

সোমবার ● ১৩ অক্টোবর ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » মায়াবী সুন্দরবন; বিস্ময়, ভয় আর হাজারো প্রতিকূলতা
মায়াবী সুন্দরবন; বিস্ময়, ভয় আর হাজারো প্রতিকূলতা
মুগ্ধ বিস্ময় প্রকৃতির অপূরূপ দৃশ্য সুন্দরবন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার এক অনন্য অসাধারণ বনভূমি। বিস্ময়, ভয় আর মায়াবী রোমাঞ্চের হাতছানি দেয় গভীর অরণ্যের ভেতরে। সুন্দরবনে পা রাখার সাথে সাথে সাপ কিংবা বাঘের ভয় কর্পুরের মত উড়ে যায়। বাঘের মতোই সুন্দরবনের রহস্যময় আকর্ষণ। তবে ভাটার সময় খালের পানি শুকিয়ে গেলে ফেরার পথ বন্ধ হয়ে যায়, যা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। জোয়ার আসতে সময় লাগে কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা। ততক্ষণে কুমির বা বাঘ হয়ে উঠতে পারে প্রাণহানির হুমকি।
সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং জীববৈচিত্র্যের ভাণ্ডার। বাঘ, কুমির, হরিণ ও হাজারো প্রজাতির মাছ-ঝিনুকের এ বন কেবল প্রকৃতির জন্য নয়, হাজারো জেলের জীবিকার একমাত্র ভরসাস্থল। কিন্তু আজ সেই সুন্দরবনই জেলেদের কাছে মৃত্যুফাঁদ। এখন বাঘ নয়; মানুষের হাতেই প্রাণ বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা বেশি। যারা বনের অভ্যন্তরে শিকারে আসেন, তাদের হাতে আধুনিক অস্ত্র, তথ্যভিত্তিক মানচিত্র ও ছদ্মবেশ থাকে। নদীর জোয়ার-ভাটা, ঘূর্ণিঝড় কিংবা বাঘ ও কুমিরের ভয় নয়, এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হলো বনদস্যুরা।
সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয়। এর আগেই ১৯৯২ সালে সুন্দরবন রামসার সাইট হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। বনটির পুরোটাই সংরক্ষিত; এর মধ্যে ৫৩ দশমিক ৫২ ভাগ এলাকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষিত, যেখানে সম্পদ আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র কটকা, কচিখালী, নীলকমল–এসব অভয়ারণ্য এলাকার মধ্যেই পড়েছে। বিশেষ অনুমতি নিয়ে ওই এলাকায় ভ্রমণ করা যায়।
বাংলাদেশে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের একমাত্র আশ্রয়স্থল এই বন। ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপে বনে ১২৫টি বাঘ রয়েছে বলে জানায় বন বিভাগ। সুন্দরবনের বাঘ বেশি শক্তিশালী ও হিংস্র। বাঘের ভয় এখন একমাত্র ভয় নয়। বনজীবীরা এখন প্রতিনিয়ত বয়ে বেড়ান চোরা শিকারী ও বনদস্যুদের ভয়।
বাঙালির ইতিহাস, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আর ঐতিহ্যের ধারায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার এমন প্রাণী, যা অহংকার, গর্ব, আনন্দ, ভয় আর সম্মানের প্রতীক। বিশাল আকৃতি, শক্তি, হিংস্রতা, রাজকীয় চলাফেরা আর দাম্ভিক আচার-আচরণের কারণে সারা বিশ্বে এ বাঘের আলাদা খ্যাতি রয়েছে। বলা হয়, সুন্দরবন রক্ষায় সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত বনরক্ষক থাকলেও এ বনের প্রকৃত পাহারাদার রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
সুন্দরবনে রয়েছে ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড। বিশ্বের প্রকৃত ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের ৩৫ প্রজাতির সব ক’টিই পাওয়া যায় এখানে। সুন্দরবনে রয়েছে প্রায় ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী, যার মধ্যে ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও আট প্রজাতির উভচর। ৩০০ প্রজাতির পাখির আবাস এ বনেই। সুন্দরী হাঁস বা কালামুখ প্যারা পাখি নামে পরিচিত মহাবিপন্ন মাস্কড ফিনফুট ২০০-২৫০টির বাস সুন্দরবনে। এ ছাড়া আছে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৩ প্রজাতির কাঁকড়া ও ৪২ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে, বঙ্গোপসাগরের তীরে সুন্দরবন। বাঘ ও সুন্দরবন। বাঘ মূলত শক্তি, সাহস, শৌর্য, বিক্রম ও আভিজাত্যের প্রতীক।
সুন্দরবন হলো- আনপেডিকটেবল ফরেস্ট; বনের পরিবেশ-প্রকৃতি-আবহাওয়া-জীববৈচিত্র্য কিংবা সাগর-নদী-সায়রের আচার-আচরণ সবই প্রত্যাশার বিপরীতে কাজ করে। এই বন অনেক মানুষের জীবিকার স্থান হলেও এটি অনেক বিপদসংকুল। সুন্দরবনে অনেক ভয়ংকর প্রাণী আছে। তার মধ্যে বাঘ মাংসাশী প্রাণী। সে অন্য প্রাণী খেয়ে বাঁচে। বাঘ মানুষকেও আক্রমণ করে এবং খেয়ে ফেলে। তাই সুন্দরবনে বাঘই মানুষের সবচেয়ে ভয়ের বিষয়। বাঘের ভয়ে কার্যত সুন্দরবন সুন্দর রয়েছে।