শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
রবিবার ● ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বিশ্ব বেতার দিবস: বেতার ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বিশ্ব বেতার দিবস: বেতার ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়
৩৫৩ বার পঠিত
রবিবার ● ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বিশ্ব বেতার দিবস: বেতার ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়

                                              শাহাদাত হোসেন=---

প্রযুক্তির কল্যাণে আজ আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ, বিনোদন এবং তথ্য পাচ্ছি খুব সহজেই। কিন্তু এক সময় বেতার ছাড়া এগুলো কল্পনা করা যেতো না। তথ্য ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে বেতারও নিজের অবস্থানকে ধরে রাখতে আধুনিক রুপ ধারণ করেছে। এখন আর ব্যাটারি চালিত রেডিও সেট নিয়ে বেতারের বিভিন্ন তথ্য পেতে হয় না। বেতার এখন হাতের মুঠোয় এবং ভ্রাম্যমান হয়েছে। মোবাইলে আজ সহজেই বেতারের বিভিন্ন কেন্দ্রের সংবাদ ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান শোনা যাচ্ছে। মোবাইল অ্যাপস এবং ফেসবুক লাইভে এখন বেতার নিজের যায়গা দখল করে নিয়েছে। মোবাইলের সাহায্যে সহজেই বেতার থেকে সহজেই যেকোন তথ্য পাচ্ছে শ্রোতারা। তাইতো এখন আর আয়োজন করে রাস্তার মোড়, চায়ের দোকান কিংবা বাড়ির উঠানে একসাথে বেতার শ্রোতারা ভীড় জমায় না।

১৩ ফেব্রয়ারি বিশ্ব বেতার দিবস। এবছর বেতার দিবসের প্রতিপাদ্য “সবাই মিলে বেতার শুনি, বেতারেই আস্থা রাখি”। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ প্রচারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ বেতার। এছাড়াও কমিউনিটি রেডিও এফএম সম্প্রচারের মাধ্যমে স্থানীয়, জাতীয়, আন্তর্জাতিক এবং বিনোদনমূলক বিভিন্ন তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। অ্যাপসের মাধ্যমে সহজেই রেডিও শোনা যাচ্ছে বলে এর শ্রোতা দিন দিন বাড়ছে। সকালে আবহাওয়ার খবর দিয়ে শুরু করে শ্রোতারা সারাদিন বিভিন্ন তথ্য, স্বাস্থ্য সংবাদ ও বিনোদন পেয়ে থাকে বেতার থেকে। তাইতো বেতার আজ নিত্যদিনের সঙ্গী। বেতার সবচেয়ে প্রাচীন এবং জনপ্রিয় গণমাধ্যম হওয়ায় এর গ্রহণযোগ্যতা সর্বত্র। শ্রোতারা সত্য ও নির্ভরযোগ্য সংবাদ পাচ্ছে বলে আস্থার মাধ্যম হয়েছে বেতার। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা দেশাত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হতে শিখেছে বেতার থেকে। তাই বেতারের সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

আমাদের দেশে বেতারের শ্রোতা কত এবং কতগুলো রেডিও আছে তা বলা কঠিন। তবে মোবাইল ব্যবহারকারী সকলেই একজন বেতার শ্রোতা। কারণ খুব কম মোবাইল আছে যেখানে রেডিও শোনার ব্যবস্থা নাই। মোবাইলে সহজেই রেডিও শোনার ব্যবস্থা আছে বলে আলাদা করে সেট নেয়ার প্রয়োজন হয় না। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর টেলিভিশন ব্যবহার কিংবা পত্রিকা পড়ার সুযোগ থাকে না বলে তারা আজ বেতারের উপর নির্ভরশীল। বেতারের মাধ্যমে তারা সহজেই বিভিন্ন খবর ও প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে থাকে। আর এর জন্য তাদের আলাদাভাবে রেডিও সেট কিনতে হয় না। তারা সহজেই মোবাইলের মাধ্যমে রেডিও শুনে বলে ইচ্ছামতো তথ্য ও বিনোদন পেয়ে থাকে।

