শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

SW News24
সোমবার ● ২০ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বাস্তুতন্ত্রে জীববৈচিত্র্য টিকলে মানুষ বাঁচবে
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বাস্তুতন্ত্রে জীববৈচিত্র্য টিকলে মানুষ বাঁচবে
৩৪৯ বার পঠিত
সোমবার ● ২০ মে ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বাস্তুতন্ত্রে জীববৈচিত্র্য টিকলে মানুষ বাঁচবে


--- প্রকাশ ঘোষ বিধান

 জীববৈচিত্র্য হলো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার জীবের একত্র সমাবেশ। এই পৃথিবী হলো জীবগোষ্ঠীর সার্থক বাসভূমি। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই ছোট বড় উদ্ভিদ ও প্রাণীর সমাবেশ লক্ষ করা যায়। পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রতিটি জীব টিকে থাকার জন্য একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। পৃথিবীতে যত বেশি জীবনের বৈচিত্র্য থাকবে, ততোই সবার সুবিধা হবে। অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয় তথা সুস্থতার সঙ্গে জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজন সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের। মানুষের মৌলিক চাহিদা যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার জোগান বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে আসে।  

অধ্যাপক হ্যামিল্টনের মতে, পৃথিবীর মাটি, জল ও বায়ুতে বসবাসকারী সব উদ্ভিদ, প্রাণী ও অনুজীবদের মধ্যে যে জিনগত, প্রজাতিগত ও পরিবেশগত (বাস্তুতান্ত্রিক) বৈচিত্র্য দেখা যায় তাকেই জীববৈচিত্র্য বলে।জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভার্সিটি হলো পৃথিবীতে জীবনের জৈবিক বৈচিত্র্য এবং পরিবর্তনশীলতা।জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে সচেতনতা আনতে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি প্রতিবছর ২২ মে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস পালন করে আসছে।

পৃথিবীর ১০ বিলিয়ন ভাগের একভাগ অংশতেই ৫০ মিলিয়ন প্রজাতির বিভিন্ন জীবজন্তু এবং উদ্ভিদের বসবাস। সি জে ব্যারোর মতে, জীববৈচিত্র্য হলো একটি অঞ্চলের অর্থাৎ একটি বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে বৈচিত্র্য। জীববৈচিত্র্যকে প্রধানত তিনটি ভাগে বা স্তরে বিভক্ত করা হয়। জিনগত বৈচিত্র্য, প্রজাতিগত বৈচিত্র্য এবং বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।জীববৈচিত্র্যকে নানাভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। ইউনাইটেড নেশন্‌স এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম অনুসারে জীববৈচিত্র্য হল কোনো অঞ্চলের অন্তর্গত সমস্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীর জিনগত, প্রজাতিগত ও বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্নতা। জীববৈচিত্র্য হল পৃথিবীর জীবনের জৈবিক বৈচিত্র্য এবং পরিবর্তনশীলতা। এমনকি একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির জিনগত বৈচিত্র্যও জীববৈচিত্র্যের অন্তর্গত। অর্থাৎ কোনো একটি অঞ্চলের অন্তর্গত প্রাকৃতিক বাসস্থান বা হ্যাবিট্যাট এবং ওই বাসস্থানে বসবাসকারী সমস্ত প্রাণী, উদ্ভিদ ও অণুজীবের প্রজাতি এবং তাদের জিনগত বৈচিত্র্যের সমাহারকে এককথায় জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভার্সিটি বলে।

পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্য আছে বলে পরিবেশে শক্তি প্রবাহ ঘটে। খাদ্য-খাদক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রাণী ও কীটপতঙ্গ বেঁচে থাকে। বাস্তুতন্ত্র গতিশীল  ও কার্যকর হয়। পরিবেশ রক্ষা ও দুর্যোগ নিবারণের ক্ষেত্রে জীববৈচিত্র্যের কার্যকর প্রভাব আছে। ম্যানগ্রোভ অরণ্য ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও সুনামির প্রভাব থেকে উপকূল অঞ্চলকে অনেকটাই রক্ষা করতে পারে। সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ রক্ষা করা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা, আধ্যাত্মিক ও নান্দনিক মূল্যবোধ তৈরি করা প্রভৃতি ক্ষেত্রেও জীববৈচিত্র্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

জীববৈচিত্র্যের অর্থনৈতিক উপযোগিতা আছে। জীববৈচিত্র্য আছে বলে মানুষ খাদ্যের জোগান পায় শিল্পের কাঁচামাল পায়, বিনোদন ও পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে পারে। ওষুধ প্রস্তুত করার জন্য ভেষজ কাঁচামালের জোগান জীববৈচিত্র্যই সুনিশ্চিত করে। দারিদ্র্য নিরসন ও উন্নয়নে জীববৈচিত্র্য ব্যাপক অবদান রেখে চলছে। বিশ্ব অর্থনীতির ৪০ শতাংশ এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চাহিদার ৮০ শতাংশ জৈব সম্পদ থেকে আসে। জীববৈচিত্র্য টেকসই উন্নয়ন, মানবকল্যাণ ও টেকসই জীবিকার জন্য অপরিহার্য। বৈশ্বিক এবং স্থানীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, মানব স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহ করে জীববৈচিত্র্য ।

জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট কারণে সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেরও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। আমাদের দেশের সুন্দরবন উপকূলের বিশাল এলাকায় জীববৈচিত্র্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ দিকগুলো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মানুষের দ্বারা গাছপালা ও বন্যপ্রাণী নিধন নদ-নদী দখল-ভরাট-দূষণ, বন উজাড়, পাহাড় কাটা, দারিদ্র্য, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পানি ও বায়ুদূষণ, শিল্প-কারখানার দূষণ, মাত্রাতিরিক্ত ও ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার, ভূগর্ভস্থ পানির অত্যধিক উত্তোলনে পরিবেশ বিপর্যস্ত।বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্ত। যার মূলে রয়েছে মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ড। মানুষের প্রয়োজনে নতুন নতুন পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত শহর ও বন্দর গড়ে উঠছে, বাড়ছে শিল্পায়ন। আর নীরবে কাঁদছে প্রকৃতি। বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে, জলাশয় দূষণের কবলে পড়ছে। এভাবে আমরা বারবার আহত করছি পৃথিবীকে। 

বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক যুগে একাধিকবার জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছে। এর পরিবর্তনের সাথে বিভিন্ন প্রজাতি অভিযোজন ঘটাতে না পারায় তাদের বিলুপ্তি ঘটেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রাকৃতিক কারণের সাথে মানবসৃষ্ট কারণ যুক্ত হয়ে আজ বিশ্ব জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে।জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এখন জরুরি ভিত্তিতে ভূতাত্ত্বিক, জলজ ও সামুদ্রিক পরিবেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।নির্বিচারে বনভূমি উজাড় রোধ এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চল যথাযথ ব্যবস্থাপনা, বন এবং বন্যপ্রাণী যে আমাদের জীবনের অংশ সে বিষয়ে জনসাধারণকে সম্যক ধারণা দিতে হবে এবং সচেতন করতে হবে।

লেখক; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)