শিরোনাম:
পাইকগাছা, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
বৃহস্পতিবার ● ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » কৃষি » পলিনেট হাউজ ; উপকূলের কৃষিতে সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি
প্রথম পাতা » কৃষি » পলিনেট হাউজ ; উপকূলের কৃষিতে সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি
২০৫ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পলিনেট হাউজ ; উপকূলের কৃষিতে সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি

---জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকি মোকাবেলায় উপকূলের কৃষিতে যুক্ত হয়েছে নতুন প্রযুক্তি পলিনেট হাউজ। পলিনেট হাউজ উন্নতমানের পলি ওয়েলপেপারে আবৃত চাষযোগ্য কৃষি ঘর। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে বছরব্যাপী উচ্চমূল্যের ফসল ফলানো যায়। এ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত ফসল  প্রাকৃতিক দুর্যোগেও নিরাপদ ও অক্ষত রাখা যায়। পলিনেট হাউজে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সুবিধা থাকায় ফল-ফসল ও সবজি চারা আগাম উৎপাদন করা সম্ভব।

যখন বৃষ্টির প্রয়োজন তখন  তাপপ্রবাহ। আবার যখন রোদের প্রয়োজন তখন হয় বৃষ্টি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে প্রকৃতিতে এখন এমনই টালমাটাল অবস্থা।  বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গবেষকরা বলছেন, সময় যত গড়াচ্ছে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ততই বাড়ছে। এ অবস্থায় ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে কৃষি। তাই কৃষিকে বাঁচাতে নতুন নতুন গবেষণা ও উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে বিশ্বজুড়েই।পলিনেট হাউজ তেমনই এক গবেষণার ফসল। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি নিয়ন্ত্রণ, অত্যাধুনিক সেচ ব্যবস্থাপনা, ক্ষতিকর পোকার প্রবেশ রুখে দিয়ে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের এক আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি বিজ্ঞানের এই উদ্ভাবন টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনার নতুন রূপান্তর।

পলি হাউজ তৈরি করা হয় নেট, পলি এবং লোহা বা বাঁশের অবকাঠামো দিয়ে। চারপাশে নেট গিয়ে ঘেরা হয়। আর উপরের অংশ পলিথিন বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ত্রিপল ব্যবহার করা হয়। পলিনেট হাউজ তৈরি করতে বিশেষ তাপমাত্রা সহনশীল বিশেষ পলিথিন ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী মেশিন লাগে। এর সঙ্গে জৈব সার আর নারিকেলের ছোবলা পচিয়ে বিশেষ উপাদান তৈরি করতে হয়। ভেতরে যেসব সবজির আবাদ করা হবে, সেগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আর এর ভেতরের অংশে চাষাবাদের জন্য পলিমাটি, ভরাট বালি, ছাই, গোবর সার, খৈলসহ নানা উপকরণ মিশ্রণে প্রস্তুত করা হয় চাষের জমি। সেখানে পলিথিনের আচ্ছাদন ব্যবহার করা হয়। এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ভেতরে প্রবেশে বাধা পায় এবং অতিবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফসল অক্ষত থাকে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালিতে ২০ শতক জমির ওপর এই হাউজ স্থাপন করা হয়েছে। আধুনিক কৃষির নতুন প্রযুক্তি পলিনেট হাউজ। ক্লাইমেট স্মার্ট প্রকল্পের আওতায় পাইকগাছার হরিঢালী গ্রামে গড়ে উঠেছে এ পলিনেট হাউজ। হরিঢালী গ্রামের শিক্ষিত যুবক তৈহিদুর ইসলাম পলিনেট হাউজ কৃষি প্রযুক্তি উদ্যাক্তা। তিনি মেডিকেলে ডিপ্লোমা করেছেন। কাপড়ের ব্যবসাহও করেছেন কিছু দিন। কৃষির প্রতি তার আগ্রহ বরাবর।তিনি ১২ বিঘা জমিতে বিভিন্ন উৎপাদন করেছেন।তিনি এলাকার একজন সফল কৃষি উদ্যাক্তা। তৈহিদুর ইসলাম জানান,পলিনেট হাউজ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।এখন শীত মৌসুমে বেগুন, মরিচ,টমেটো, পেপে,তরমুজসহ বিভিন্ন সবজির চারা তৈরি করবেন।তবে তার মূল লক্ষ্য তরমুজ উৎপাদন করার। এ বিষয়ে কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরমর্শ দেওয়া হচ্ছে।

