শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

SW News24
শনিবার ● ১৩ মে ২০২৩
প্রথম পাতা » মুক্তমত » মা দিবসের তাৎপর্য
প্রথম পাতা » মুক্তমত » মা দিবসের তাৎপর্য
৩১৬ বার পঠিত
শনিবার ● ১৩ মে ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মা দিবসের তাৎপর্য

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান

মা একটি ছোট্ট শব্দ। মমতা জড়ানো, হৃদয় ছোয়া এক বিশাল শক্তির আধার। মা, সবচেয়ে প্রিয় একটি শব্দ। পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম ডাক মা। ছোট্ট এ শব্দের অতলে লুকানো থাকে গভীর স্নেহ, মমতা, অকৃত্রিম দরদ ও ভালোবাসা। সবচেয়ে পবিত্র ও মধুর শব্দের নাম মা। তাইতো মমতাময়ী মায়ের সম্মানে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্ব মা দিবস পালন করা হয়। সে হিসাবে ১১ মে রবিবার মা দিবস পালিত হচ্ছে।

মা দিবসের ইতিহাস খুবই প্রাচীন। তাই এর সঠিক ইতিহাস বলা খুবই কঠিন। ঠিক কবে থেকে মা দিবসের সূত্রপাত হয়েছে তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, দিনটির সূত্রপাত হয় প্রাচীন গ্রিসে। সে সময় প্রাচীন গ্রিসে মাতৃ আরাধনার প্রথা চালু ছিল। মা দিবসের সূচনা প্রাচীন গ্রিসের মাতৃরূপী দেবী সিবেলের এবং প্রাচীন রোমান দেবী জুনোর আরাধনা থেকে। যেখানে প্রতি বছর বসন্তকালে একটি দিন দেবতাদের মা আইসিস, সিবিলি, রিয়া’র উদ্দেশ্যে মা দিবস উদ্যাপন করা হতো। সে সময় বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে বিভিন্ন সময় মা দিবস পালিত হতো।

আধুনিককালে মা দিবস উদযাপনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুই নারীর নাম। তারা হলেন জুলিয়া ওয়ার্ড হোয়ে ও আনা জার্ভিস। যুক্তরাষ্ট্রে দিবসটির সূচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাদের। ১৮৭০ সালের দিকে জুলিয়া ওয়ার্ড প্রতি বছর মা দিবস উদ্যাপনের ডাক দেন। তার নেতৃত্বে প্রায় ১০ বছর বোস্টনে দিবসটি উদযাপন হয়। এর পর আর সেটি চালু থাকেনি।

১৮৭০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের  পৈশাচিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে শান্তির প্রত্যাশায় জুলিয়া একটি ঘোষণাপত্র লেখেন। এরপর যুদ্ধ শেষে পরিবারহীন অনাথদের সেবায় ও একত্রীকরণে নিয়োজিত হন  মার্কিন সমাজকর্মী আনা রিভিজ জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস। এ সময় তারা জুলিয়া ওয়ার্ড ঘোষিত মা দিবস পালন করতে শুরু করেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে আনা রিভিজ জার্ভিস ১৯০৫ সালের ৫ মে মারা যান।

মায়ের মৃত্যুর পর আনা মেরি জার্ভিস মায়ের শান্তি কামনায় ও তার সম্মানে সরকারিভাবে মা দিবস পালনের জন্য প্রচারণা চালান। তিন বছর পর ১৯০৮ সালের ১০ মে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার আন্দ্রেউজ মেথডিস্ট এপিসকোপাল চার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম মা দিবস পালিত হয়। এরপর ১৯১২ সালে এই দিবসটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রচারণা শুরু হয়। এই প্রচারণা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকায়।

এই প্রচারণার প্রেক্ষিতে ১৯১৪ সালে তৎকালীন  আমেরিকান প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস ও জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই প্রতিটি দেশে  মায়েদের সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এই দিনটি উৎসর্গ করা হয়।  দেশে দেশে পালন করা হয় বিশ্ব মা দিবস। অ্যানা জার্ভিস ১৯৪৮ সালের ২৪ নভেম্বর ৮৪ বছর বয়সে মারা যান। সন্তানের মানসিক বিকাশ থেকে শুরু করে সফলতার প্রতিটি পদক্ষেপে মায়ের অবদান রয়েছে। সন্তানের জন্য সব থেকে বেশি যে আত্মত্যাগ করে মা। স্বার্থপর এই দুনিয়াতে মানুষের নানা রুপ। নিঃস্বার্থভাবে শুধু মা-ই আমাদের ভালোবাসেন। মায়েরা শক্তি, মমতা ও ত্যাগের মূর্ত প্রতীক। তারা নিঃস্বার্থভাবে প্রতিদিন নিজেদের বিলিয়ে দেয়, তাদের সন্তানদের লালনপালন, পথনির্দেশ এবং উত্থানের জন্য তাদের হৃদয় উজাড় করে দেয়।

একজন মায়ের ভালবাসার কোন সীমা নেই। এটি এমন একটি শক্তি যা সময় এবং স্থানকে অতিক্রম করে। আমাদের জীবনের অন্ধকার মুহুর্তগুলি আলোর প্রদিপের মধ্য দিয়ে পরিচালিত করে। মায়েরা সন্তানের প্রথম শিক্ষক ও প্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠেন। মা আলোর বাতিঘরের মতন।

আমাদের আবারও একবার স্মরণ করে দেয় পৃথিবীতে আমাদের পদচারণার মূল কারিগরকে। আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক ভাবে মা দিবস পালিত হচ্ছে। সন্তানের কাছে পৃথিবীর সব থেকে নিরাপদ আশ্রায় মা। মায়ের ভালবাসা আর স্নেহে সন্তান সব কষ্ট আর দুঃখ ভুলে যায়। দিবসটি বিশ্বজুড়ে মাতৃত্ব ও মাতৃসত্তার গুরুত্ব এবং তাৎপর্য স্মরণ করে দেয়। তাই মা হোক প্রতিদিনের উপসানা। মায়েদের জন্য শুভ কামনা, এ ধারণা সব সময় সন্তানদের মনে জাগ্রত হোক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