শিরোনাম:
পাইকগাছা, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

SW News24
বুধবার ● ২৪ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » কৃষি » পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ‘পানি সিঙ্গারা’ চাষে শতাধিক কৃষক স্বাবলম্বী
প্রথম পাতা » কৃষি » পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ‘পানি সিঙ্গারা’ চাষে শতাধিক কৃষক স্বাবলম্বী
৪৮০ বার পঠিত
বুধবার ● ২৪ নভেম্বর ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ‘পানি সিঙ্গারা’ চাষে শতাধিক কৃষক স্বাবলম্বী

 

 এস ডব্লিউ;---পানিতে জন্মে বলে পানিফল। প্রায় ৩ হাজার বছর আগে থেকেই চীন দেশে পানিফলের চাষ হয়ে আসছে বলে ধারণা করা হয়। বিগত কয়েক দশক থেকে আমাদের দেশেও পানিফলের চাষ হয়ে আসছে বিচ্ছিন্নভাবে কারও কারও ব্যক্তিগত আগ্রহে। যদিও পানিফল নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা বা সুষ্ঠু পরিকল্পনা এখনও হয়নি। তবে বর্তমানে এ দেশেও সাতক্ষীরার দেবহাটা, নওগাঁ পানিফলের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। এ ফলের গাছ হয় পানিতে। স্থির বা ধীর প্রবাহমান স্রোতের পানিতে পানিফল জন্মে। ফল দেখতে অনেকটা সিঙ্গাড়ার মতো বলে সাতক্ষীরার লোকরা একে ডাকে সেঙ্গারা ফল নামে। এ দেশের আরও বেশ কিছু জায়গায় পানিফল সিঙ্গারা ফল নামেই পরিচিতি।

 অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পানি সিঙ্গারার (পানিফল) চাষদিন দিন বাড়ছে।  জলাবদ্ধ এলাকায় পতিত জমিতে খুব সহজেই চাষ করা যায় এ ফলটি। অল্প খরচে  উৎপাদন বেশি। তাছাড়া সুস্বাদু এ ফলটি বাজারজাতকরণও খুবই সহজ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘সিঙ্গারা’ অনেকই চিনেন ‘পানিফল’ হিসেবে। এর একমাত্র কারণ এটি কেবল হাঁটু বা কোমর পানিতেই জন্মায়। দেখতে খানিকটা বাজারে তৈরি সিঙ্গারার মতো হওয়ায় অনেকেই সিঙ্গারা বলেও চিনেন এই ফলটিকে। তাছাড়াও এফলের নানা জায়গায় নানা নাম রয়েছে।

কেউ কেউ এটিকে ওয়াটার কালট্রপ, বাফেলো নাট, ডেভিল পড ইত্যাদি নামে চেনে। আবার ইংরেজিতে একে ওয়াটার চেস্টনাটও বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘ট্রাপা নাটানস’।সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার পতিত জমিতে এই পানিফলের চাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছে এখানকার কৃষকেরা। প্রতিবছর বোরো ধান কাটার পর, খাল-বিল-ডোবায় জমে থাকা পানিতে প্রথমে এই ফলের লতা রোপণ করা হয়। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফল আসে গাছে। এ ফল চাষে সার-কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না।

প্রতি বিঘা জমি চাষে ৯/১০ হাজার টাকা খরচ করে ৩৫/৪০ হাজার টাকা লাভ করে চাষিরা।

উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, পতিত জমিতে পানিফল চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। এ ফলের পুষ্টিমানও অনেক বেশি। স্বল্প সময়ের জন্য জমি পতিত না রেখে সিঙ্গারা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় ৩৭ হেক্টর পতিত জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি পানিফল বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। প্রথমে দাম ছিলো ৫০/৬০ টাকা কেজিতে। এখন একটু কমে গেছে।

এদিকে ডোবা আর বদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে সাবলম্বী হয়ে উঠছে এই উপজেলার অনেক হতদরিদ্র কৃষক। অল্পপুঁজি ব্যয় করে পানিফল চাষের মাধ্যমে দু’পয়সা বাড়তি আয় করে অভাবের সংসারে সচ্ছ্বলতা এনেছে প্রায় শতাধিক পরিবার।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, কলারোয়ায় পানিফল উৎপাদনে সফলতা পাওয়ায় অন্যান্য উপজেলার চাষিরাও অনুপ্রাণিত হয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি শিখে তাদের পতিত জমিতে চাষ এই ফল চাষ শুরু করছেন।

সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, এটি একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ পানিফল। এই ফলের গাছটি ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানির নীচে মাটিতে এর শিকড় থাকে এবং পানির উপর পাতা গুলি ভাসতে থাকে। আশ্চর্য বিষয় হলো-এই গাছে ফুল ফোটে ভোর বেলায়, পানির উপর ভাসতে দেখা যায়। কিন্তু ফুল ফোটার কিছুক্ষণ পরে সেই ফুল পানির নিচে চলে যায়। আর সেখানেই পানি ফলে পরিণত হয়।

