শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
শনিবার ● ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » মুক্তমত » অভিবাসীরা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে
প্রথম পাতা » মুক্তমত » অভিবাসীরা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে
১২৩ বার পঠিত
শনিবার ● ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

অভিবাসীরা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান

অভিবাসন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আদিকাল থেকে মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে বাসস্থান স্থাপন করছে। মানুষের এ এক চিরন্তন প্রবণতা। অভিবাসন প্রধানত অর্থনৈতিক কারণে ঘটে, তবে এটি যেকোনো সংঘাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সহিংসতার কারণেও ঘটতে পারে। অভিবাসীরা উন্নত জীবনযাত্রা বা কর্মসংস্থানের খোঁজে স্থান পরিবর্তন করে থাকেন। অভিবাসন এমন একটি প্রক্রিয়া, যা সংগত কারণেই মানবসভ্যতার শুরু থেকে অভিবাসন শুরু হয়েছে।

অভিবাসীরা উন্নত অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য অভিবাসন করেন এবং তারপর নিজ দেশে জীবনযাত্রার মান বাড়াতে সহায়তা করেন। সমগ্র বিশ্বে অভিবাসী শ্রমিকদের দুর্ভোগ, দুর্দশা ও তাদের ওপর সহিংসতা, নিপীড়ন ও নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় অভিবাসীদের মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১৯৯০ সালের ১৮ ডিসেম্বর একটি সনদ অনুমোদিত হয়, যা হল সব অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সনদ। জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের স্বীকৃতি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর দিনটি বিশ্বব্যাপী উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ব্যাপক হারে অভিবাসন ও বিপুলসংখ্যক অভিবাসীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদিকে ঘিরেই এ দিবসের উৎপত্তি।  ফিলিপাইন ও এশিয়ার কয়েকটি অভিবাসী সংগঠন অভিবাসীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের জন্য ১৯৯৭ সাল থেকে ১৮ ডিসেম্বর অভিবাসী দিবস পালন করে আসছিল। ১৯৯০ সালের এই দিনে জাতিসংঘ গৃহীত অভিবাসীকর্মীদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার রক্ষা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনকে স্মরণ করেই তারা ১৮ ডিসেম্বরকে বেছে নিয়েছিল।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম অভিবাসী কর্মী প্রেরণকারী দেশ হওয়ায় এই দিবসটি প্রতিবছরই অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পালন করে থাকে। দেশে বিদেশে যেসব দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে, সেসব দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করে।বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে দিবসটিতে তাঁদের সুবিধা-অসুবিধা আর নানা সমস্যার কথাও জানা যায় এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াও সম্ভব হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটিবাংলাদেশি নাগরিক বসবাস করে। তাদের বেশির ভাগই অভিবাসী কর্মী হিসেবে অস্থায়ীভাবে বিদেশে অবস্থান করছেন। তাঁদের একটি ক্ষুদ্র অংশ স্থায়ী বাসিন্দা বা নাগরিক হিসেবে ওই সব দেশে বসবাস করছে। বাংলাদেশ যে রেমিট্যান্স পায় তার বেশির ভাগই আসে অস্থায়ী অভিবাসী শ্রমিকদের সঞ্চয় থেকে। তবে যেসব বাংলাদেশি বিদেশি নাগরিকত্ব ধারণ করেন বা স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, তাঁরাও বাংলাদেশে বসবাসরত তাঁদের আত্মীয়-স্বজনকে নানা উপলক্ষে বা প্রয়োজনে অর্থ পাঠিয়ে থাকেন।

পৃথিবীতে অনেক দেশই উন্নত হয়ে উঠেছে অভিবাসী মানুষের প্রচেষ্টায়।বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় যেসব বিশাল নির্মাণ কাঠামো দেখা যায়, তার সবই অভিবাসী কর্মীদের শ্রমের ফসল। পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশ গড়ে উঠেছে অভিবাসীর অক্লান্ত কর্মতৎপরতায়। অভিবাসন এখন সমগ্র বিশ্বে একটা অবশ্যম্ভাবী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে।

