শিরোনাম:
পাইকগাছা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২

SW News24
সোমবার ● ৬ মার্চ ২০২৩
প্রথম পাতা » মুক্তমত » নারীর অধিকার আদায়ে পুরুষের ভূমিকা
প্রথম পাতা » মুক্তমত » নারীর অধিকার আদায়ে পুরুষের ভূমিকা
৩৬৭ বার পঠিত
সোমবার ● ৬ মার্চ ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

নারীর অধিকার আদায়ে পুরুষের ভূমিকা

প্রকাশ ঘোষ বিধান ;---

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপী সমতাভিত্তিক সমাজ-রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে  দিবসটি উদ্যাপন করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিনটি নানান আনুষ্ঠানিকতায় উদ্যাপিত হচ্ছে। অনেক মেধা ও মনন যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নারীরা এখনো পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে। আজও নারী পুরুষের বৈষম্য ঘুচেনি।

যে আদর্শ আর অধিকারের লক্ষে নারী দিবস আন্দোলনে রূপ নেয় তার পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্টের নিউইয়ার্কের  রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লাঠিয়াল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোত্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান  রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের  কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়ঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে। সারা বিশ্বের সকল দেশে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯ (৩) অনুচ্ছেদে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। যুগে যুগে সভ্যতার সকল অগ্রগতি এবং উন্নয়নে নারী তার মেধা ও শ্রম দিয়ে  সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিত করেছে। সারাবিশ্বে তাই আজ বদলে গেছে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। এখন নারীর কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে ও পাচ্ছে স্বীকৃতি। নারীদের যথার্থ মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সরকার নারী শিক্ষার বিস্তার, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়নসহ নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। তেমনিভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলাও সম্ভব হবে।

জীবন ও জীবিকার নানা ক্ষেত্রে নিজের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা আদায়ে নারীকে লড়াই করতে হয়েছে এবং  লড়াই চলমান। নারীর বিরুদ্ধে চলমান বৈষম্য ও সহিংসতা দূর করতে হবে। এজন্য আমাদের সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সব পরিসরে নারীরা যেন পরিপূর্ণভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমাজের সব মানুষ যেন স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে বিকশিত হতে পারে, এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন কখনোই অর্জন করা সম্ভব হবে না। বিশেষ করে গ্রামেগঞ্জে কৃষি নারী শ্রমিক, নির্মাণ নারী শ্রমিক ও পোশাক নারী শ্রমিকরা পুরুষ সহকর্মীর চাইতেও কম মজুরি পায়। যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য বা কাঙ্খিত নয়। এ বৈসম্য এখনো সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়নি। নারী শ্রমিকরা বৈষম্য রোধে আন্দোলনে বাধ্য হয়। এসব বিভাজন দূর না হলে নারী দিবসের প্রত্যাশা পুরণ হবে না।

প্রতিনিয়ত নারীদের লড়াই করতে হয় তার অধিকার আদায়ের জন্য। মান্ধাতা আমলের সমাজ সংস্কার নারীর সামনে এগিয়ে যাবার পথকে এখনো বাধাগ্রস্থ করছে। চলার পথে সব আবর্জনা উপড়ে ফেলে  নারী নিজেকে  এগিয়ে নিচ্ছে। আর একাজে নারীর অনুপ্রেণা বোধই সব থেকে  বড় শক্তি। নিজেকে শক্ত হাতে চারপাশের জঞ্জাল ও অভিশাপ মুছে নারী আজ বিকশিত।

নারী ও পুরুষের মধ্যে  বৈরিতা তৈরি না করে, একে অন্যের সহযোগী হতে হবে। পুরুষকে নারীর প্রতি সংবেদনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে  নারীকে পুরুষের চেয়ে দুর্বল ভাবার প্রবণতা রয়েছে; এ ভাবনা বদলানো দরকার। পুরুষ কেবল নারীর প্রেমে আত্মসমর্পণ করে, এ ছাড়া অন্যকিছুতে মাথা নোয়াতে চায় না। কিন্তু পরিবারে-সমাজে-রাষ্ট্রে নারীর তুলনাতীত ভূমিকা রয়েছে। তার অবদানের কথা স্বীকার করে নারীর প্রতি পুরুষের শ্রদ্ধাবান হওয়া উচিৎ। নারীর অধিকার আদায়ে পুরুষের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যেদিন পুরুষের এই বোধ তৈরি হবে, সেদিন সমাজ বদলাবে যাবে।

লেখক; সাংবাদিক ও কলামিস্ট।





আর্কাইভ