

মঙ্গলবার ● ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ » নড়াইলে আসামির স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জেরে ইজিবাইক চালককে গলাকেটে হত্যা; আসামি গ্রেফতার
নড়াইলে আসামির স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জেরে ইজিবাইক চালককে গলাকেটে হত্যা; আসামি গ্রেফতার
নড়াইল প্রতিনিধি ঃ ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ দেনাধার বাবু সরদারের স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জেরে নড়াইল সদর উপজেলার শড়াতলা গ্রামের ইজিবাইক চালক আকবার ফকিরকে (৬০) গলা ও পুরুষাঙ্গ কেটে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের পরিবার ও পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ ব্যাপারে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেন নড়াইলের পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম।
তিনি জানান, আকবার ফকির হত্যাকান্ডের তিনদিনের মধ্যে এ মামলার একমাত্র আসামি শড়াতলা গ্রামের বাবু সরদারকে (৫৯) বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে জেলা পুলিশের একাধিক টিমসহ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
হত্যাকান্ডের একদিন পর নিহত আকবারের ছেলে নাজির ফকির অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ হত্যারহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে বাবু সরদারের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায় পুলিশ। অভিযান চালিয়ে রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মশাঘুনি ব্রাক অফিসের সামনে মহাসড়ক থেকে বাবু সরদারকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর আসামি বাবু সরদার হত্যার কথা স্বীকার করে পুলিশের কাছে এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন।
পুলিশ সুপার জানান, পূর্বশত্রুতার জের ধরে ১০ থেকে ১২ দিন আগেই আকবার ফকিরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বাবু সরদার। কারণ, প্রায় ১০ বছর আগে আকবার ফকিরের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নেয় অভিযুক্ত বাবু সরদার। এতো বছর গড়িয়ে গেলেও ঋণের সেই টাকা দিতে ব্যর্থ হন চাতালশ্রমিক বাবু সরদার। এই ঋণের টাকার সূত্র ধরে আকবার ফকির বাবু সরদারের স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এই অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে আকবারের প্রতি বাবু সরদারের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। আকবারকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন বাবু। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী বাবু একটি চাকু, এলার্জিনাশক ২০টি ট্যাবলেট এবং কোমল পানীয় কেনেন। এরপর ঘটনার দিন গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেল থেকেই আকবারের সঙ্গে সময় দেন বাবু সরদার।
এক পর্যায়ে রাতের বেলা শড়াতলার পাশে বুড়িখালী গ্রামের বাঁশবাগানের ভেতর তালগাছের নিচে নিয়ে কোমল পানীয়র সঙ্গে এলার্জিনাশক ২০টি ট্যাবলেট মিশিয়ে আকবারকে খেতে দেন। আকবার ওই পানীয় খেয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর বাবু সরদার গামছা টুকরো টুকরো করে আকবারের হাত ও পা গাছের সঙ্গে বেঁধে চাকু দিয়ে আকবারের গলা ও অন্ডকোষসহ পুরুষাঙ্গ কেটে পাশের ডোবায় তা (অন্ডকোষ ও পুরুষাঙ্গ) ফেলে দেন। আর আকবারের মরদেহ তালগাছের নিচে ফেলে চলে আসেন বাবু সরদার।
পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম আরো জানান, এ মামলার একমাত্র আসামি বাবু সরদারের সঙ্গে আকবারের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ, স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক, বাবুর শ্বাশুড়িকে ধর্ষণচেষ্টা এবং বাবুর মেয়ে ও পুত্রবধূর প্রতিও আকবারের কুনজর ছিল। আকবারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বাবু সরদার দীর্ঘদিন ধরে শোধ করতে না পারায় অপকৌশলে বাবুর পরিবারের প্রতি আকবারের খারাপ প্রভাব পড়ে। এসব নিয়ে আকবারের প্রতি বাবুর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ শেষ পর্যন্ত হত্যাকান্ডে রূপ নেয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন-অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নূর-ই আলম সিদ্দিকী, জেলা বিশেষ শাখার পুলিশ পরিদর্শক মীর শরিফুল হক, নড়াইল সদর থানার ওসি সাজেদুল হকসহ পুলিশ কর্মকর্তারা।