেওয়া, দুই পরিবারের মধ্যে নিয়মিত যাতায়াত বা যোগাযোগ রাখা, খেলাধূলার সুযোগ সৃষ্টি করা। খেয়াল রাখতে হবে যে, সন্তানের জীবনে যতোটুকু নিরাপত্তা প্রয়োজন তা যেন নিশ্চিত হয়ে ওঠে।

৭. একটি দেশে তার আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ছাত্রজীবনেই বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করা এবং প্রতি বছর তার অধীনেই রোপিত বৃক্ষটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব অর্পণ করা। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রজননসহ এদেরকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দান করা। এভাবে দেশের সকল প্রকার জাতীয় সম্পদের প্রতি প্রত্যেক নাগরিকের ভালোবাসা আরো নিবিড় করা যেতে পারে। দেশের সম্পদের সর্বোচ্চ যথাযথ ব্যবহার করা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব। পাশাপাশি ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি পর্যন্ত রাষ্ট্রের যে কোনো সম্পদের অপচয় রোধ করতে যথেষ্ট আন্তরিক হতে হবে। জাতীয় সম্পদ ও সম্পত্তি তা সে যে প্রকারেরই হোক না কেন, তা কোনো ব্যক্তি কর্তৃক হনন করার অর্থই হলো নিজেকে হত্যা করা।

৮. বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্যে পরিমাপে বা ওজনে কম না দেওয়া, কোনো প্রকার খাবারে ভেজাল না দেওয়া, ফল-মাছ-মাংস বা অন্য কোনো দ্রব্যে ফরমালিন (বিধি মোতাবেক প্রযোজ্য ক্ষেত্র ব্যতীত) ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে রোধ করা। যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বচ্ছ রাখাসহ ট্রাফিক জ্যাম কমাতে ভোক্তা ও প্রশাসন উভয় পক্ষেরই আন্তরিক হওয়া। পর্যায়ক্রমে গ্রাম ও শহরে যৌক্তিক নাগরিক সুবিধার ব্যবস্থা করা। বাধ্যতামূলক রাস্তা-ঘাট পরিচ্ছন্ন রাখা ও প্রত্যেকের আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে রাখা। রাস্তায় প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ব্যক্তি বা অসুবিধায় থাকা মানুষকে সাহায্যে এগিয়ে আসা। দেশের ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসবসহ বিশেষ উৎসবকে কেন্দ্র করে যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি না করা। দেশে অসৎ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নির্মূল করার পাশাপাশি সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা। এজাতীয় বিষয়গুলোর ব্যত্যয় ঘটলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনের অধীনে আনা, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি বা দোষী ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনা।

৯. উচ্চশিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্যন্ত যে শিক্ষানীতি প্রচলিত আছে, নির্দিষ্ট সময়ান্তে এর ব্যবহারিক দিক পর্যালোচনা করা। দূরদর্শী ভাবনাকে বিবেচনায় এনে বর্তমান শিক্ষানীতিতে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর ‘কুদরত-ই-ক্ষুদা’ শিক্ষা কমিশন কর্তৃক প্রণয়নকৃত সুপারিশ বাস্তবায়ন করা। লক্ষ রাখতে হবে যে, তা যেন কোনো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বা কোনো রাজনৈতিক কূটচালে পড়ে ভেঙ্গে না যায়। মনে রাখা দরকার, তথাকথিত পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির স্বৈর এবং আমলাতান্ত্রিক শোষণ ও নিপীড়ন থেকে আমাদেরকে মুক্ত করতেই বঙ্গবন্ধু তাঁর সম্পুর্ণ জীবন ও পরিবার উৎসর্গ করে গিয়েছেন। গুটিকয়েক ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে পুুঁজি করে তথা বঙ্গবন্ধুকে বিক্রি করে পাকিস্তানি মানসিকতা ধারণ করে স্বাধীন এই দেশটিতে রাজাকারি চিন্তা-চেতনার শেকড় গেড়ে তার বিস্তার ঘটাবে––এমনটা কখনোই হতে দেওয়া যাবে না।

১০. অসহায় মানুষের পাশে শুধু সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীই নয়, সাধ্যমতো সকলেরই এগিয়ে আসা প্রয়োজন। দেশের কোনো ব্যক্তি যত বড়ই রাজনীতিবিদ, অর্থ-ধন-সম্পদশালী, ক্ষমতাধর হউন না কেন, অসহায় ব্যক্তির পাশে এসে তার অসহায়ত্ব দূর করতে আন্তরিক হতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন আপনি যতবড়ই এমপি বা মন্ত্রী হোন না কেন, সেখানে আছে সাধারণ জনগণের সমর্থন এবং তাদের সম্পদ আপনার পিছনেই ব্যয় হয়। দেশে কালো টাকার পাহাড় কোন ভাবেই গড়তে দেওয়া যাবে না। যে কোনো উপায়ে কালো টাকা সাদা করার প্রশ্নই ওঠে না। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ‘কালো টাকা সাদা করা’––দেশে দুর্নীতি বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য এটি একটি সুযোগ ব্যতীত আর কিছুই না।