বেতার এখন শুধু প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নয় বরং ইট পাথরের ব্যস্ত নগরীতেও স্থান করে নিয়েছে। যানজট ও ব্যস্ত নগরীতে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বেতার। এফএম কিংবা অ্যাপসের মাধ্যমে ক্লান্তি নিবারণ করতে শ্রোতারা ফিরে আসছে বেতারের সাথে। যানজট পরিস্থিতি, দেশ বিদেশের হালচাল, আগাম আবহাওয়া বার্তা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিভিন্ন তথ্য সহজেই পাচ্ছে বেতার থেকে। স্যাটেলাইটের ভীড়ে বেতার হারিয়ে যাবে এমন ভাবনা আজ অবাস্তব। কৃষক তার জমিতে ভালো ফসল ফলাতে বেতারের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য নিচ্ছে। নারীরা তাদের শরীরের যতœ ও গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যার তথ্য নিতে বেতারে কান পাতছে। আবার মাঠে কিংবা দোকানে সর্বত্র একটু অবসরে বিনোদনের খোরাক যোগাচ্ছে বেতারের বিভিন্ন গান ও অনুষ্ঠান। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য আসর, ঘরে বসে শিখি, আমার ঘরে আমার স্কুল ইত্যাদি অনুষ্ঠান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ করে যাচ্ছে। তাইতো বেতার আজ সবার জন্য সবখানে।

বর্তমানে চিকিৎসা, কৃষি ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির প্রচার মাধ্যম বেতার। বেতার জনস্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি ইত্যাদির কথা বলে। কৃষি অফিসার, ডাক্তার, শিক্ষক ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের বেতার কেন্দ্রে আমন্ত্রণ জানিয়ে সমস্যার সমাধান করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়। এখন আর বিভিন্ন অফিসে যাওয়া লাগে না। কৃষকরা বেতার থেকেই কৃষি অফিসের পরামর্শ নিতে পারে। সুবিধা বঞ্চিত বা প্রতিবন্ধীরা সমাজসেবা থেকে কীভাবে সেবা নিতে পারবে তার বিস্তারিত জানতে পারে বেতার থেকে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কাজ কীভাবে করতে হয় তাও জানা যাচ্ছে বেতারের মাধ্যমে। ডিজিটাল সেবা গ্রহণের জন্য কার কাছে কখন যেতে হবে তা জানতে শ্রোতারা বেতারে কান পাতছে। বেতার মানুষের জীবনকে যেমন সহজ করেছে ঠিক তেমনি আনন্দদায়কও করেছে বটে।

স্যাটেলাইটের যুগে বেতার এখনও তার অস্তিত্ব হারা হয়নি। আজও মানুষ ব্যস্ততার মাঝে কান পাতে বেতারে। এখন হয়তো আগের মতো রেডিও সেট তেমন নাই। কিন্তু মোবাইল সেটের মাধ্যমে ঠিকই বেতারে পছন্দের অনুষ্ঠান খুজে নিতে ভুল করে না। কারণ বেতারের মাধ্যমে সংসদ অধিবেশন, খেলার মাঠের তাজা খবর, সংবাদ, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক স্পট, কৌতুক ইত্যাদি বিষয়ে জানা যায়। তাই মনের অজান্তেই গাড়ির ড্রাইভার, রিক্সা চালক, মুদি দোকানদার, চা বিক্রেতা, অফিসের বড় কর্তা, গৃহিণী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, তরুণ-বৃদ্ধ, ছেলে-মেয়ে সবাই বেতারের শ্রোতা হয়েছেন। আকর্ষণীয় উপস্থাপনা ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বেতার তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে বলে বেতারকে আর শ্রোতা খুজতে হয় না। বরং শ্রোতারাই মনের টানে বেতারকে খুজে বেড়ায়।

