শিরোনাম:
পাইকগাছা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
সোমবার ● ১ এপ্রিল ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » পাখির প্রজনন লড়াই
প্রথম পাতা » মুক্তমত » পাখির প্রজনন লড়াই
১৫১ বার পঠিত
সোমবার ● ১ এপ্রিল ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পাখির প্রজনন লড়াই

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান

পাখির প্রজনন মৌসুমে বাসা তৈরি থেকে শুরু করে বাচ্চা  উড়তে শিখা পর্যন্ত বিপদসঙ্কুল পরিবেশের সাথে লড়াই করে করতে হয়। নানা প্রতিকুল পরিবেশে বিপদসঙ্কুল সময় পেরিয়ে বাচ্চাদের উড়াতে পারলে পাথিদের প্রজনন স্বপ্ন পূরণ হয়।

পাখির বাসা কথা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে গাছের ডালে খড়কুটোয় তৈরি এক ধরনের শিল্পকর্ম। এক একটা পাখির বাসা দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়, পাখির বাসা তৈরিতে কতো বুদ্ধি খরচ করেছে, আর মেহনতই বা করেছে কতো। পাখির বাসা বানানো, খাবার, চারিত্রিক বৈশিষ্ট, প্রজনন কাল, প্রজনন শেষে অবস্থান, ডিমে তা’ দেয়ার পদ্ধতি, ছানাদের পরিচর্যা এবং প্রকৃতির বিরূপ আচরণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার কৌশল শেখানো।

প্রজননের সময় পাখিদের জোড়া বাঁধার আকাঙ্খা, ঘর বাঁধার স্বপ্ন, প্রেম বিনিময় খুবই লক্ষ্যণীয় একটি ঘটনা। যারা পাখি নিয়ে কাজ করেন ও ছবি তুলেন একমাত্রই তারাই পাখিদের প্রেম বিনিময়ের কৌশলগুলি পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। বাহারি রঙের এসব পাখির খুনসুটি আর ছোটাছুটি যে কারো মনকে উদ্বেলিত করে তোলে।ডানা ঝাপটিয়ে আর মুখ দিয়ে নানা রকম শব্দ তৈরি করে। তবে সবচেয়ে বেশী যেটা করে সেটা হলো- নানা রকম ভংগী।

চৈত্র- বৈশাখ মাস থেকে এসব পাখিরা বিশেষ করে ঝুঁটি শালিক, টুনটুনি, ভাত শালিক, দোয়েল, কুটুরে প্যাঁচা, কাঠ শালিক, চড়ুঁই পাখিরা প্রজনন ঘটায়। এই সময় এসব পাখিদের বাসা বাঁধবার জন্য নির্দিষ্ট জায়গার প্রয়োজন হয়। যেমন বড়সড় গাছের কোটর, নারকেল গাছের ফোঁকর সহ পুরনো দালানের ভাঙ্গা ভেন্টিলেটার। এই জায়গাগুলোই এ সব পাখিদের বাসা বাঁধবার প্রকৃত স্থান। এ সকল জায়গা পাখিদের জন্য নেই বললেই চলে।

পাখি প্রজননের জন্য, তারা একটি বাসা বানাতে শুরু করবে, এতে ডিম পাড়বে, ডিম ফোটাবে, ছানাগুলিকে পালানোর জন্য যথেষ্ট বয়সে নিয়ে আসবে এবংবাচ্চা উড়তে শেখার  পরে সবাই বাসা পরিত্যাগ করবে। বাচ্চা উড়তে শিখার আগ পর্যন্ত পাখি বাচ্চাকে আধার এনে খাওয়াবে। সুন্দরের অন্তঃপ্রাণে যে কোনো বেদনা থাকতে পারে, বেশির ভাগ সময়ই আমাদের চোখে পড়ে না। মানুষ যেমন মানুষের শক্র হয়, একইভাবে অন্যান্য জীব-জানোয়ার বা পাখির শত্রুও স্বগোত্রিয়রা।বাংলাদেশের দেশিয় বা আবাসিক পাখিদের এখন প্রজনন মৌসুম চলছে। মার্চ থেকে সেপ্টম্বর মাস পর্যন্ত বিভিন্ন গোত্রীয় ও পরিবারভুক্ত পাখিদের প্রজননকাল। পাখিদের বাসা বাঁধতে এবং ডিম পাড়ার দৃশ্য বসন্ত ঐতিহ্যকে জাগিয়ে তোলে।  অনেক পাখি বসন্তে প্রজনন করে এবং ডিম দেয়।তবে বেশ কয়েকটি প্রজাতি গ্রীষ্মে প্রজনন করে না। কিছু শীতের প্রথম দিকে শুরু হয়, কিছু গ্রীষ্মের শেষের দিকে এবং অন্যরা প্রজনন করে সারা বছর ধরে।

