শিরোনাম:
পাইকগাছা, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
শনিবার ● ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » প্রবীণদের সুরক্ষা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » প্রবীণদের সুরক্ষা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব
১০৮৮ বার পঠিত
শনিবার ● ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

প্রবীণদের সুরক্ষা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব

---
প্রকাশ ঘোষ বিধান।।
বার্ধক্য মানুষের জীবনে এক সার্বজনীন প্রক্রিয়া। জীবনে বার্ধকের বাস্তবতাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। শিশু থেকে শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের কর্মোদ্দীপনার পর প্রকৃতির নিয়মে সবাইকে বার্ধক্যে গমন করতে হয়। বার্ধকের স্বাদ সবাইকে নিতে হবে। এ থেকে রেহাই পাওয়ায় কোন উপায় নেই। আর মৃত্যুর মধ্যদিয়ে জীবনের ঘটবে সমাপ্তি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতিতে সারাবিশ্বে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবীণদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯২১ সালে এ দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল যেখানে মাত্র ২০ বছর সেখানে বর্তমানে তার বেড়ে ৭০ বছর পেরিয়ে গেছে। বিশ্ব ব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা, চিকিৎসা প্রযুক্তি এবং জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে ফলশ্র“তিতে মানুষের গড় আয়ু বেড়েই চলেছে।
১ অক্টোবর বিশ্ব প্রবীণ দিবস পালন করা হয়। বিশ্বব্যাপী প্রবীণরা নিগৃহীত, অবহেলিত ও তাদের মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। বিশ্বে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর অবদানের স্বীকৃতি এবং তাদের জীবন-যাপনের প্রভাব নির্ণয় করাই এই দিবসটি উদযাপনের মূল লক্ষ্য। জাতি সংঘ সাধারণ পরিষদ বিশ্বের প্রবীণ সমাজের বিষয় চিন্তা করে ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর একটি চার্টার ঘোষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯১ সাল থেকে প্রতি বছর ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর সকল দেশে ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের আপমর জনসাধারণকে প্রবীণ দিবসের তাৎপর্য, লক্ষ্য ও গুরুত্ব এবং বিশেষ করে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত ও সচেতন করার উদ্দেশ্যে দিবসটি পালন করা হয়।
জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী ৬০ বছর বয়স সীমাকে বার্ধক্যের সময়কাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্য এই পাঁচটি স্তরে মানুষের জীবনকে ভাগ করা হয়েছে। বার্ধক্য একটি সার্বজনীন প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া মানব জীবনে জৈবিক, দৈহিক এবং সামাজিক ভাবে পরিবর্তন নিয়ে আসে। জীবনের প্রথম ভাগ শৈশব আর শেষভাগ বার্ধক্য। মূলত বৃদ্ধ বয়স হচ্ছে জীবনের শেষ সময়, যার সমাপ্তি ঘটে মৃত্যু মধ্য দিয়ে। শৈশব ও বার্ধক্যের মধ্য মানুষের জীবনে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। জীবনের এই দুই সময়ে মানুষ অন্যের উপর  নির্ভরশীল থাকে। বার্ধক্য মানুষকে জরাজীর্ণ, শীর্ণ ও ব্যধিতে গ্রাস করে। বৃদ্ধ অবস্থায় মানুষ দুর্বল থাকে। কর্মাক্ষম হয়ে শারীরিক দুঃখ-কষ্টে অসহায় হয়ে পড়ে। সাধারণত বৃদ্ধ কালে মানুষ ছেলে-মেয়ে উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং তাদের আশ্রয়ে জীবন যাপন করে।
