

রবিবার ● ১৯ অক্টোবর ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » আলোর উৎসব দীপাবলি
আলোর উৎসব দীপাবলি
প্রকাশ ঘোষ বিধান
দীপাবলি আলোর উৎসব। দীপাবলির এই দিনটিতে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িগুলি আলোকসজ্জায় আলোকিত হয়। যার ফলে এটি আলোর উৎসব হয়ে ওঠে। দীপাবলি শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ দীপ থেকে, যেখানে দীপা মানে লণ্ঠন বা প্রদীপ। দীপাবলি অশুভ শক্তি নাশেরও উৎসব। এটি আধ্যাত্মিক অন্ধকারের ওপর আলোর বিজয়, মন্দের ওপর ভালোর, এবং অজ্ঞতার ওপর জ্ঞানের প্রতীক।
দীপাবলি হলো হিন্দুদের একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এটি হিন্দু পঞ্জিকায় কার্তিক মাসে অনুষ্ঠিত হয়, যা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে পড়ে। এই দিন সব হিন্দুর বাড়িতে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। তবে বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ধর্মালম্বীরাও এই সময়ে একই ধরনের উৎসব পালন করে থাকেন। এই প্রদীপ জ্বালানো অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক।
দীপাবলি নামটির অর্থ প্রদীপের সমষ্টি। এই দিন হিন্দুরা ঘরে ঘরে ছোটো মাটির প্রদীপ জ্বালেন। দীপাবলির অনুষ্ঠানে সারি-সারি প্রদীপের আলোতে স্বর্গের দেবতাকে গৃহে বরণ করে নেওয়া হয়। এই উৎসবের উৎপত্তি বা শুরুর কারণ এবং সময় সম্বন্ধে সঠিক তথ্য না মিললেও, নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে দীপাবলি একটি অতি প্রাচীন উৎসব। বেদে দীপাবলি উৎসবের উল্লেখ না মিললেও, পদ্মপুরাণ এবং স্কন্ধপুরাণে দীপাবলির উল্লেখ পাওয়া যায়।
দীপাবলি আসলে বিজয়ীর উৎসব। দীপাবলি হল ভগবান রামচন্দ্রের দীর্ঘ বনবাসের পরে নিজ নগরী এবং নিজ গৃহে ফেরার দিন। ভগবান বিষ্ণুর বৈকুণ্ঠে দেবী লক্ষ্মীর কাছে ফেরা এবং ভগবান বিষ্ণু এবং দেবী লক্ষ্মীর বিয়ের দিনও দীপাবলি হিসাবে পরিচিত।
এ ছাড়া আরও অনেকগুলো গল্প জড়িয়ে রয়েছে দীপাবলির সঙ্গে। রামায়ণ মতে, একদা এই দিনে অযোধ্যায় আলো জ্বলে, উৎসবে মেতেছিল, কারণ লঙ্কাকাণ্ড সমাধান করে রামচন্দ্র এই দিনেই অযোধ্যায় পৌঁছেছিলেন। শুনে ভারতবর্ষের প্রতিটি সন্তান শান্তির প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন, ঘরে ঘরে কোটি কোটি সীতা আনন্দে আলো জ্বেলেছিলেন। কেউ কেউ বলেন, দীপাবলির আলো জ্বেলে আমরা আসলে নরকাসুরে জয়ের ঘটনা স্মরণ করি। এমনি এক অমাবস্যার রাতেই নাকি শ্রীকৃষ্ণের হাতে নিহত হয়েছিলেন ত্রিলোকের ত্রাস নরকাসুর। ষোল হাজার বন্দিনী নারী মুক্তি পেয়ে আবার সংসারে ফিরে এসেছিলেন, ঋষিরা আবার দিনের আলো দেখতে পেয়েছিলেন। কলঙ্কমুক্ত পৃথিবী তাই সেদিন আলোয় আলোয় অপরূপা সেজেছিল, মর্ত্যবাসী আনন্দে হেসেছিল। আবার কেউ কেউ বলেন, ভারতের দরিদ্রতম মানুষটিও অন্ধকার রাতে আলো জ্বেলে একদিন উৎসবে মেতেছিল, কারণ সেই চতুর্দশী সন্ধ্যায়ই সংবাদ এসেছিল, পরাজিত শকেরা পলায়নের পথ খুঁজছে, স্বদেশে রাজা বিক্রমাদিত্য তাদের উৎখাত করতে সমর্থ হয়েছেন। শুনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল ভারতবর্ষ। দীপাবলির এ আলো তারই স্মারক।
উত্তর ভারতীয় হিন্দুদের মতে দীপাবলির দিনেই শ্রীরামচন্দ্র চৌদ্দ বছরের নির্বাসনের পর অযোধ্যা ফেরেন। নিজের পরমপ্রিয় রাজাকে ফিরে পেয়ে অযোধ্যাবাসীরা ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে সাজিয়ে তোলেন তাদের রাজধানীটাকে।
জৈন মতে, ৫২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহাবীর দীপাবলির দিনেই মোক্ষ বা নির্বাণ লাভ করেছিলেন। ১৬১৯ খ্রিষ্টাব্দে শিখদের ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ ও ৫২ জন রাজপুত্র দীপাবলির দিন মুক্তি পেয়েছিলেন বলে শিখরাও এই উৎসব পালন করেন।
আর্য সমাজ এই দিনে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মৃত্যুদিন পালন করে। তারা এই দিনটি শারদীয়া নব-শস্যেষ্টি হিসেবেও পালন করেন। এছাড়া, নেপাল-ভারত-বাংলাদেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেই এই উৎসব নিয়ে উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়।
লেখক; সাংবাদিক ও কলামিস্ট