

শুক্রবার ● ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » কৃষি » বহুমুখী ফসল উৎপাদনে পাইকগাছার কৃষি অর্থনীতি বদলে যাচ্ছে
বহুমুখী ফসল উৎপাদনে পাইকগাছার কৃষি অর্থনীতি বদলে যাচ্ছে
প্রকাশ ঘোষ বিধান(খুলনা) পাইকগাছা : প্রযুক্তি ও মাল্টিলেয়ার পদ্ধতিতে এক জমিতে একসঙ্গে একাধিক ফসল উৎপাদনে বদলে যাচ্ছে পাইকগাছার কৃষি অর্থনীতি। কৃষকের পুনর্বাসন ও প্রণোদনা, ফসল উৎপাদন এবং তদারকি বাড়ায় বর্তমানে চাহিদার অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদনে সক্ষম হয়েছেন পাইকগাছার কৃষকেরা।
সরকার উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে বহুমুখী ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করায় এর সুফল পাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। ফলে পাইকগাছা উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে খালে-বিলে কৃষকের চালে মৎস্য ঘেরের আইলে শোভা পাচ্ছে লাউ, ঢেঁড়স, করলা, মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, বরবটি, শিম, ঝিঙে, কুমড়া, পেঁপে, শসা, পুঁইশাক, লালশাকসহ নানা ধরনের সবজি।
কৃষি অফিসের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে মৌসুমভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও বিনা মূল্যে সার ও বীজ প্রদান করে কৃষকদের প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। ফলে রবি মৌসুমে গম, আলু, মিষ্টি আলু, সরিষা, ভুট্টা, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, মসুর, মুগ, খেসারি, মটর, মাষকলাই, তরমুজসহ শীতকালীন শাকসবজির উৎপাদন গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। পাইকগাছার কৃষকেরা এখন নিজেরাই নিজেদের পুষ্টি ও খাদ্য তৈরি করছেন।
উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের কৃষকরা কৃষিবিপ্লব ঘটিয়েছেন। উপজেলার দেলুটির ২২ নং পোল্ডারের ডিহিবুড়া খালের দুই পাড়ে বিধান মণ্ডল মাছ চাষের পাশাপাশি তিনি পতিত জমি চাষের আওতায় এনে আধুনিক কৃষি প্রজেক্ট তৈরি করেছেন। খালের পাড়ে জমিতে চাষ করা হয়েছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফল-সবজি। গদাইপুর ইউনিয়ানের পুরাইকাটি বিলে ঘেরের আইলে শেখ আহসান উল্লাহ গ্রীষ্মকালীন তরমুজ, লাউ, করলা, শসা, সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ঘেরে আইলে চাষ করেছেন। তারা এক ফসলি জমিতে এখন বহু ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করেছেন। ফলে কৃষকরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন ।
পাইকগাছা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মাছের ঘেরের আইলে ২৩৪ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। লতা ও দেলুটিতে তরমুজের ফলন খুব ভালো হয়েছে। গত পাঁচ বছরে উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে। বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপর্যয় কাটিয়েও কৃষকরা খাদ্যশস্য উৎপাদনে উল্লেখ যোগ্যভাবে সফল হয়েছেন। দানা শস্যের পাশাপাশি শাকসবজি উৎপাদনেও রেকর্ড সৃষ্টি করেছে পাইকগাছার কৃষকরা।
উপকূলীয় উপজেলা হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা, সেচের পানির দুষ্প্রাপ্যতাসহ বিভিন্ন সমস্যা কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। ২০০৭ সালে সিডর ও ২০০৯ সালে আইলায় উপকূলীয় এলাকায় কৃষি মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়। এরপরে বুলবুল, আম্পান, ইয়াস ও করোনার প্রভাবে সামগ্রিক কৃষি খাতকে বিপর্যস্ত করে তোলে।
দুই যুগ আগেও উপকূলীয় এলাকার জমিতে একটি বা দুটি ফসল হতো। বছরের অধিকাংশ সময় কৃষিজমি পতিত অবস্থায় থাকত। এখন সেসব জমিতে তিন থেকে চারটি ফসল উৎপাদন হচ্ছে। আবার একই জমিতে মাল্টিলেয়ার পদ্ধতিতে একসঙ্গে একাধিক ফসলও চাষ হচ্ছে। এভাবে জমির বহুমুখী ব্যবহারে বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ একরামুল হোসেন বলেন, আমাদের বৈজ্ঞানিকরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করছেন এ অঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য। উদ্ভাবিত কার্যকরী প্রযুক্তিগুলো মাঠ পর্যায়ে দ্রুত জনপ্রিয় করতে প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতা উচ্চফলনশীল জাতগুলোর উপযোগিতা যাচাইয়ের পর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হচ্ছে। ফসল নিবিড়তায় কৃষিতে বৈচিত্রতা অর্জন করা সম্ভাব হয়েছে। দেশের দক্ষিণঞ্চলের লবণাক্ত উপজেলা পাইকগাছায় চাষ উপযোগী সবজি, ফল, ডাল, আলু, তরমুজ, গম, ভুট্টা উৎপাদন বাড়ানো ও কৃষকদের আয় বাড়ানোর পথ সহজ হবে।