শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২

SW News24
বৃহস্পতিবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » ইশারা ভাষা মানব ইতিহাসের প্রথম ভাষা
প্রথম পাতা » মুক্তমত » ইশারা ভাষা মানব ইতিহাসের প্রথম ভাষা
৩৪ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ইশারা ভাষা মানব ইতিহাসের প্রথম ভাষা

---  প্রকাশ ঘোষ বিধান

বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যোগাযোগের একমাত্র ভাষা হলো ইশারা ভাষা। ইশারা ভাষা যার ইংরেজি হচ্ছে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ। একে সাংকেতিক ভাষা বা প্রতীকী ভাষাও বলা হয়ে থাকে। এ ভাষা শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী মানুষের জন্য জরুরি। তারা ইশারার মাধ্যমেই ভাবের আদান-প্রদান করে থাকেন। এটি মূলত শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য একটি অপরিহার্য ভাষা এবং এটি মুখের ভাষার মতোই একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষা, যার প্রতিটি দেশ বা সম্প্রদায়ের নিজস্ব রূপ রয়েছে।

আদিম মানব যখন কথ্য ভাষায় কথা বলতে শেখেনি তখন থেকেই ইশারার মাধ্যমেই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলেছিল। ইশারা ভাষা হলো মানুষের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন যোগাযোগের মাধ্যম। মানব ইতিহাসের প্রথম ভাষার নাম ইশারা ভাষা। শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষ ইশারার মাধ্যমে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে।

ইশারা ভাষা বা সাংকেতিক ভাষা বা প্রতীকী ভাষা বলতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে হাত ও বাহু নড়ানোর মাধ্যমে যোগাযোগ করার পদ্ধতিকে বোঝানো হয়। ইশারা ভাষা হলো একটি দৃশ্য-ভিত্তিক ভাষা, যেখানে শব্দের পরিবর্তে হাতের ও শরীরের নড়াচড়া, মুখের অভিব্যক্তি এবং অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি দেশ বা সম্প্রদায়ের নিজস্ব ইশারা ভাষা থাকতে পারে। এতে হাত, বাহু এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের নড়াচড়া ব্যবহার করা হয়। শ্রবণশক্তিহীন এবং কথা বলতে অসুবিধা হয় এমন ব্যক্তিদের যোগাযোগের একটি প্রধান মাধ্যম।

বর্ণমালা আবিষ্কারের আগে আদিম জনগোষ্ঠী ইশারায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করত।  ইশারায় তাদের শিকারের গল্প জনতার সামনে তুলে ধরতো। বর্ণমালা আবিষ্কারের ফলে এ আঙ্গিক প্রকাশ বিলুপ্ত হতে থাকে। তবুও বিশেষ শ্রেণির জন্য ইশারাই হয়ে ওঠে ভাব প্রকাশের মাধ্যম। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে ইশারা ভাষা। যার ইংরেজি হচ্ছে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ। একে সাংকেতিক ভাষা বা প্রতীকী ভাষাও বলা হয়ে থাকে। এ ভাষা শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী মানুষের জন্য জরুরি। তারা ইশারার মাধ্যমেই ভাবের আদান-প্রদান করে থাকেন।

ইশারা ভাষা হলো শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বিশেষ করে হাত, বাহু এবং মুখের অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে যোগাযোগ করার একটি  পদ্ধতি। ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ব সাইন ল্যাংগুয়েজ ডে। সারাবিশ্বে পালিত হয় এইদিনটি। যারা কথা বলতে পারেন না তাদের ভাষার প্রতি সম্মান রেখেই এই দিবস পালন করা হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বধির মানুষদের অধিকার আরও দৃঢ় করতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আন্তর্জাতিক ইশারা ভাষা দিবস বা সাংকেতিক ভাষা দিবসের ওপর গুরুত্বারোপ করে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে এই ভাষার দিবস শুরু হয় ১৯৫১ সালে।  ২০১৮ সাল থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় এই দিবস।