১১. শিশু একক বা যৌথ পরিবারে যে ধরনের পরিবেশেই বেড়ে উঠুক না কেন, এই পরিবারের উচিৎ তার শিশুর নিকট আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি জাতির গৌরবের ইতিহাস, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন-ইতিহাসসহ প্রভৃতি ব্যক্তিবর্গের সঠিক গল্প শোনানো। আরো প্রয়োজন, এক্ষেত্রে সকল পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দকেও আন্তরিক ভাবে এগিয়ে আসা। মনে রাখা যেতে পারে, শিক্ষার্থীর সিজিপিএ ৫ বা ‘এ’ প্লাস পাওয়া মানেই যথার্থ শিক্ষিত হওয়া নয়। বরং প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মাঝে অবশ্যই চিন্তা ও বোধের গভীরতা সৃষ্টি করা এবং ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দৃঢ় ভাবে সচেষ্ট থাকা। শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা বৃদ্ধির অনুশীলন ও কৌশলমূলক লক্ষ্যের প্রসংশনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা যেতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, সৃজনশীলতা অনুশীলনের যাবতীয় নোট বই বা গাইড বই বাজারে অহরহ পাওয়া যাচ্ছে––অচিরেই এজাতীয় প্রকাশনা বন্ধ করা প্রয়োজন।

১২. বাংলাদেশের সম্পদ নিতান্তই কম নয়। বাংলাদেশে বহু ধরনের পর্যটন শিল্প রয়েছে। আমাদের পর্যটন শিল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ অবস্থানে নেওয়া শুধু সদিচ্ছার ব্যাপার। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে  টেকসই করার পাশাপাশি তা আকর্ষণীয় ভাবে বহির্বিশ্বে পরিচিত করা যেতে পারে। এই শিল্পকে রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব। বছরের বিভিন্ন সময়ে অনাকাক্সিক্ষত যতো রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে তা যথাসর্বস্ব দিয়ে মোকাবেলা করা। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, থাইল্যান্ডের অতি ক্ষুদ্র অথচ আকর্ষণীয় ‘পাতায়া’ সমুদ্র সৈকত সে দেশের প্রধান অর্থনীতির অন্যতম নিয়ামক।

১৩. বাংলাদেশে বহুমুখি শিক্ষা ব্যবস্থা লক্ষণীয়। বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে একমুখি শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা গেলে তা ভালো হতে পারতো। এটি না হলেও অন্তত একটি নির্দিষ্ট শ্রেণী পর্যন্ত একমুখি শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। সকলের জন্য এই ব্যবস্থা থাকলে জীবনের শুরুতেই সকল জনগোষ্ঠীর ভিত্তিমূল এক এবং অভিন্ন মানসিকতায় তাদেরকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। অপরদিকে একটি শিক্ষানীতি তৈরি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ শিক্ষার্থীকে কারিগরি শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে বন্ধুসুলভ দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থাপনের ব্যবস্থাও করা যায়। আবার বিদেশে প্রেরীত এই মূল্যবান জনসম্পদ যখন তাদের কাজের মেয়াদ শেষে দেশে ফিরে আসবে পূর্বাপর তাদের সঠিক পরিসংখ্যান রাখতে হবে। এবং বিদেশফেরত কারিগরি বিষয়ে অভিজ্ঞ, সুগঠিত ও দক্ষ এই জনসম্পদকে হেলায় নষ্ট না করে জাতীয় উন্নতিতে সম্পৃক্ত করতে পারলে অধিকতর লাভবান হওয়া সম্ভব।

১৪. প্রতিটি অফিস-আদালত বা সকল শ্রেণীর প্রতিষ্ঠানে প্রত্যেক স্তরের পেশাজীবীর নির্দিষ্ট সময়ান্তে তার ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া। সরকারি/বেসরকারি/সায়ত্তশাসিত যে ধরনেরই প্রতিষ্ঠান হোক না কেন, কোনো অফিসেই যেন অহেতুক অজুহাত দেখিয়ে অযৌক্তিক ভাবে কোনো টেবিলে কোনো ফাইল পড়ে না থাকে সেদিকে সুদৃষ্টি রাখতে হবে। তাছাড়া কোনো কাজকেই কঠিন বা জটিল না করে তা সকলেরই সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে সহজ করতে পারলে তা আরো ভালো হবে এমনটা আশা করা যায়।