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশ বেতার। এর অধীনে বিভাগীয় শহরগুলোতে আলাদাভাবে বেতারের কেন্দ্র রয়েছে। এক ঝাঁক মেধাবী ও কর্মঠ জনবল নিয়ে এখান থেকে শুধু সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের প্রচারই হয় না বরং শ্রোতাদের পছন্দের বিভিন্ন অনুষ্ঠানও উপহার দেয়া হয়। সরকার দেশের মানুষের জন্য কতটুকু ভাবে এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়নমূল পরিকল্পনার বিভিন্ন তথ্য পাবার একমাত্র নির্ভরযোগ্য মাধ্যম বাংলাদেশ বেতার। বাংলাদেশ বেতার শ্রোতাদের জন্য তথ্যবহুল এবং পছন্দের অনুষ্ঠান উপহার দিচ্ছে। বিভিন্ন কুইজ আয়োজনের মাধ্যমে শ্রোতাদের জ্ঞান বাড়াতে বাংলাদেশ বেতারের বিকল্প নাই।

দেশে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে অনেক বেসরকারি কমিউনিটি রেডিও এফএম সম্প্রচারের মাধ্যমে শ্রোতাদের আকৃষ্ট করছে। এগুলোর সাথে সম্পৃক্ত অনেকেই ভাষার সাথে হাসি তামাশায় যুক্ত। বাংলা-ইংলিশ এর মিশ্রণে এক অন্যরকম ভাষা ব্যবহারে তারা অভ্যস্ত। তরুণরা তাদের এমন উপস্থাপনাকে আগ্রহের সাথে গ্রহণ করছে। ফলে আগামীর তরুণ প্রজন্ম একটু অন্যরকম হচ্ছে।  উপস্থাপক বা সঞ্চালকের দায়িত্ব কতটুকু অনেকেই জানে না। তবুও তাদের দিয়েই উপস্থাপনার কাজটা করানো হচ্ছে। সরকারিভাবে এসব উপস্থাপকদের প্রশিক্ষণ এবং উপস্থাপন নীতিমালা খুবই জরুরী। অন্যথায় আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবো না।

গণমাধ্যমের ভীড়ে বেতার এখন টিকে থাকলেও অনুষ্ঠান মান আরো উন্নত হওয়া দরকার। তথ্য মানুষকে শক্তিশালী ও সচেতন করে। যেকোন বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে হলে সঠিক তথ্য দরকার। অনেক সময় উপস্থাপকদের ভাষাগত ভুল ও তথ্যের গড়মিল থাকায় সাধারণ ও অল্প শিক্ষিত মানুষ সঠিকটা খুজতে পারে না। এখনও নিয়মিত পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হচ্ছে বড় বড় অতিথিদের মাধ্যমে। কিন্তু শ্রবণ মান ভালো না থাকায় বা কারিগরি ত্রুটির কারণে শ্রোতারা বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের অঞ্চলভিত্তিক সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে কমিউনিটি রেডিও চালু হয়েছে। তারা হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন গান, ভাষা, নাটক, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারিভাবে বা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোন আর্থিক সহায়তা করা হয় না। ফলে তাদের ভিত্তি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। আমাদের অতীত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচাতে তাই সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বের সাথে আমাদের দৈনন্দিন যাত্রা হোক বেতারের সাথে। বেতারকে যতটা কাছে পায় এমন করে অন্য কোন প্রচার মাধ্যমকে পাওয়া যায় না। তাই বিশ্ব বেতার দিবসে আমাদের পথচলা হোক বেতারকেন্দ্রীক। বেতার থেকে আমরা তথ্য ও জ্ঞান পেয়ে আগামীর সম্ভাবনাময় উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবো। গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে একে অপরকে সচেতন করে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে চেষ্টা করবো এটাই হোক বিশ্ব বেতার দিবসের প্রত্যাশা।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)