

বৃহস্পতিবার ● ১৬ অক্টোবর ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » নিরাপদ সড়ক
নিরাপদ সড়ক
প্রতি বছর অক্টোবর মাসের ২২ তারিখে বাংলাদেশে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়। এই দিবসটি সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উদযাপন করা হয়। যদিও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনটি প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে, যা নিরাপদ সড়কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন হিসেবে বিবেচিত হয়।
২০১৭ সালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই থেকে প্রতিবছর দিবসটি উপলক্ষে সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি নিসচাসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন বাংলাদেশে কার্যকর সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে ২০১৮ সালে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত একটি আন্দোলন বা গণবিক্ষোভ। ঢাকায় ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দ্রুতগতির দুই বাসের সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হয় ও ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এই সড়ক দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে নিহত দুই কলেজ শিক্ষার্থীর সহপাঠিদের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ পরবর্তীতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে।
পরবর্তীতে ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভা একটি খসড়া ট্রাফিক আইন অনুমোদন করে, যে আইনে ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যায় মৃত্যুদণ্ড এবং বেপরোয়াভাবে চালিয়ে কারো মৃত্যু ঘটালে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়; যদিও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বেপরোয়া চালনায় মৃত্যুদন্ড দাবি করেছিল।
প্রায় তিনদশক আগে এই দিনে বান্দরবানে শুটিংয়ে থাকা স্বামী ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের অদূরে চন্দনাইশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন জাহানারা কাঞ্চন। সেই থেকে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করে আসছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয় এই স্লোগান নিয়ে গড়ে তুলেন সামাজিক সংগঠন-নিরাপদ সড়ক চাই। নিসচার পক্ষ থেকে প্রতিবছর ২২ অক্টোবরকে নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানানো হয়।
১৯৯৩ সালের এ দিনে চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যাবার পথে পটিয়ার সড়কে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সহধর্মিনী জাহানারা কাঞ্চন এক মারাত্মক রোড ক্র্যাশে মৃত্যুবরণ করেন। ইতোপূর্বে রোড একসিডেন্ট বাংলায় সড়ক দুর্ঘটনা হিসাবে ব্যবহৃত হলেও বিশ্বে এখন রোড একসিডেন্ট এর পরিবর্তে রোড ক্র্যাশ শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে। স্ত্রীর মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়া ইলিয়াস কাঞ্চন নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলেন। চলচ্চিত্রে ওই সময়ের জনপ্রিয়তাকে মাড়িয়ে তিনি বাংলাদেশের সড়কে মানুষের মৃত্যুর নিরব মিছিল থামাতে প্রতিজ্ঞা করেন। এ লক্ষ্যে স্ত্রী হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই, ১ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তায় কাজ করার উদ্যোগ নেন এবং ১ ডিসেম্বর ১৯৯৩ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে নিরাপদ সড়ক চাই প্রতিষ্ঠা করেন।
চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে খুব অল্প সময়েই নিসচা সারাদেশে বিস্তৃতি লাভ করে এবং ১৯৯৪ সাল থেকে, প্রতিবছর ২২ অক্টোবর দিনটিকে নিরাপদ সড়ক দিবস হিসাবে পালন শুরু হয়। তখন থেকেই এ দিবস উদযাপনে সরকার, বিশেষত, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত থাকলেও গত ৮ বছর যাবত এ দিনটি উদযাপনে সরকার প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হয়।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে গণআন্দোলনের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ত্রুটিপূর্ণ মোটরযান, ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক, অবৈধ যানবাহন সড়ক নিরাপত্তার যে ঝুঁকি তৈরি করে, সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক তা উপলব্ধি করে এ থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশা পূরণ অনেকটাই সহজ হবে।