বিশ্বে প্রায়  সাত কোটি  মানুষ আছে যারা কানে শুনতে পান না। এই সাত কোটি মানুষের ৮০ শতাংশই বাস করেন উন্নয়নশীল দেশে। সমীক্ষায় দেখা যায় এই ৮০ শতাংশের মাত্র ২ শতাংশ মানুষই কেবল পূর্ণাঙ্গ সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করতে পারেন। ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব দ্য ডেফ-এর তথ্য মতে, সারা বিশ্বে প্রায় সাত কোটি শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষ রয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশেই আছে প্রায় ৩০ লাখ। তবে দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৯৭ জন। যার মধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯০৭ জন বাকপ্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ও ৪৭ হাজার ৪৯০ জন শ্রবণ-বাকপ্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

বাংলাদেশে প্রতিবছর ৭ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলা ইশারা ভাষা দিবস পালিত হয়। ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ৭ ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলা ইশারা ভাষা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ইশারা ভাষায় হাত ও আঙুল দিয়ে সৃষ্ট সুচিন্তিত ও সুক্ষ্ম দ্যোতনাবিশিষ্ট সংকেত সমষ্টি ব্যবহৃত হয়। এর সাথে সাধারণত মুখমণ্ডলের অভিব্যক্তিও যুক্ত করা হয়। মূক ও বধির লোকেরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ইশারা ভাষা ব্যবহার করে থাকেন।

মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন যোগাযোগের মাধ্যমগুলির মধ্যে ইশারা ভাষা অন্যতম। ইশারা ভাষা হলো কথা না বলেও অঙ্গভঙ্গি ও দৃশ্যের মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করার একটি চমৎকার ও কার্যকর উপায়। শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী মানুষ ইশারার মাধ্যমে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে। তবে সাধারণ মানুষের অনেকেই জানেনই না যে, এই সাংকেতিক ভাষাগুলো প্রকৃতপক্ষে একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষা। তাদের আছে ৩০০টিরও বেশি সাংকেতিক ভাষা।

ইশারা ভাষা বা সাংকেতিক ভাষা বা প্রতীকী ভাষা বলতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে হাত ও বাহু নড়ানোর মাধ্যমে যোগাযোগ করার পদ্ধতিকে বোঝানো হয়। মুখের ভাষাতে যোগাযোগ করা অসম্ভব বা অযাচিত হলে এই ভাষা ব্যবহার করা হয়। সম্ভবত মুখের ভাষার আগেই ইশারা ভাষার উদ্ভব ঘটে। ইশারা ভাষা বলতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে হাত ও বাহু নাড়ানোর মাধ্যমে যোগাযোগ করার পদ্ধতিকে বোঝানো হয়। মুখের ভাষায় যোগাযোগ করা অসম্ভব বা অযাচিত হলে এ ভাষা ব্যবহার করা হয়।

মুখের বিভিন্ন ভঙ্গিমা, কাঁধের ওঠা-নামা কিংবা আঙুল তাক করাকে মোটা দাগে ইশারা ভাষা হিসেবে গণ্য করা যায়। সভ্যতার বিকাশের আগে ইশারা ভাষাই প্রচলিত ছিল। তবে প্রকৃত ইশারা ভাষায় হাত ও আঙুল দিয়ে সৃষ্ট সুচিন্তিত ও সুক্ষ্ম দ্যোতনাবিশিষ্ট সংকেত সমষ্টি ব্যবহৃত হয়। এর সাথে সাধারণত মুখমণ্ডলের অভিব্যক্তিও যুক্ত করা হয়। মূক ও বধির লোকেরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ইশারা ভাষা ব্যবহার করে থাকেন।