পানি ফল চাষী হাসান ও রেজাউল ইসলাম বলেন, ১৩ বছর ধরে তারা কলারোয়ার গোপিনাথপুরে পতিত ও জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষ করে আসছেন। পানিফলে সার কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। অন্যান্য ফসলের থেকে এর পরিচর্যাও কম। অল্পপুঁজি ব্যয় করে লাভ বেশী। খেতেও সুস্বাদু।

তারা জানান, এ বছর তাদের ৬ বিঘা জমিতে পানিফল চাষের খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে পানিফল বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আশা করছি এবার ৬বিঘা জমিতে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার ফল বিক্রয় হবে।

পানিফল চাষিরা বলেন, আষাঢ় মাসে পানি ফলের চাষ শুরু হয়। এর তিন মাস পরে গাছে ফল আসে। এই ফল পৌষ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বিক্রয় করা যায়।

কৃষকরা বলেন, পানিফল চাষ করে অন্যান্য ফসলের থেকে লাভও দ্বিগুণ পাচ্ছি। এই ফল চাষে বর্তমানে আমাদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের কলারোয়ায় বদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে সাবলম্বী হয়ে উঠছে অনেক হতদরিদ্র মানুষ।

কৃষিবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পানিফল খেতে যেমন সুস্বাদু। তেমনি শরীরের জন্যও বেশ উপকারি। এই ফল শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করে, ব্ল্যাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে করতে সাহায্য করে।

পানি সিঙ্গারা চাষী ওয়াজেদ, মাজেদ, শিল্পি, একুব্বার, শফিকুল, মুনসুর আলী, নাজির গাজী, শামসুর রহমান, আঃ রউফ, রফিকুল ইসলাম, সোহাগ, আবুল, নুর ইসলাম, তৌহিদ, আঞ্জুর জানান, সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ঋণ সহায়তা পেলে আরও অনেক মানুষ পানিফল চাষ করবে। এতে একদিকে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হতে পারে তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব হবে।

কলারোয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পানিফল কৃষিতে নতুন এক সম্ভাবনাময় ফসল। আমাদের কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে পানিফল চাষের বিস্তার ঘটাতে। যেকোনো পতিত খাল, পুকুর, ডোবা অথবা জলাশয়ে পানিফল চাষ করা সম্ভব। তুলনামূলক এর উৎপাদন খরচ কম।তিনি জানান, চলিত বছরের প্রায় ৩৭ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে চাষ হবে।





কৃষি এর আরও খবর

মোন্থার ঝড়ো বাতাসে বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারের ধান মাটিতে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি মোন্থার ঝড়ো বাতাসে বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারের ধান মাটিতে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি
শ্রীপুরে ৪ হাজার ৫’শ ২০ জন কৃষকের মাঝে  সার ও বীজ বিতরণ শ্রীপুরে ৪ হাজার ৫’শ ২০ জন কৃষকের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ
বিদেশ ফেরত সিদ্দিক মুন্সীর বারোমাসি সবজি চাষে ভাগ্য বদল বিদেশ ফেরত সিদ্দিক মুন্সীর বারোমাসি সবজি চাষে ভাগ্য বদল
পেনিকেল ব্লাইট ধানের নতুন রোগ কৃষকের স্বপ্ন কুরে কুরে খাচ্ছে পেনিকেল ব্লাইট ধানের নতুন রোগ কৃষকের স্বপ্ন কুরে কুরে খাচ্ছে
মাগুরায় কৃষকদের মাঝে শীতকালীন সবজি বীজ বিতরণ মাগুরায় কৃষকদের মাঝে শীতকালীন সবজি বীজ বিতরণ
নড়াইলে ৫ সহস্রাধিক চাষিকে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ নড়াইলে ৫ সহস্রাধিক চাষিকে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ
কেশবপুরে খুচরা সার বিক্রেতা আইডি কর্ডধারীদের বহাল রাখার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত কেশবপুরে খুচরা সার বিক্রেতা আইডি কর্ডধারীদের বহাল রাখার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত
শীতকালীন আগাম সবজি চাষে লাখপতি সুশেন বালা শীতকালীন আগাম সবজি চাষে লাখপতি সুশেন বালা
পাইকগাছায় আমনের ক্ষেতে কৃষকের স্বপ্ন দোল খাচ্ছে পাইকগাছায় আমনের ক্ষেতে কৃষকের স্বপ্ন দোল খাচ্ছে
পাইকগাছায় কৃষকদের মাঝে পুষ্টি বাগান স্থাপনে উপকরণ বিতরণ পাইকগাছায় কৃষকদের মাঝে পুষ্টি বাগান স্থাপনে উপকরণ বিতরণ

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)