১৫. গবেষণা, শিক্ষাগবেষণা, প্রশিক্ষণ বা উচ্চ শিক্ষার্থে দেশে-বিদেশে উদ্বুদ্ধ করা। এ পর্যায়ের শিক্ষার্থীর অনুকূলে সহজ ও যৌক্তিক শর্ত রাখা যায়। তবে বিদেশে অর্জিত জ্ঞান যদি দেশের স্বার্থে জরুরি হয়, তবে কোনো ভাবেই কালক্ষেপণ না করে উক্ত অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলক ও দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা যায়। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অন্তর্ভুক্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার অবাধ সুযোগ সৃষ্টি করা এবং এজন্য বিভিন্ন মেয়াদে বিশেষ ভাবে অর্থ বরাদ্দ করা গেলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারের নিকট আরো বেশি আন্তরিকতা প্রত্যাশা করা অযৌক্তিক নয়।

১৬. সুশিক্ষা ব্যতীত একটি দেশের উন্নয়ন ব্যর্থ। তাই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাতে যে পরিমাণ শিক্ষক থাকা আবশ্যক তার ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এজন্য দেশপ্রেমিক মেধাবীদেরকে সেসব ক্ষেত্রে নিয়োগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুশিক্ষা যেমন জরুরি, তেমনি অত্যাবশ্যকীয় ভাবে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের পিতা-মাতার পরেই শিক্ষার্থীর নিকট শিক্ষকই দ্বিতীয় অভিভাবক। তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বোধগম্য সুশিক্ষা বিনিময়, সুসম্পর্ক এবং সুন্দর ভাবনাগুলো শিক্ষার্থীর জীবনকে আমূল বদলে দিতে পারে। এভাবে সকল প্রকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত সমাজ গড়তে শিক্ষার্থীকে রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ নাগরিকে পরিণত হতে হবে।

১৭. সুষ্ঠু এবং সুস্থ সংস্কৃতির চর্চাই হতে পারে আদর্শ নাগরিক ও সুন্দর দেশ তৈরির অন্যতম অবলম্বন। বাঙালি সংস্কৃতির যথাযথ চর্চা এক্ষেত্রে অনেকাংশেই আশানুরূপ ফল আনতে পারে। আমরা জানি, বঙ্গবন্ধু শুধু একজন রাজনীতিক নন, তিনি মনেপ্রাণে পরিপূর্ণ সংস্কৃতিপ্রেমিক ছিলেন।

উল্লিখিত কতিপয় বিষয়াদি ব্যতীত আরো নানান মাত্রার নিয়ামক অনুসরণ করা যেতে পারে। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া আমরা প্রত্যেক ব্যক্তি মাত্রই মনেপ্রাণে আন্তরিক ভাবে সহজেই এজাতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারি। ব্যক্তিজীবন বা রাষ্ট্রিক জীবনে আমরা যদি এসব সহজে গ্রহণ ও লালন-পালন করতে সচেষ্ট হই, তবেই সুস্থ জীবন দাবি করা সম্ভব। অন্যথায় এদেশের নাগরিকত্ব ধারণ করায় কোনো বিশেষত্ব নেই। অভিন্ন এসব বিষয় পালন করতে পারলে এরই মধ্যে অবস্থান নিবে জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা প্রদর্শন। বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি সত্যিই অবিসংবাদিত মহান নেতা এবং যিনি পৃথিবীতে অবিস্মরণীয় এক ব্যক্তিত্ব। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর জীবন ইতিহাসের অপর নাম বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের ইতিহাস। বাঙালি জাতিসত্তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও সংগ্রাম অতুলনীয়। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের অবিস্মরণীয় দান আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করা প্রত্যেক বাঙালির মাঝে যেন এমন মানসিকতা জেগে ওঠে, প্রতিদিন বুক ভরা ভালোবাসা, গভীর দরদ মাখানো শ্রদ্ধায় দিনে অন্তত একবার যেন কায়মনচিত্তে আমাদের জাতীয় পতাকাকে সালাম জানাতে পারি। এই ভালোবাসাই হলো বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসা। এই ভালোবাসাতেই তাঁর আত্মা শান্তি পাবে। এভাবে প্রিয় বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকবেন বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রত্যেক বাঙালির হৃদয়ে।

লেখক ঃ সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা।

ঊ-সধরষ: শুষনফ@ুধযড়ড়.পড়স





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)