শিরোনাম:
পাইকগাছা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
শনিবার ● ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের ভূমিকা
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের ভূমিকা
৮০৭ বার পঠিত
শনিবার ● ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের ভূমিকা

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান

সংবাদপত্রকে সমাজ বা জাতির দর্পন বলা হয়। চলমান জীবন, দেশও বিশ্বের একটি চিত্র প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় ফুটে ওঠে। আয়নায় দেখা নিজের চেহারার মত প্রতিবিম্ব সংবাদপত্রে চলমান জীবন, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বের চিত্র ভেসে ওঠে। সাংবাদিকদের সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ গঠনে সহায়তা করে। মানুষকে সচেতন করে তোলে। দূর্নীতিবাজ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সংগে জড়িতরা আতঙ্কে থাকে। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার ভয়ে তারা দূর্নীতি ও অপরাধ মূলক কর্মকান্ড থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। শোষণ, জুলুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে সাংবাদিকরা সোচ্চার থাকে। সাংবাদিকদের মেধা, মনন, মানবতাবোধ থেকে উৎসারিত হয় সত্যনিষ্ঠা, নীতিবোধ ও দেশপ্রেম। তাই এই সব গুণের অধিকারী সাংবাদিককে বলা হয় জাতির বিবেক।

সাংবাদিকতা বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ পেশা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সাংবাদিকের মুখ্য ও পবিত্র দায়িত্ব হলো চলমান ঘটনা ও বাস্তবতাকে তুলে ধরা। সাংবাদিকতা পেশার সাথে নেশা সম্পৃক্ত না হলে সে সংবাদে গভিরতা পায় না। সত্যনিষ্ঠ সংবাদের গতি হারায় ও ম্রিয়মান হয়ে পড়ে। এখানে সত্যনিষ্ঠা ও নীতিবোধ নির্ভর করে সাংবাদিকের দৃষ্টিভঙ্গী, মন-মানসিকতা ও নৈতিকতার উপর। অসৎ ও দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা এ পেশার জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি সমাজ, দেশ ও জাতির জন্যও ক্ষতিকর। সাংবাদিকতা পেশার প্রথম ও প্রধান কাজ হলো সততা ও দায়িত্বশীলতা। সৎ, মেধাবী ও নির্ভীক সাংবাদিক জাতির পথ প্রদর্শক। সংবাদপত্র সরকারের চতুর্থ স্তম্ভ হিসাবে খ্যাত। উইকহ্যামস্টিডের মতে “সাংবাদিকতা হচ্ছে সমাজ সেবার একটি আধুনিক রূপ”। সুষ্ঠ ও সুন্দর সমাজ গঠনে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষকে সচেতন করে তোলে। দেশ ও জাতিগঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

ল্যাটিন প্রবাদ, “ভক্স পপুলাই ভক্স ডাই’- জনগণের কণ্ঠস্বরই ঈশ্বরের কষ্ঠস্বর” গণতন্ত্র অবরুদ্ধ হলে গণমাধ্যম তার স্বাধীনতা হারাবে। আজকের দেশে গণমাধ্যম অনেকাংশে স্বাধীনতা হারিয়েছে। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতাকে একটি গণ্ডির ভেতর আটকে ফেলা হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অপরিহার্য। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা না থাকলে জনগণের স্বায়ত্তশাসন বিঘিœত হবে। সেখানে নৈরাজ্য, দুনীতি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বেড়ে যাবে। জনগণের রাজত্বের পরিবর্তে কায়েম হবে দুবৃত্তদের রাজত্ব। এ অবস্থায় গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করার জন্য সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে। দুবৃত্তদের পদাচারণে সমাজ ব্যবস্থা বিপন্ন হয়ে পড়েলে তখন সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের এগিয়ে আসা ছাড়া বিকল্প আর কিছু থাকে না। সাংবাদিকরা সঠিক দায়িত্ব পালন না করলে সমাজের অবস্থা আরো খারাপ হবে। সত্য কথা লেখার জন্য সাধারণ মানুষের আকুতি বেড়ে যায়। আর নির্যাতন, দুনীতি, সন্ত্রাস নৈরাজ্বের খবর প্রকাশ করেন বলেই সাংবাদিকরা নির্যাতিত হচ্ছে। অথচ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের কারণে নির্যাতিত সাংবাদিকের পক্ষে সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন একটা সাড়া দেখা যায় না। তবে সাংবাদিকদের কাছে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের জন্য জাতি অগ্রহচিত্তে তাকিয়ে থাকে ঠিকই।

আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নেই। দুনীতি, অপকর্মের সংবাদ প্রকাশিত হলেই সংশ্লিষ্টরা সাংবাদিক মেরে ক্ষোভ মেটায়। মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে। অনেক সাংবাদিক নিউজ কভার করতে গিয়ে আক্রমনকারীদের হামলার শিকার হচ্ছে। হামলায় অনেকে মারাত্মক আহত হয়ে পঙ্গু জীবন যাপন করছেন। সংবাদকর্মিরা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শুধু আহত নয় অনেকে নিহত হয়েছেন। তাদের পরিবার-পরিজনদের নিরাপত্তা নেই। বিচারের আশায় আদালতের দারে ঘুরছে। গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা না থাকলে সেখানে দূনীতি, সন্ত্রাস বেড়ে যায় এবং গণতন্ত্র ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।

ইউনেস্কোর তথ্য মতে, গত কয়েক বছরে বিশ্বে প্রায় ৩শত জন সাংবাদিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হয়েছে। আর ২০০৫ সালে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৭৮৭ জন সাংবাদিক। রিপোটার্স উই দাউট বর্ডারস (আরউব্লিউবি) নামে ফ্রান্সভিত্তিক আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, দায়িত্ব পালনের সময় বা সংশ্লিষ্ট কাজে ২০১৫ সালে সারা বিশ্বে ১১০ জন সাংবাদিক হত্যার স্বীকার হচ্ছে। বাংলাদেশেও এ সংখ্যা কম নয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ২৪৪ জন সাংবাদিক হয়রানির স্বীকার হয়েছেন, যার মধ্যে চারজন নিহত হন। তথ্যের স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রকাশনাকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কখনও কখনও সাংবাদিক এমনকি সম্পাদককে হয়রানি করা হচ্ছে। গত এক যুগের মধ্যে ২০১৫ সালে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সর্বনিন্ম সুচকে অবস্থান করেছে বলে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে কাজের জন্য সবচেয়ে ‘প্রাণঘাতী’ হিসাবে চিহ্নিত শীর্ষ পাঁচটি দেশ হিসাবে সিরিয়া, ইরাক, ফ্রান্স, ইয়েমেন ও দক্ষিণ সুদানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিক ও সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু গণমাধ্যমকর্মীরা স্বাধীনতা ভোগের পরিবর্তে নানা ভাবে অপদস্থ ও নির্যাতিত হচ্ছেন। গণমাধ্যম হচ্ছে সমাজের পথপ্রদর্শক। তাই গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য। তবে মনে রাখতে হবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মানে যা খুশি তাই লেখা বা প্রকাশ করা নয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে অবশ্যই সত্য, বস্তুনিষ্ঠ ও যথার্থ হতে হবে। সংবাদপত্র কোন সত্যকে মিথ্যা আবার কোন মিথ্যাকে সত্য করার মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে গোষ্ঠি, জাতি ও দেশের শান্তি বিঘিœত হতে পারে এমন কোন সাংঘার্ষিক প্রতিবেদন নয়। সাংবাদিকদের প্রতিবেদনে বিভক্তি সৃষ্টি না হয়, সে জন্য চোখ-কান খোলা রেখে সজাগ থেকে প্রতিবেদন তৈরিতে বিচক্ষনতা দেখাতে হবে। তবে একথাও সত্য সব সাংবাদিক একেবারে ধোয়া তুলসীপাতা নয়, তাদেরও দোষ-গুণ থাকাটাই স্বাভাবিক। হীনস্বার্থে ব্যক্তি বা দলের লেজুরবৃত্তি করা সাংবাদিকের কাম্য নহে। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সাংবাদিক তার লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করবে। এটাই সকলের কাম্য।

আজ দেশের সাংবাদিরা কতটুকু নিরাপদ তা জনগণের কাছে দুশ্যমান। কারণে-অকারণে সাংবাদিকদের দোষারোপ ও হয়রানি করা হয়ে থাকে। ফলে সাংবাদিকেরা দিন দিন অধিকশঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে। সাংবাদিকদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বৈরী পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সাংবাদিক, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে। তার আগে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন দুর করতে হবে। সাংবাদিকদের মধ্যে নানামত ও অনৈক্য সৃষ্টি করেছে বিভাজন। এই বিভাজন থেকে একে অপরের সাথে বিরোধ ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। যা খুবই দুঃখজনক। সাংবাদিকদের নিজ স্বার্থে সকল মতভেদ ভূলে গিয়ে আগে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরী। সাংবাদিকরাই হচ্ছে জাতির বিবেক। সমৃদ্ধ দেশ গড়তে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে যে কোন অপশক্তিকে প্রতিহত করা সম্ভাব। সাংবাদিকদের নিজের নিরাপত্তা, গণতন্ত্র সুদৃঢ় ও জনগণের কল্যাণে সম্মিলিত ঐক্য কামনা করি।

লেখকঃ সাংবাদিক





আর্কাইভ