শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

SW News24
বৃহস্পতিবার ● ১ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » মুক্ত সাংবাদিকতা
প্রথম পাতা » মুক্তমত » মুক্ত সাংবাদিকতা
১১৮ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ১ মে ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মুক্ত সাংবাদিকতা

---  প্রকাশ ঘোষ বিধান

বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে দেশের গণমাধ্যম। গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত হলো জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আর মুক্ত সাংবাদিকতার প্রাণ হচ্ছে সাংবাদিক। মুক্ত গণমাধ্যম রাষ্ট্রের পরিবর্তনে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। দেশের প্রভাবশালী মহলের চাপ, রাজনৈতিক হুমকি, হামলা-মামলা কারণে স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী সমালোচনার সম্মুখীন।

১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ অনুসারে ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে তারিখটিকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্বীকৃতি দেয়া হয়। এর পর থেকে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমকর্মীরা দিবসটি পালন করে আসছেন। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত ও জীবনদানকারী সাংবাদিকদের স্মরণ ও তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় দিবসটিতে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) প্রতি বছর ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে থেকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক প্রকাশ করে।

দেশব্যাপী মুক্ত সাংবাদিকতা আজ নানামুখী সংকট প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। মুক্ত স্বাধীন সাংবাদিকতা সম্পর্কে জাতিসংঘের মানবাধিকার সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ১৮ ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেকেরই চিন্তা, বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। একইভাবে ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেকেরই মতামত পোষণ করা ও প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে। বিনা হস্তক্ষেপে মতামত পোষণ করা এবং যে কোনো উপায়ে রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে তথ্য ও মতামত সন্ধান করা, গ্রহণ করা বা জানাবার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা পত্রের অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতিসংঘ মুক্ত স্বাধীন মতামতভিত্তিক সাংবাদিকতা নিশ্চিত করার জন্য সকল রাষ্ট্রকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীরা এই মুক্ত সাংবাদিকতায় কতটা স্বাধীন। সাংবাদিকরা অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে, ফল স্বরূপ তাকে রাজনৈতিক রোষানল,সন্ত্রাসী, চরমপন্থি ও ক্যাডারদের হাতে হত্যা ও প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। ফলে সাংবাদিকরা সঠিক সাংবাদিকতা করতে পারছেন না। নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকার চেষ্টা খুব কম সাংবাদিকই করে। সাংবাদিকরা নিজেরাই রাজনীতি, সামাজিক সাম্যের ভারসাম্য ও সামাজিক স্তরবিন্যাসের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা থেকে সরে গেছে। তারা নির্দিষ্ট এক পক্ষ বা অন্য পক্ষের হয়ে কাজ করছে। একদিকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অন্যদিকে গণমাধ্যমের মালিকানা কর্পোরেট হাউজের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। সবমিলিয়ে গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি অপসাংবাদিকতার বিকাশ ঘটছে। সাংবাদিকের এবং সাংবাদিকতার মর্যাদা ক্ষুন্ন করছে। এছাড়া সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট মুক্ত সাংবাদিকতার প্রধান বাধা।

সাংবাদিকতা পেশায় প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সত্যনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করা। প্রাগৈতিহাসিক পৃথিবী থেকে সভ্যতার পৃথিবীতে এসে দেখতে পাই ১৭০২ সালে ইংল্যান্ডে বিশ্বের প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তার আগে মানুষের জীবন বলতে অস্তিত্ব রক্ষাই ছিল প্রধান বিবেচ্যবিষয়। গণমাধ্যম কি জানা ছিলো না। বর্তমানে গণমাধ্যমকে বাদ দিয়ে নাগরিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন চলা সম্ভব নয়। একটা রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভের একটা অংশ হিসাবে গণমাধ্যম চিহ্নিত। গণমাধ্যমের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। টেলিগ্রাম, টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশন, ফ্যাক্স, ই-মেইল, কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদি। দেশে গণমাধ্যমের বিস্তৃতি ও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে সংবাদ পাওয়া এবং তা ছড়িয়ে দেওয়া সহজতর হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে আজ সাংবাদিকেরা প্রতিদিন হুমকি মোকাবিলা করছেন। সংবাদ প্রকাশের জেরে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা বা হয়রানি এ নতুন কোন ঘটনা নয়। প্রতি বছর এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি সাংবাদিকদের তথ্য পাওয়ার সুযোগও দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। দেশে দেশে মারাত্মক হারে সাংবাদিকেরা ভয়ভীতির শিকার হচ্ছেন। শুধু পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে অসংখ্য সাংবাদিককে হত্যা করা হচ্ছে। সংবাদকর্মীরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধক পরিস্থিতির শিকার হন।

উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে যারা জাতীয় বা স্থানীয় পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন, তাদের অনেকেই নিয়মিত কোনো সম্মানী পান না। কিছু প্রতিষ্ঠান সম্মানী প্রদান করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। বেতন- ভাতা পাচ্ছেন না, তারপরও উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সাংবাদিকের সংখ্যা কমছে না বরং দিন দিন এর সংখ্যা বাড়ছে। স্থানীয় পর্যায়ে যারা সাংবাদিকতায় আসছেন তাদের অধিকাংশই অস্বচ্ছল,অর্থনৈতিক টানাটানিতে দিন পার করেন। ফলে কিছু সংখ্যক সাংবাদিক মিথ্যা ও অপতথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশন করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার খায়েশে ব্যস্ত থাকেন। বর্তমানে আমাদের সমাজে হলুদ সাংবাদিকতার প্রবণতা ভয়ংকরভাবে বেড়ে চলেছে। আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বিবিধ কারণে মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির সাংবাদিকতা পেশাটি হলুদ সাংবাদিকতার শেকলে বন্দী হয়ে পড়েছে। নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনার সকল রহস্য উদঘাটন করা সৎ ও সাহসী সাংবাদিকদের কাজ। তাই অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের সাংবাদিকতায় আসা উচিত নয়।

জেলা উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে একাধিক সাংবাদিক সংগঠন। এতো সব বিভাজনের কারণে ক্ষুদ্র স্বার্থ টানাটানি করে বৃহৎ স্বার্থ জলাঞ্জলী দেওয়া হচ্ছে। দেশ জুড়ে প্রেসক্লাব দখল, কুক্ষিগত ও দলীয় করণ করার ঘটনা ঘটছে। এই বিভাজনের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে রাজনৈতিক নেতা জনপ্রতিনিধিরা। তাদের ইচ্ছা মাফিক নিউজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে সাংবাদিককে। আবার কথা না শুনলে নানা ভাবে হয়রানী ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। ফলে সাংবাদিকতা পেশা ক্রমাগত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পৃথিবীব্যাপী মানবাধিকার রক্ষার মূল ভিত্তি। অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে কোনো তথ্য আর গোপন রাখা যায় না। যে কোনো মাধ্যমে তা প্রকাশ পেয়ে যায়। এখন সকালের খবর জানতে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তা পৌঁছে যায় সবার কাছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

অসৎ ও দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা এ পেশার জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি সমাজ, দেশ ও জাতির জন্যও ক্ষতিকর। সাংবাদিকতা পেশার প্রথম ও প্রধান কাজ হলো সততা ও দায়িত্বশীলতা। সৎ, মেধাবী ও নির্ভীক সাংবাদিক জাতির পথ প্রদর্শক। সুষ্ঠ ও সুন্দর সমাজ গঠনে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষকে সচেতন করে তোলে। দেশ ও জাতিগঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

লেখক; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)