প্রকৃতির নিয়মে মানুষ শিশু থেকে বার্ধক্যে উপনিত হয়। সবাইকে বার্ধক্য বয়সে পরিণত হতে হবে। বার্ধক্য থেকে কেহই মুক্তি লাভ করতে পারে না। বার্ধক্য জীবনের এক নির্মম পরিনিতি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে বর্তমানে দেশে ৬.২ শতকারা হারে মানুষ প্রবীণ, অর্থাৎ যাদের বয়স ৬০ বছরের উর্দ্ধে। দেশে প্রবীণ জনসংখ্যা প্রায় ৮৫ লাখ। তবে বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ্য ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের তথ্যে দেখা যায়, দেশে প্রবীণ জনসংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখের বেশী। তাদের গবেষণাধর্মী প্রবন্ধে বলা হয়েছে ২০২৫ সালে দেশে প্রবীণ জনসংখ্যা হবে ১ কোটি ৮০ লাখ এবং ২০৫০ সালে এই সংখ্যা হবে ৪ কোটি ৪০ লাখ। জাতিসংঘের হিসাব মতে ২০৫০ সালের মধ্য ৬০ বছর তদুর্ধ্ব বয়সীদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বর্তমান ৮ শতাংশ প্রবীণ জনগোষ্ঠী, যাহা ২০৫০ সালে প্রায় ২২ শতাংশে পরিণত হবে। বাংলাদেশে ৬০ বছরের উর্দ্ধে বয়সী প্রবীণ জনসংখ্যার মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ। ২০৫০ সালে এই প্রবীণ জনসংখ্যা প্রায় ১৭ শতাংশ হবে। বাংলাদেশ তথা বিশ্বে যে হারে ৬০ বছর উর্দ্ধ জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে ২০৫০ সালে প্রবীণদের সংখ্যা নবিনদের ছাড়িয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছে।
আমাদের সমাজে প্রবীণদের জীবন-যাপন অমানবিক ও তার চিত্র খুবই করুণ। আমাদের দেশে বেশির ভাগ প্রবীণরা কর্মহীন থাকায় তারা সামাজিক মর্যাদা টুকু পায় না। আর্থসামাজিক কারণে প্রবীণরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা অবহেলা আর অনাদরের শিকার হচ্ছে। সমাজ-সংসার সব খানে প্রবীণরা উপেক্ষিত। প্রবীণরা কর্মহীন থাকায় চরম হতাশায় ভেগে। সংসারে পরাধিন জীবন যাপন আর সবক্ষেত্রেই যেন একটা তাচ্ছিল্যভাব। সমাজ-সংসারে প্রবীণদের বোঝা বলে মনে করা হয়। যা প্রবীণদের কাছে মর্যাদাহীন ও মনকষ্টের কারণ। প্রবীণরা নতুন প্রজন্মের পথ প্রদর্শক, কালের সাক্ষী। দক্ষতার কোন বিকল্প নেই এবং অভিক্ষতা অমূল্য সম্পাদ। যুব সমাজকে উজ্জীবিত করতে পারে প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও চিন্তাধারা। পথভ্রষ্ট যুবসমাজকে প্রতিকৃৎ এর ন্যায় চালিত শক্তিতে পরিণত করতে পারে প্রবীণরা। প্রবীণ জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রবীণের পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা আর নবীণের কর্মউদ্দীপনা শক্তির যুগলবদ্ধীতেই সমাজের মুক্তি আসবে।
প্রবীণরা আমাদের পূর্বসূরী। প্রবীণ জনগোষ্ঠী তাদের কর্মময় জীবন অত্যন্ত উৎসহ, উদ্দীপনা এবং আন্তরিকতার সাথে নিজ নিজ পরিবার, সমাজ গঠন তথা দেশ গঠনে নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন। তাই প্রবীণ জনগোষ্ঠী সমাজে যথাযোগ্য মর্যাদা ও সম্মানের সাথে বসবাস করতে পারা তাদের মৌলিক অধিকার। আর তাদের মৌলিক ও মানবিক অধিকার অক্ষুন্ন রাখা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। প্রবীণরা যাতে পরিবার থেকে বিতাড়িত না হয় এবং নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে যে ব্যাপারে আমাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রবীণরা জীবন সায়াহ্নে স্বস্তির মধ্যদিয়ে হাসি-খুশিতে থাকতে পারে সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে। পরিবারে প্রবীণ ব্যক্তিদের চাহিদা ও মানবিক অধিকার পূরণে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়েও আমাদের আরো অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।

লেখক ঃ সাংবাদিক





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)