শিরোনাম:
পাইকগাছা, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

SW News24
সোমবার ● ৩০ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » স্যানিটারি প্যাড স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিম্নবিত্তের দুঃখ
প্রথম পাতা » মুক্তমত » স্যানিটারি প্যাড স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিম্নবিত্তের দুঃখ
৯ বার পঠিত
সোমবার ● ৩০ জুন ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

স্যানিটারি প্যাড স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিম্নবিত্তের দুঃখ

প্রতি মাসে মেয়েরা পিরিয়ড এর সম্মুখীন হয়, যা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য স্যানিটারি প্যাড একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, তবে নিম্নবিত্ত নারীদের জন্য এটি একটি বড় কষ্টের কারণও বটে। স্যানিটারি প্যাড একটি ব্যয়বহুল পণ্য, যা অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য সহজলভ্য নয়। অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্যানিটারি প্যাড সহজে পাওয়া যায় না। স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের অভাবে অনেক নারী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাসিক পরিচালনা করতে বাধ্য হন, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৬.৮ শতাংশ নারীর মধ্যে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী তিন কোটি ৯০ লাখ। তবে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর ৯৪.১ শতাংশ নারী এখনো মাসিক ব্যবস্থাপনার বাইরে রয়ে গেছে, যারা এখনো পুরনো কাপড়ই ব্যবহার করে। মাসিক নিয়ে সচেতনতার অভাবে নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। ভিন্ন ভিন্ন জরিপে দেখা যায়, এখনো দেশের ৭১ থেকে ৮৩ শতাংশ নারী মাসিকের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না। মাসিকের সময় অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহার করার কারণে তাঁরা সংক্রমণঝুঁকিতে পড়েন। অনেকে রাসায়নিক সুগন্ধিযুক্ত প্যাড ব্যবহার করেন, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

নারী-শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ‍্য হিসেবে স‍্যানেটারি প্যাড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পিরিয়ডের সময় অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতি ব‍্যবহার করলে যে কোন নারী-শিশুজটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। বাংলাদেশে এখনো স‍্যানেটারি প্যাডের ব্যবহারে তেমন সচেতনতা তৈরি হয়নি। এ ক্ষেত্রে সচেতনতার পাশাপাশি বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে খরচ বা দাম।

বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে কাপড় ব্যবহার না করার পরামর্শ দেয়া হয় এবং প্যাড ব্যবহারে সচেতন করা হয়। তবে, প্যাডের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত নারীরা প্যাড ব্যবহার করতে পারছেন না। বাহির থেকে ইমপোর্ট করা প্যাডের মূল্য অনেক বেশি হয়ে থাকে, যা সাধারণ মানুষের জন্য ক্রয় করা কঠিন। ইমপোর্ট করা প্যাডের উচ্চমূল্যের কারণে অনেকেই তা কিনতে পারেন না।

স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের অভাবে নারীদের যে স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলো হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাসিক পরিচালনা করলে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাল সংক্রমণ হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে ভেজা কাপড় ব্যবহারের কারণে র‍্যাশ, চুলকানি, বা অন্যান্য চর্মরোগ হতে পারে। সংক্রমণ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা প্রজনন স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে দুশ্চিন্তা এবং অস্বস্তি থেকে মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে।

দেশীয় কোম্পানিগুলোও প্যাডের দাম বাড়িয়েছে। দেশীয় সব প্যাডের মধ্যে সেনোরা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তবে এর উচ্চমূল্যের কারণে অনেক মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত নারী এই প্যাড কিনতে অক্ষম। সেনোরা রেগুলার প্যাকেটের দাম ১০০-১৩০ টাকা, যেখানে ১০-১৫টি প্যাড থাকে। ফ্রিডমের দাম ১১০-২০০ টাকা এবং কনফিডেন্স প্যাডের দাম ১৫০ টাকা। প্যাড চেঞ্জ করতে হয় ৬ ঘণ্টা পর পর। কিন্তু ফ্লো এর উপর নির্ভর করে কখনো ৬ ঘণ্টার আগেও প্যাড চেঞ্জ করতে হয়, নাহলে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে। অনিয়মিত পিরিয়ড এর ক্ষেত্রে মাসে ৩-৪ প্যাকেট প্যাড প্রয়োজন, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সাধ্যের বাইরে। অনেকেই প্যাড কিনতে না পেরে কাপড় ব্যবহার করেন।

প্রতিমাসে প্যাডের পেছনে গড়ে ৩০০ টাকা খরচ হয়। উচ্চবিত্তদের জন্য হয়তো এই খরচ সহজেই বহন করা সম্ভব, কিন্তু মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের জন্য ৩০০ টাকা অনেক। যদি একটি পরিবারে ২-৩ জন মেয়ে থাকে, তাহলে প্রতি মাসে ৬০০-৯০০ টাকা বরাদ্দ রাখতে হয় প্যাডের জন্য, যা অনেকের জন্য অসম্ভব। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে টিউশনি করে পড়াশোনা করে। প্রতি মাসে প্যাড কেনার জন্য তাকে ৩০০ টাকা বরাদ্দ রাখতে হয়। শিক্ষার্থী এবং মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তদের কথা চিন্তা করে যদি প্যাডের দাম ৭০-৮০ টাকা করা হয়, তাহলে তার কাপড়ের দিকে ঝুঁকবে না।

প্যাড কোম্পানিগুলো প্রায়শই প্যাডের প্রয়োজনীয়তা এবং স্বাস্থ্যসচেতনতার কথা বলে প্রচারণা চালায়। তবে, তাদের মনে রাখা উচিত প্যাডের দাম যদি না কমানো হয়, তাহলে এটি নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তদের জন্য ক্রয় করা অসম্ভব হয়ে যাবে। লক্ষ্য যদি হয় মেয়েদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো, তাহলে সবার কথা মাথায় রেখে প্যাডের দাম কমিয়ে আনা উচিত, যাতে সবাই এটি কিনতে পারে এবং নিজেদের ক্যান্সার ঝুঁকিমুক্ত রাখতে পারে। দেশীয় কোম্পানিগুলো যদি প্যাডের দাম কমিয়ে আনে, তাহলে সব শ্রেণীর নারীই তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন।





আর্কাইভ