যারা কানে শুনতে পান না তাদের জন্য সাইন ল্যাংগুয়েজ একমাত্র ভরসা। অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তারা এসব সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে থাকে। বিশ্বজুড়ে কতটি সাংকেতিক ভাষার অস্তিত্ব আছে তার সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে প্রতিটি দেশের নিজস্ব কিছু সাংকেতিক ভাষা আছে। আবার অনেক দেশে এই ভাষার সংখ্যা একাধিক। সাংকেতিক ভাষার প্রথম লিখিত রেকর্ডটি ছি প্লেটোর ক্র্যাটাইলাসের। সেটি লেখা হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৫ শতক থেকে।

১৯ শতকের পূর্বে ঐতিহাসিক সাংকেতিক ভাষা সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। এই ভাষা আঙুলের নড়াচড়াতেই সীমাবদ্ধ ছিল। যেগুলো উদ্ভাবিত হয়েছিল যাতে কথ্য ভাষা থেকে শব্দগুলোকে একটি সাংকেতিক ভাষায় স্থানান্তর করা যায়। সাংকেতিক ভাষার ম্যানুয়াল বর্ণমালা প্রথম তৈরি করেন পেড্রো পন্স ডি লিওন।

বধির শিশুদের জন্য প্রথম স্কুল তৈরি হয় প্যারিসে। ১৭৫৫ সালে অ্যাবে ডি এলপেই সংস্থা এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এখান থেকে স্নাতক হন লরেন্ট ক্লার্ক। এরপর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং টমাস হপকিন্স গ্যালাউডেটের সঙ্গে মিলে ১৮১৭ সালে আমেরিকান স্কুল ফর দ্য ডেফ স্থাপন করেন। স্কুলটি ওয়েস্ট হার্টফোর্ড, কানেকটিকাটে অবস্থিত। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বধিরদের জন্য সবচেয়ে পুরোনো স্কুল।

প্রতিটি দেশ, অঞ্চল বা সম্প্রদায়ের নিজস্ব ইশারা ভাষা থাকে, যা তাদের সংস্কৃতি ও যোগাযোগের প্রয়োজন অনুযায়ী গড়ে ওঠে। এই ভাষা তাদের জন্য যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এবং একে অপরের সাথে মনের ভাব প্রকাশ করতে সাহায্য করে। যারা শ্রবণ প্রতিবন্ধী নন, তারাও ইশারা ভাষা শিখে পরিবার, বন্ধু বা সমাজের সদস্যদের সাথে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন। বিভিন্ন দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বা বিশেষ ভাবে সেনা বাহিনীতে ইশারা ভাষা ব্যবহার করা হয়।

দৃষ্টি বা শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কথা বলতে পারেন, তাঁরা কথা বলে তাঁদের অধিকার বা দাবির কথা বরতে পারে। পক্ষান্তরে শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ইশারা দিয়ে বোঝানোর চেস্টা করলেও কেউ ফিরেও তাকাচ্ছেন না, শুনছেন না কেউ। বুঝতে পারছেন না তাঁদের বুকফাটা আর্তনাদ। ফলে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে তাঁদের অবস্থান অন্য যেকোনো সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরও নিচে। একজন দৃষ্টি বা শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে দেখে বোঝা যায় যে তাঁর প্রতিবন্ধকতা আছে। তবে বাক্‌ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দেখে বোঝার কোনো উপায় নেয়। শ্রবণ-বাকপ্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষ ভাব প্রকাশের প্রতিবন্ধকতার কারণে এই সমাজের মূলধারার সঙ্গে মিশতে পারে না, এর ফলে তারা বঞ্চিত হচ্ছে প্রাপ্ত অধিকার থেকে।

শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী মানুষের বৈচিত্রময় জীবনের প্রকাশ ঘটে এ ভাষার মাধ্যমে। এ ছাড়া অটিস্টিক, নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের অনেকে ইশারা ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকেন। তাই প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে ইশারা ভাষা শেখানো জরুরি। ইশারা ভাষা নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারের পাশাপাশি সচেতন ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