শিরোনাম:
পাইকগাছা, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২

SW News24
রবিবার ● ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা, মানসিক চিকিৎসা ও শাস্তির ব্যবস্থা প্রয়োজন
প্রথম পাতা » মুক্তমত » আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা, মানসিক চিকিৎসা ও শাস্তির ব্যবস্থা প্রয়োজন
২৫ বার পঠিত
রবিবার ● ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা, মানসিক চিকিৎসা ও শাস্তির ব্যবস্থা প্রয়োজন

--- প্রকাশ ঘোষ বিধান

আত্মহত্যা বা আত্মহনন হচ্ছে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশ করা।  ল্যাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে হত্যা করা। যখন কেউ আত্মহত্যা করেন, তখন মানুষ এ প্রক্রিয়াকে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করা হয়।

প্রতিবছর প্রায় আট লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এর মতে প্রতি বছর সারা বিশ্বে যে সব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে আত্মহত্যা ত্রয়োদশতম প্রধান কারণ। কিশোর-কিশোরী আর যাদের বয়স পঁয়ত্রিশ বছরের নিচে, তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা। নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অনেক বেশি। পুরুষদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা নারীদের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ।

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস হল একটি সচেতনতা দিবস। প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর পালিত হয়, যা আত্মহত্যা প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী প্রতিশ্রুতি এবং পদক্ষেপ প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৩ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে।  আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য ফেডারেশন এর সাথে সহযোগিতা করে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস আয়োজন করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে আট লাখেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। সংস্থাটির মতে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করে। এছাড়াও প্রায় ১৫ থেকে ২০ গুণ মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। আমাদের দেশে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এর মধ্যে নারী-পুরুষ-শিশু সব বয়সের মানুষ রয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বে প্রায় তিনশ মিলিয়ন বিষণ্ণতা রোগী রয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ৫ জনের ১ জন কোনো না কোনো ধরনের বিষণ্ণতায় ভুগছেন। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ এই ডিপ্রেশন জনিত আত্মহত্যা।  পরিবারের অনেকে জানেনই না যে, তাদের কোনো স্বজন বিষণ্ণতায় ভুগছেন। সমাজে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা সম্পর্কে রয়েছে ব্যাপক অজ্ঞতা ও অসচেতনতা।

বিষণ্ণতা একটি ভয়ানক মানসিক ব্যাধি। বিষণ্ণতা থেকে তৈরি হয় আত্মহত্যার প্রবণতা। বৈষম্য, বঞ্চনা, বিভ্রান্তি, হতাশা এবং না পাওয়ার যন্ত্রণার কারণে মানুষ জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি হয়।  যা থেকে মানুষের শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতা, দক্ষতা কমে যায়। এক পর্যায়ে তারা আত্মহত্যা করে বসে।

আত্মহত্যার পেছনের অন্যতম কারণ ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা, একাকিত্ব, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, দারিদ্র্য, সামাজিক বৈষম্য, বেকারত্ব, দাম্পত্য কলহ, সম্পর্কে টানাপোড়েন, অভাব-অনটন, দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ও মানসিক রোগ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ, মাদকাসক্তি, প্ররোচনা, হঠাৎ রেগে গিয়ে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো এবং দৈহিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন।

আত্মহত্যা হল নিজের জীবন কেড়ে নেওয়ার কাজ। বিশ্বের অনেক দেশ আত্মহত্যাকে অপরাধ বলে মনে করে এবং আত্মহত্যার চেষ্টা করার জন্য একজন ব্যক্তিকে জেলে যেতে পারে।

আত্মহত্যার চিন্তা নিজেকে ক্ষতি বা হত্যা করার চিন্তা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। আত্মহত্যা একটি অপরাধমূলক, পাপ বা নৈতিকভাবে ভুল কাজ। পুরোপুরি আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যুবরণ বা সাধারণভাবে নিজেকে মেরে ফেলাই হল আত্মহত্যা হিসাবে ব্যবহার করা উপযুক্ত শব্দ যা মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থার মিডিয়ার নির্দেশনায় প্রতিফলিত হয়।

ইতোমধ্যেই বিশ্বের অনেক দেশেই আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকে এক ধরনের অপরাধরূপে ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক ধর্মেই আত্মহত্যাকে পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যিনি নিজেই নিজের জীবন প্রাণ বিনাশ করেন, তিনি আত্মঘাতক, আত্মঘাতী বা আত্মঘাতিকা, আত্মঘাতিনীরূপে সমাজে পরিচিত হন।

আত্মহত্যার চেষ্টা দণ্ডবিধি অনুযায়ী একটা ফৌজদারি অপরাধ। অনেকে আত্মহত্যার প্রচেষ্টা চালায় কিন্তু চেষ্টা করে সে যদি ব্যর্থ হয় তাহলে তাকেও প্রচলিত আইনে শাস্তি দেয়া যাবে। আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে এক বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। কেউ আত্মহত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হলে সেই ব্যক্তিকে আত্মহত্যা বা নিজেকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা’র অপরাধে এক বছরের জেলে যেতে হতে পারে।

দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনও ব্যক্তি আত্মহত্যা করার উদ্যোগ নেন এবং অনুরূপ অপরাধ করার উদ্দেশ্যে কোনও কাজ করেন, তা হলে তার এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড হতে পারে, বা উভয় শাস্তিই হতে পারে।আত্মহত্যায় প্ররোচনা বা উস্কানি দেয়ার বিষয়টি যথাযথভাবে প্রমাণিত হলে তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

দণ্ডবিধি ১৮৬০–এর ৩০৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি আত্মহত্যা করে, তাহলে যে ব্যক্তি আত্মহত্যায় সাহায্য করবে বা প্ররোচনা দান করবে, সে ব্যক্তিকে ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনও মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

আত্মহত্যার চেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করার সংখ্যা বহুগুণ বেশি। কেউ একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করলে, আত্মহত্যার কথা বললে কিংবা আত্মহত্যার চিন্তা করলে তার মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটানোর শঙ্কা অনেক অনেক বেশি থাকে। তাই এ লক্ষণ থাকলে তা অবশ্যই গুরুত্বের সাথে নিতে হবে এবং দ্রুততম সময়ে সাইকিয়াট্রিস্ট বা সাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে। ডিপ্রেশন নিয়ে লজ্জা নয়। বিষণ্ণ রোগীর প্রতি সহমর্মিতা ও তাদের চিকিৎসার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সাইকিয়াট্রিস্টের তত্ত্বাবধানে থেকে নানান প্রকারের কার্যকরী এন্টিডিপ্রেসেন্ট ড্রাগ, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে একজন ডিপ্রেশনের রোগীকে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। সাধারণত সারট্রালিন, এমিট্রিপটাইলিন, সিটালোপ্রাম, এস-সিটালোপ্রাম, মিরটাজাপিন এন্টিডিপ্রেসেন্ট হিসেবে খুবই কার্যকরী।

আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য সমাজের সকল স্তরে কৌশল প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তি, পরিবার এবং সম্প্রদায়ের জন্য প্রতিরোধ এবং প্রতিরক্ষামূলক কৌশল। সতর্কতা সংকেতগুলি শিখে, প্রতিরোধ এবং স্থিতিস্থাপকতা প্রচার করে এবং সামাজিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। বিষণ্ণতা নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)