আমাদের দেশে বড় গাছপালা নির্বিচারে নিধনের ফলে এদেশের আবাসিক পাখিদের প্রজননের জন্য যে আবাস প্রয়োজন তা বিলুপ্ত হচ্ছে। প্রকৃতি ও পরিবেশের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে বিচিত্র প্রজাতির পাখি। কিন্তু পাখিদের আবাসস্থল নিরাপদ থাকছে না।পাখির প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্র দিন দিন শিকারিদের দখলে চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া কৃষক ও জেলেদের অসচেতনতার কারণে পাখির অভয়ারণ্য হুমকির মুখে পড়েছে।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৭২২টি প্রজাতির পাখির উপস্থিতি নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে কমবেশি ৩৪০টি প্রজাতি আবাসিক। এরা সারা বছর দেশের ভৌগোলিক সীমানায় থাকে এবং বংশবৃদ্ধি করে। বাকি প্রায় ৩৭০ প্রজাতি পরিযায়ী।অল্প কিছু প্রজাতি বাদে বেশির ভাগ পরিযায়ী পাখি আসে শীতকালে। তার মানে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় ওরা এ দেশে আসে, বাস করে এবং সময়মতো আগের আবাসে ফিরে যায়। এরা পরিযায়ী পাখি নামে পরিচিত।

পরিবেশ,প্রকৃতি ও পাখি নিয়ে কাজ করেন খুলনা পাকইগাছায় পরিবেশবাদী সংগঠণ বনবিবি। চলতি পাখির প্রজনন মৌসুমে  বনবিবির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে,  সংগঠণের এক কর্মির বাড়ির পাশে একটি গাছের ডালে টুনটুনি পাখি দৃস্টিনন্দন বাসা তৈরি করে। বাসা তৈরির পর থেকে তিনি টুনটুনি পাখির গতিবিধি পর্যাবেক্ষণ করতে থাকেন। বাসা তৈরির পরে দুটি ডিম পাড়ে পাখি। মা পাখি তা দেওয়া থেকে উঠে খাবারের সন্ধানে বের হওয়ার সুযোগে একটি কানাকোয়া বাসায় হানা দিয়ে একটি ডিম খেয়ে ফেলতে দেখলে তিনি তাড়া দিলে কানাকোয়া পালিয়ে যায়। এরপর তিনি পর্যাবেক্ষণের সময় আরও বাড়িয়ে দেন। এরমধ্যে বাকি একটি ডিম ফুঠে বাচ্চা বের হয়। দুটি টুনটুনি পাখি সারদিন পালাক্রমে বাচ্চাকে আধার খাওয়াতে থাকে। পাখির বাচ্চার গয়ে ছোট ছোট পালক গজাতে শুরু করেছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে হয়তো উড়তে পারবে। বাচ্চাটি কিচ কিচ করে ডাকাডাকি করে। এর মধ্যে একদিন টুনটুনি খাবার নিয়ে বাসায় না বসে এদিক ওদিক ওড়াউড়ি করছে। আর বাচ্চার কোন ডাক শুনতে না পেয়ে তিনি গাছে উঠে দেখেন বাসাটি লাল পিপড়ায় ভরে গেছে। আর বাচ্চার কঙ্কাল পড়ে আছে বাসায়। লাল পিপড়া বাচ্চাটি খেয়ে ফেলেছে। পাখির মা-বাবার আর্তনাদ এবং চিৎকারে হৃদয়-বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। চার-পাচ দিন টুনটুনি পাখি বাসা পাশে এসে উড়াউড়ি করে ও ডাকতে থাকে। শিকারী পাথিকে তাড়া করতে পারলেও পিপড়ার আক্রমন থেকে পাখি তার বাচ্চকে কোন রকমে বাচাতে পারেনা। এভাবে পাখির প্রজনন সপ্ন হারিয়ে যায়।

বাসা তৈরি থেকে বাচ্চা উড়তে শিখার আগ পর্যন্ত পাখিদের নানা বাধা ও বিপদসঙ্কুল সময় কাটাতে হয়। মাংশসী পেঁচা পাখি যে গাছে অবস্থান নেয় সেই গাছে অন্য পাখিরা ভয়ে বাসা বাধেনা। অনেক শিকারী পাখি খুব সহজে পাখির ডিম ও বাচ্চা খেয়ে ফেলে। তাই  গাছের মগডালে বাসা করে সেখানে ডিম পেড়ে সন্তানের মুখ দেখার আশায় দিনের পর দিন তা দিয়ে যায়  মা পাখি। পাখির বাসায়  সুযোগ বুঝে হানা দিয়ে  সাপ, মাংসাশী পাখি কাক,চিল,কানাকোয়া বা কুবো ডিম ও বাচ্চা খেয়ে ফেলে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পর মাংসাশী পিপড়ারাও বাচ্চা খেয়ে ফেলে। আর শিকারীর উৎপাত তো আছে। মা পাখিটির সব পরিশ্রম ধুলোয় মিশে যায়। পড়ে থাকে শূন্য বাসা।

পাখি  জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হবে।  পাখি শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, মানুষের উপকারী বন্ধু।পাখিরা ফিরে পাক নিরাপদ আবাসস্থল। তাই পাখির সুরক্ষায় সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)