শিরোনাম:
পাইকগাছা, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ন ১৪৩২

SW News24
শুক্রবার ● ৩১ অক্টোবর ২০২৫
প্রথম পাতা » কৃষি » পেনিকেল ব্লাইট ধানের নতুন রোগ কৃষকের স্বপ্ন কুরে কুরে খাচ্ছে
প্রথম পাতা » কৃষি » পেনিকেল ব্লাইট ধানের নতুন রোগ কৃষকের স্বপ্ন কুরে কুরে খাচ্ছে
৮৯ বার পঠিত
শুক্রবার ● ৩১ অক্টোবর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পেনিকেল ব্লাইট ধানের নতুন রোগ কৃষকের স্বপ্ন কুরে কুরে খাচ্ছে

--- পাইকগাছায় আমন ধানের অবাদ ভালো হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেতে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ পেনিকেল ব্লাইট ও কারেন্ট পোকা আক্রমণে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকের ক্ষেতের ধান পোকায় কুরে কুরে খাচ্ছে। সোনালি স্বপ্ন এখন চোখের জলে ভাসছে। বারবার কিটনাশক ব্যাবহার করেও কোন কাজ না হওয়ায় কুষকরা হতাশ। অনেকের আবাদ করার খরচ উঠবে না। হঠাৎ  পেনিকেল ব্লাইট ও কারেন্ট পোকা আক্রমণে ভালো ফসল ঝলসে ছারখার হয়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে কুষকরা।

পেনিকেল ব্লাইট ব্যকটেরিয়া জনিত দানা পঁচা রোগ বা দানা ঝলসানো নামেও পরিচিত। যা সাধারণত ধানের শীষে আক্রমণ করে এবং একে দানা পচা বা দানা ঝলসানো রোগও বলা হয়। Burkholderia glumae নামক ব্যাকটেরিয়া এই রোগের কারণ, যা বিষাক্ত টক্সোফ্লাভিন নিঃসরণ করে। রোগটি সাধারণত উষ্ণ, আর্দ্র আবহাওয়ায় এবং উচ্চ আর্দ্রতার ৮০ ভাগ  পরিবেশে দ্রুত ছড়ায়। অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার এবং ঘন করে চারা রোপণ করলে এর প্রকোপ বাড়ে। ধানের শীষ বের হওয়ার পর দুধ আসার আগেই শীষের দানাগুলো আংশিক বা সম্পূর্ণ চিটা হয়ে যায়। সুস্থ দানাগুলোর তুলনায় আক্রান্ত দানাগুলো হলুদ রঙের হয় এবং অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট বিষাক্ত টক্সোফ্লাভিনের কারণে হলুদ আভা দেখা যায়।---

পাইকগাছায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধানের থোড় থেকে শীষে ধান হলুদ লালছে হয়ে বের হচ্ছে। যা পেনিকেল ব্লাইট ব্যকটেরিয়া জনিত দানা পঁচা রোগ বা দানা ঝলসানো রোগের আক্রমণে হচ্ছে। সবুজ ধানগাছের মধ্যে লালছে বা পোড়া বাদামি রঙের গাছ রয়েছে। পোকা দমনে কৃষকরা কীটনাশক স্প্রে করছে। তবে তেমন কোন কাজ হচ্ছে না। তাছাড়া বাদামি গাছ ফড়িং এর আক্রমণ তো রয়েছে। তবে কৃষকরা ধানের কারেন্ট পোকা বলায় নামটির ব্যাপক পরিচিতি ঘটেছে। বিদ্যুতে স্পর্শ করলেই সর্বনাশ, এমন ধারণা থেকে পোকাটির নাম হয়েছে কারেন্ট পোকা। দেখতে প্রায় উকুনের মতো। ধানগাছের নিচের অংশে অবস্থান করে প্রথমে রস চুষে খায়। পরে ধানগাছ লাল বা পোড়া বাদামি রঙের হয়ে যায়।  দেখলে মনে হবে আগুনে ঝলসে গেছে। অবশেষে আক্রান্ত ধানগাছ মারা যায়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ছলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৩ হাজার ৩শ ৩০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। যার মধ্যে পাঁচ হেক্টর জমির ধান গাছে কারেন্ট পোকা আক্রমণের শিকার হয়েছে। তাছাড়া আমনের আবাদ খুব ভালো হয়েছে। উচু জমির ধান আগামী সপ্তাহ থেকে কাটা শুরু হবে।

উপজেলার মটবাটি গ্রামের কৃষক মোসলেম গাজী বলেন, সাত বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলাম। বর্তমানে কারেন্ট পোকার আক্রমণে ধানের সর্বনাশ হয়েছে। ফসল ভালো হলেও পোকার আক্রমণে ধান চিটা হচ্ছে ও গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। তিনি বলেন,ক্ষেতে চার বার ঔষধ ও কিট নাশক ব্যাবহার করেছি, তবে লাভ হয়নি। অনেক টাকা খরচ হচ্ছে কোন কাজ হলো না। আর্থিকভাবে খুব ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি।  হিতাপুর গ্রামের কৃষানী রিতা বিশ্বাস জানান, তার ক্ষেতের ধানের শীষ শুকিয়ে ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। ঔষধ ও কিট নাশক ব্যাবহার করেও কোন ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

পোকা আক্রমণের শিকার বিভিন্ন এলাকার কৃষক জানান, কারেন্ট পোকার আক্রমণ থেকে ধান বাঁচাতে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। তবে যে গাছে পোকা আক্রমণ করেছে, সেগুলো বাঁচানো যাচ্ছে না। যে কারণে এবার ধানের উৎপাদন কম হবে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক লিফলেট ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও কেনো কাজ হচ্ছে না। আবাদ করার খরচ উঠছে না। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ একরামুল হোসেন বলেন, ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ পেনিকেল ব্লাইট সম্পর্কের ধারণা খুব কম। তাছাড়া কৃষকরা না শুনে না বুঝে গাছের উপরের অংশে স্প্রে করছেন। অথচ এই পোকা গাছের নিচের অংশে অবস্থান করে। আক্রান্ত ধানগাছের নিচের অংশে বিলি করে কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হলেও তারা তা করছেন না। পাশাপাশি ক্ষেতে এক জন কৃষক কীটনাশক স্প্রে করছে কিন্তু অন্য জন একই সময় স্প্রে না করায় পোকা ঠিকমত দমন হয়নি। কারেন্ট পোকা থেকে ধানগাছ বাঁচাতে ইতোমধ্যে কৃষকদের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, উঠান বৈঠাক, ক্ষেতে আক্রান্ত পোকার ভিডিও প্রদর্শন করাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)