

শনিবার ● ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » আঞ্চলিক » আধুনিক ঘুনি মেশিন তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন উজ্জ্বল লস্কর
আধুনিক ঘুনি মেশিন তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন উজ্জ্বল লস্কর
মাগুরা প্রতিনিধি : আষাঢ় থেকে ভাদ্র এ তিন মাস বর্ষা মৌসুমে জেলার বিভিন্ন খাল বিলে পানিতে ভরে যায়। এ সময় বিভিন্ন খাল বিলে মাছের চাহিদা বেড়ে যায়।
খাল বিল নদী নালাতে মাছ ধরার ধুম পড়ে যায় জেলেদের। মাছ ধরতে মৎস্যজীবীরা ব্যবহার করেন নানা উপকরণ। প্রাচীনকাল থেকে মাছ ধরা গ্রামীণ জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এরই ধারাবাহিকতায় যুগ যুগ ধরে মৎস্যজীবীরা ব্যাবহার করে আসছেন হাতে বোনা রাবানী বা ঘুণি। সময় বদলাচ্ছে, বদলাচ্ছে মাছ ধরার সেই প্রাচীন উপকরণের কৌশলও। আগে যেখানে মৎস্যজীবীরা হাতে বানাতেন ঘুণি সেই ঘুণি এখন মেশিনে তৈরি করছেন মাগুরার শালিখা উপজেলার ধনেশ্বরগাতী ইউনিয়নের উজ্বল লষ্কর। এ মেশিনটি উদ্ভাবক করে তিনি ইতিমধ্যেই এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। তার উদ্ভাবন করা মেশিনটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন তার বাড়ি ভিড় করছেন।
উজ্বল লস্কার জানান, ছোট বেলা থেকে আমি মাছ ধরতে পছন্দ করতাম। এরপর নিজ হাতে তৈরি করছি মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ। প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দুইটি মাছ ধরার রাবাণী বা ঘুনি তৈরি করেছি। এগুলো বিক্রি করে কোনো রকম চলতো সংসার আমার। এভাবে চলতে থাকে বারো বছর। এরপর মনে মনে পরিকল্পনা করি কিভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি করা যায় মাছ ধরার ডিজিটাল মেশিন। তারই ধারাবাহিকতায় নিজ হাতে লোহার যন্ত্রপাতি আর দেশীয় উপকরণ যোগাড় করে বানিয়েছি মাছ ধরার ডিজিটাল মেশিন। ২০১৩ সালে প্রথম চেষ্টা । কিন্তু সফল হতে পারেননি।
তবে আমি হাল ছাড়েনি। বারবার পরিবর্তন উন্নয়ন পরীক্ষা চালিয়ে সফলতা পেয়েছি।
তিনি আরো জানান,মেশিনের যন্ত্রাংশ বেশ মজার পেনিয়াম হাইস্পিড দেশিমটর লোহার আঙ্গেল এমনি ভ্যান গাড়ির পুরানো সিক । চালানো যায় বিদ্যুৎতে আবার ১২ ভল্টের ব্যাটারিতে। ঘুনি বানানোর প্রক্রিয়াটি চমৎকার প্রথমে বাঁশ কেটে সিক বানানো হয় তারপর সুতোর সাহায্যে সেগুলো বাধানো হয় জালের মতন করে আর শেষে তৈরি হয় মাছ ধরার সেই ঐতিহ্যবাহী ঘুণি।
এ আধুনিক ঘুনি পেয়ে গ্রামের মানুষ গর্বিত আর মৎস্যজীবীরা খুশি। এই মেশিন দিয়ে দিনে তৈরি করা যায় ৯- ১০ টি ঘুণি। যেখানে আগে একজন মৎস্যজীবী হাতে বানাতেন ২-৩ টি ঘুণি। প্রত্যেকটা ঘুণি উজ্বল বিক্রি করেন পাঁচশত থেকে বারোশত টাকা। পরিবারের সবাই তার এই কাজে সাহায্য করে আসছেন এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা।
বিসিক মাগুরা জেলা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক অর্জুন কুমার বিশ্বাস বলেন, সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, মাগুরার শালিখা উপজেলার ধনেশ্বরগাতী গ্রামের উজ্বল লষ্কার নামের একজন ব্যাক্তি মাছ ধরার বাঁশের ঘুণি তৈরি করার মেশিন নিজেই তৈরি করেছে। এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তিনি যদি কোনো প্রয়োজন মনে করে তাহলে মাগুরা বিসিক এর সাথে যোগাযোগ করতে পারে আমরা তাকে সার্বক্ষণিক সাহায্য সহযোগিতা করবো।
উজ্বল লষ্করের এই উদ্ভাবন গ্রামীণ জীবনে খুলে দিল নতুন দিগন্ত। সরকারী সহায়তা পেলে তিনি বড় পরিসরে করতে চান কারখানা। এদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে অন্যদিকে সচল হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা ।