শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
সোমবার ● ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » জলবায়ু পরিবর্তনে উপকুলীয় ভূমির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে
প্রথম পাতা » মুক্তমত » জলবায়ু পরিবর্তনে উপকুলীয় ভূমির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে
১২৬ বার পঠিত
সোমবার ● ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

জলবায়ু পরিবর্তনে উপকুলীয় ভূমির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে

---  জলবায়ু পরিবর্তনে নদী ভাঙ্গন- ভরাটসহ উপকুলীয় অঞ্চলে ভূমির ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীদের জীবন-জীবিকা মারাত্নক হুমকিতে পড়ছে। কৃষকরা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে লড়াই ফসল উৎপাদন করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে বৃদ্ধি পেয়েছে নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি আঘাত হানে। তন্মধ্যে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, নদী ভাঙ্গন এবং ভূমি ধংসের মাত্রা বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে পরিবর্তনশীল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারনে বিশাল এক জনগোষ্ঠির জীবিকাকে এখন হুমকির মুখে। 

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত ঝূঁকিপূর্ণ।এখানে ক্রমবর্ধমান হারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, বেড়িবাঁধ ভাঙন, অধিক বৃষ্টিপাত, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, খরা ও লবনাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদি নিত্যদিনের সঙ্গী। বাংলাদেশের উপকূলে বসবাসকারী মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল পরিবর্তশীল উপকূলরেখা।বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের কারনে হিমালয়ের বরফগলা পানিসহ উজানের নেপাল ও ভারতের বৃষ্টিপাতের পানি বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নদ-নদী গঙ্গা,ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। প্রতি বছর গড়ে ১০৯৪ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং প্রতি বছরই প্রায় ১৫ লাখ হেক্টর চাষের জমি বন্যা ও জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। যার ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষির জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। উপরন্ত শীতকালে পানির স্রোত কম থাকায় সামুদ্রিক লোনাপানি উজানে প্রবেশ করছে। যার ফলে চাষাবাদ নিয়ে  সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে  উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ।  

বাংলাদেশে ৭১০ কিলোমিটার উপকুলীয় সমুদ্র তটরেখা রয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবন উপকূল ঘিরে রয়েছে ১২৫ কিলোমিটার এবং কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত ৮৫ কিলোমিটার। সমুদ্র উপকূল বরাবর রয়েছে গঙ্গা ও মেঘনা অববাহিকায় অবস্থিত প্রশস্ত জোয়ারভাটা সমভূমি এবং অসংখ্য নদী মোহনার ব-দ্বীপ। নদী সঙ্গমের ব-দ্বীপগুলো ও সমুদ্রে তটরেখা বরাবর ভূ-খন্ড প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। বিগত ২০ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এর পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে৷ অধিকন্তু চট্টগ্রামের সমুদ্র তটরেখা সংকুচিত হচ্ছে এবং ভূ ভাগের দিকে এগিয়ে আসছে। এছাড়া জলোচ্ছ্বাস বা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলের অবকাঠামো বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়েছে। ফলে অবাধে লোনাপানি প্রবেশ করে জলবদ্ধতাকে স্থায়ী রূপ দিচ্ছে। এক দিকে ভূমি সম্প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে নদী ভাঙ্গনের ফলে ক্রমাগত উপকূলরেখা হারিয়ে যাচ্ছে।উপকূলের নদী ভাঙনের ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের  ব্যবসা-বাণিজ্য, হোটেল, সংরক্ষিত বন, বসতবাড়ি এবং পার্ক  নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।প্রতি বছর  বনভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির বিপুল সংখ্যক গাছ উপড়ে যায় এবং  মারা যায়। এতে বনাঞ্চলের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।

বাংলাদেশে  সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, উপকূলীয় এলাকার নদী ও কৃষিজমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, হিমালয়ের অস্বাভাবিক বরফ গলার কারনে নদীর দিক পরিবর্তন, অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি সবদিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।  বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে শীর্ষ। আর দেশের মধ্যে শীর্ষে আছে উপকূলীয় অঞ্চল।

উপকূলের পাইকগাছায় শিবসা নদী নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে আবার কপোতাক্ষ নদের দুই পাড়  ক্রমাগত ভাঙ্গনের ফলে উপকূলরেখা হারিয়ে যাচ্ছে। উপকূলের নদ-নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম শিবসা নদী। কপোতাক্ষের শেষ প্রান্ত হতে শুরু হয়েছে শিবসা। যা মিশেছে সুন্দরবন উপকূলে।গত কয়েক বছরের ব্যবধানে নদীটি প্রায ভরাট হয়ে যাওযার উপক্রম হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর। শিবসা নদীর দৈর্ঘ্যে  প্রায় ১৫ কিলোমিটার যা ভরাট হয়ে গেছে।  ---

বর্ষাকালে সামগ্রিকভাবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং শুষ্ক মৌসুমে অতিরিক্ত খরা দেখা যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টিপাত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত না থাকলেও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারনে ফসলের খুব ক্ষতি হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ঘন ঘন বৃষ্টিপাত কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন করেছে।জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষকরা কেবল ফসলের ধরণ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়নি বরং ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং জলোচ্ছ্বাসের কারনে কৃষি উৎপাদন মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উপকূল এলাকার কৃষির মৌসুম পিছে গেছে। অন্য এলাকা থেকে প্রায় এক মাস পরে আবাদের পরিবেশ তৈরি হয়। আবার  উপকূলীয় এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির অভাবের কারনে খরার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু বিপর্যয় ঘূর্ণিঝড়,বন্যা এবং জলোচ্ছ্বাস এবং লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় প্রতি বছরই গ্রীষ্মে ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যা  উপকূলীয় মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে প্রাণহানি এবং সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়াও জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় উপকূলবর্তী মানুষের ঘর-বাড়ি, গবাদি পশু, ফসল ও ফসলের জমি। অনেক প্রান্তিক চাষী ঋণ করে জন্মানো ফসল হারিয়ে হয়ে পড়ে নিঃসম্বল।

জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ নির্ভর উপজীবিকারা তাদের জীবিকা হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়ছে।  মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় স্বাদু পানির জেলে, সমুদ্রগামী জেলে এবং মোহনাগামী জেলে তাদের জীবিকার উৎস হারাচ্ছে।এতে দেশের বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। বর্তমানে এরকম ঝুঁকির মধ্যে আছে উপকূলের এক লাখেরও বেশি জেলে। এছাড়া ঘন ঘন বন্যা বা দীর্ঘমেয়াদী বন্যা মানুষের কাজের সুযোগ কমিয়ে দেয়।এর ফলে উপকূলীয় এলাকার লোকেরা শহরমুখী হচ্ছে।

 জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।আগে ১৫ কিংবা ২০ বছর পর পর বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও বর্তমানে অস্বাভাবিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে তা প্রত্যেক বছরে হানা দিচ্ছে। সুপার সাইক্লোন যার ঢেউয়ের উচ্চতা ১৬ ফুট বা প্রায় ৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এগুলো বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার জন্য উপকূলবাসীদের প্রস্তুত থাকতে হয়। সব কিছু মিলে জলবায়ু-জনিত বিপর্যয় এবং নদী ভাঙ্গন- ভরাটসহ উপকুলীয় অঞ্চলে ভূমির ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে উপকূলের বিশাল এক জনগোষ্ঠির জীবিকা এখন হুমকির মুখে। 





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)