এ পৃথিবীর মানুষ একটি সমগ্র জাতি। সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ দলবেধে বসবাস করছে। মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা সম্ভব নয়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়সহ  বহুবিধ কারণে মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছে। অধিকাংশ দেশ জনঅভিবাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। শ্রমের অপরিহার্যতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে জনশক্তির প্রয়োজনীয়তা এক দেশ থেকে অন্য দেশে কর্মী গমনকে প্রভাবিত করে। বিশ্বজুড়ে মূলধন, পণ্য আর সেবার বাধাহীন যাতায়াতের সঙ্গে সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি অভিবাসন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে।

অভিবাসন প্রক্রিয়া বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৬ সালে প্রথম সরকারি পর্যায়ে বৈদেশিক কর্মসংস্থান শুরু হলে প্রথম বছর মাত্র ৬ হাজার ৮৭ জন বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান লাভ করে। বিগত শতাব্দী থেকে অভিবাসনের ওপর বিভিন্ন দেশ নানাভাবে কড়াকড়ি আরোপ করছে। এরপরও থেমে নেই অভিবাসন। নতুন নতুন শ্রমবাজার সম্প্রসারণের ফলে প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। অভিবাসী প্রেরণে বাংলাদেশ বিশ্বে ষষ্ঠ এবং রেমিট্যান্স গ্রহণে অষ্টম।   রেমিটেন্স আয়ের মাধ্যমে দেশ যেমন বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ সমৃদ্ধ করছে, তেমনি প্রবাসীরা তাদের পারিবারিক জীবন মান উন্নত করতে পারছে, আর বাড়ছে তাদের বিনিয়োগ ক্ষমতা।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী কর্মী কর্মরত রয়েছে। বিদেশে কর্মরত বিপুলসংখ্যক প্রবাসী কর্মী দেশে বেকারত্বের ওপর চাপ কমানোর পাশাপাশি তাদের মেধা, শ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।   বস্তুত রেমিটেন্সের সঠিক ব্যবহারের বিষয়টিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স জাতীয় অগ্রগতি ত্বরান্বিত করছে। রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে, যা আমাদের অর্থনীতিকে দাঁড় করাচ্ছে শক্ত ভিত্তির ওপর।

শ্রমঅভিবাসন বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীরা দেশের জন্য আয় করছেন বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিটেন্স, অবদান রাখছেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে। অন্যদিকে, দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে তারা দেশের সুনাম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছেন। অভিবাসন বাংলাদেশের উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।  রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন ও জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশের অভিবাসী কর্মীরা বিশেষ অবদান রাখছেন। তারা যাতে যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হয়ে বিদেশে যায়, সেজন্য সরকার দেশে ৬৪টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ও ৬টি আইএমটি স্থাপন করেছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষ কর্মী তৈরির লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

অভিবাসনকে সার্থক করতে হলে অভিবাসী কর্মীদের অর্জিত আয় ও দক্ষতা দেশে কাজে লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে অনেকে তার কষ্টার্জিত অর্থ ভাগ্যোন্নয়নের কাজে লাগাতে সমর্থ হয় না। দেশে ফেরত আসা কর্মীদের ব্যবসার উদ্যোগ, প্রশিক্ষণ,ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তা সংক্রান্ত সুযোগগুলো সম্পর্কে অবহিত করা দরকার। সহযোগিতা, সহমর্মিতা আর সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অভিবাসন এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে অদ্যাবধি পৃথিবীর কোনো অঞ্চলে অভিবাসন ঘটছে।  অভিবাসী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসটি পালনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে অভিবাসীদের অবদানকে স্বীকার করে সমাজে তাঁদের সেই মর্যাদা দেওয়া এবং তাঁদের প্রাপ্য অধিকারকে নিশ্চিত করা। অভিবাসী কর্মীদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার মানসিকতা এবং তাঁদের প্রাপ্য অধিকার প্রদানে দুই দেশের মানুষের মধ্যে  সহানুভূতিশীল হওয়া সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা গেলেই এই দিনটি পালন সার্থক হবে।

লেখক; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)