পলিনেট হাউজে উচ্চমূল্যের ফসল যেমন ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, রকমেলন, রঙিন তরমুজ, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুস ও অন্যান্য অসময়ের সবজির পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।এছাড়াও গ্রীষ্মকালেও ফলবে শীতকালীন সবজি। এর মধ্যে টমেটো, ফুলকপি, বেগুন, গাজর ইত্যাদি ফসল রয়েছে। এর ফলে সবজি চাষে যেমন বৈচিত্র্য আসবে, তেমনি অনেকেই আয়ের নতুন উৎসের সন্ধান পাবে। উপরে উন্নতমানের পলিথিনের আচ্ছাদন থাকে। তাই এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ভেতরে প্রবেশে বাধা পায়। এজন্য অতি বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফসল অক্ষত থাকে। আর এই পদ্ধতিতে কৃষকরা সারা বছর সবজি চাষ করতে পারবেন। এতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সব ধরনের সবজি চাষ করে কৃষক আর্থিকভাবে সফলতা পাবেন।

গ্রিনহাউস’র আদলে দেশীয় কৃষি ব্যবস্থাপনায় নতুন সংযোজন এই পলিনেট হাউজ। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সামাল দিয়ে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ, রোগবালাইয়ের আক্রমণ প্রতিরোধ, বীজতলার মাণ নিয়ন্ত্রণ এবং অসময়ের সবজি চাষসহ আধুনিক কৃষিকাজের জন্য পলিনেট হাউজের কোনো জুড়ি নেই। এর মাধ্যমে শীতকালীন সবজি যেমন গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যাবে, তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যাবে খুব সহজেই। হাতের মুঠোয় নতুন এই প্রযুক্তি চলে আসায় কৃষককে কোনো বেগ পেতে হবে না। এই পলিনেট হাউজ প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারী বৃষ্টি, তীব্র তাপদাহ, কীটপতঙ্গ, ভাইরাসজনিত রোগ ইত্যাদির মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিরাপদ থাকবে শাক-সবজি এবং ফলমূলসহ সব ধরনের কৃষি উৎপাদন।

অত্যাধুনিক প্রক্রিয়ায় পলিনেট হাউজে উৎপাদিত ফসলের দিকেই এখন ঝোঁক বেশি কৃষকদের। তবে এখনও সবখানে নেই পলিনেট হাউজ।পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে আপাতত সরকারি উদ্যোগে খুলনা জেলার ডুমরিয়া ও পাইকগাছা একটি করে পলিনেট হাউজ  নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। তা দেখে অন্য কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠছেন। অসময়ে সবজি চাষের জন্য পলিনেট হাউজ দেশে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নতুনভাবে সংযোজন হতে যাচ্ছে। এটি তৃণমূল কৃষকের স্বপ্ন ছুঁয়ে যাবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, পলিনেট হাউজে ফসলের উৎপাদন ২০ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি পোকামাকড়ের আক্রমণও ৭০ শতাংশের কম। প্রাথমিকভাবে খরচ কিছুটা বেশি হলেও এতে উৎপাদন খরচ অত্যন্ত কম হবে।  আর নিরাপদ ফসল উৎপাদন সহজ হবে। পলিনেটে সুস্থ সবল চারা উৎপাদন করা যাবে এবং উচ্চমূল্যের ফসলও উৎপাদন করে অধিক লাভবান হতে পারবেন সাধারণ কৃষক।

উপজেলা কৃষি অফিসার অসীম কুমার দাশ জানান, উন্নতমানের পলি ওয়েলপেপারে আবৃত চাষযোগ্য কৃষি ঘর। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি নিয়ন্ত্রণ, অত্যাধুনিক সেচ ব্যবস্থাপনা, ক্ষতিকর পোকার প্রবেশ রুখে দিয়ে নিরাপদ ফসল ও চারা উৎপাদনের এক আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে বছরব্যাপী উচ্চমূল্যের ফসল ফলানো যায়। এ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত চারা ও ফসল  প্রাকৃতিক দুর্যোগেও নিরাপদ ও অক্ষত রাখা যায়। পলিনেট হাউজে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সুবিধা থাকায় ফল-ফসল ও সবজি চারা আগাম উৎপাদন করা সম্ভব। এতে কৃষক অধিক লাভবান হয়ে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, পাইকগাছায় এই  প্রথম পলিনেট হাউজ তৈরি হয়েছে। যা দেখে এখন শিক্ষিত বেকার যুবকরাও আগ্রহী এবং উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তারা আশা করছেন, পলিনেট হাউজের মাধ্যমে উচ্চমূল্যের ফসল যেমন ফলবে তেমনি অফ সিজনে অন্যান্য সবজি উৎপাদন হবে। পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগও তৈরি হবে। ফলে উপকূল অঞ্চলে সবজি চাষে বৈচিত্র্যতা আসবে। অতিমারী ও নানা দুর্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষির গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। কাজেই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৃষির টেকসই রূপান্তর ও আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পলিনেট হাউজের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে হবে।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)