

মঙ্গলবার ● ৮ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » দক্ষ জনশক্তি দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য
দক্ষ জনশক্তি দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য
প্রকাশ ঘোষ বিধান
দক্ষ জনশক্তি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জনসংখ্যার গুরুত্ব অপরিসীম। কোনো দেশ প্রাকৃতিক সম্পদে যথেষ্ট সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও পর্যাপ্ত জনসংখ্যার অভাবে সঞ্চিত সম্পদ ব্যবহার করতে পারে না। আবার কোনো দেশ অধিক জনসংখ্যা থাকার পরও জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত না করার কারণে তা দেশের বোঝায় পরিণত হয়। জনসংখ্যাকে সম্পদে রূপান্তরিত করতে পারলে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জনসম্পদ- উভয়ের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক গতি ত্বরান্বিত করা সম্ভব। কেননা জনসম্পদ ও কর্মদক্ষতার উৎস হলো জনসংখ্যা।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখ। যার অর্ধেকই নারী। মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ ১১ কোটি ৫০ লাখ কর্মক্ষম বয়সী, যাদের বয়স ১৫-৬৪ বছরের মধ্যে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বার্ষিক প্রধান প্রকাশনা বিশ্ব জনসংখ্যার অবস্থা (এসডব্লিউওপি) ২০২৫-এ এই অনুমান করা হয়েছে। ২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে বর্তমানে জনসংখ্যা ৮২০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখ বলে অনুমান করা হয়। এর মধ্যে অর্ধেক নারী।আর দুই-তৃতীয়াংশ সাড়ে ১১ কোটি কর্মক্ষম বয়সী।
বাংলাদেশের এই জনসংখ্যার ৭ শতাংশ ১ কোটি ২০ লাখ ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী, যা জনসংখ্যার বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার শুরুর ইঙ্গিত দেয়। ১৯ শতাংশ কিশোর-কিশোরী প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ। যাদের বয়স ১০ থেকে ২৪ বছর। আর বৃহত্তর যুব জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৮ শতাংশ প্রায় ৫ কোটি। জনসংখ্যার এমন সংখ্যাগত অবস্থা লাভজনক কাজে লাগানোর সুযোগ করে দেয়।
বিশ্ব পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ায় নারীরা গড়ে মাত্র ০.৮টি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন। অপরদিকে, আফ্রিকার নাইজারে এই হার ৫.৮।দেশের মোট প্রজনন হার বর্তমানে ২.১, যা একটি মধ্যম স্তরে রয়েছে। তবে দেশের কিছু অঞ্চলে কিশোরীদের মধ্যে গর্ভধারণের হার বেশি। এর জন্য দায়ী বাল্যবিবাহ, জন্মনিরোধ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব এবং যৌনশিক্ষার সীমাবদ্ধতা।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস প্রতি বছর ১১ জুলাই তারিখে পালিত হয়। এটি একটি বাৎসরিক আয়োজন, যার লক্ষ্য বিশ্ব জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উপরে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের লক্ষ্য হলো পরিবার পরিকল্পনা, লিঙ্গসমতা, দারিদ্র, মাতৃস্বাস্থ্য এবং মানবাধিকারের মতো জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
ক্রমবর্ধমান জন্মহার দেশের উন্নয়নে জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি জটিল সমস্যা যা অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। এই কারণে, জন্মহার নিয়ন্ত্রণ করা দেশের উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অধিক জনসংখ্যার কারণে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা সহ মৌলিক চাহিদা পূরণে চাপ বাড়ে। এছাড়াও, সীমিত সম্পদের উপর অধিক জনসংখ্যার চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে। অধিক সংখ্যক মানুষ কর্মজীবনে প্রবেশ করে, কিন্তু সেই তুলনায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি না পাওয়ায় বেকারত্ব বাড়ে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে আর্থসামাজিক ও অনেক সমস্যার মূলে রয়েছে অধিক জনসংখ্যা। বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ। জন্মহার বেশি হলে দারিদ্র্য ও বৈষম্য বাড়ে। কারণ, দরিদ্র পরিবারগুলোতে সাধারণত অধিক সন্তান থাকে এবং তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়। ফলে, তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। তবে জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় আবাসন ও পেশার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধা থেকে সাধারণ জনগন বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে সমাজে বাড়ছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, বাসস্থান সংকট, খাদ্য সমস্যা, অপরাধ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অপুষ্টি, পতিতাবৃত্তি, ভিক্ষাবৃত্তি, মাদকাসক্তি, নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা সামাজিক সমস্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতির ফলস্বরূপ জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার অনেক কমে গিয়েছে। তাছাড়া সম্পদ সৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ভারতে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, গ্রাম-শহর, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সমস্ত জনসাধারণের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা তথা জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা একান্ত আবশ্যক। বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ রোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কেবলমাত্র সরকারী প্রচেষ্টা নয়, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, শিক্ষিত যুবক-যুবতী এবং স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদেরও এ বিষয়ে এগিয়ে এসে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে সরকার ও অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থাসমূহের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং এর কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। জন্মহার নিয়ন্ত্রণ দেশের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং পরিকল্পিত পরিবার গঠন ও জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ক পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহিত হতে হবে।
লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট