শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২

SW News24
শনিবার ● ২০ মার্চ ২০২১
প্রথম পাতা » উপকূল » বাঘের সাথে লড়াই করে ফেরা বিষ্ণু বিশ্বাস
প্রথম পাতা » উপকূল » বাঘের সাথে লড়াই করে ফেরা বিষ্ণু বিশ্বাস
৯৯৭ বার পঠিত
শনিবার ● ২০ মার্চ ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বাঘের সাথে লড়াই করে ফেরা বিষ্ণু বিশ্বাস

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান,   সুন্দরবনে বাঘের সাথে লড়াই করে জীবন বাঁচিয়ে ফিরে আসা যেন পুনঃজীবন ফিরে পাওয়া। বাঘের মুখ থেকে বেঁচে আসা সহজ কাজ নয়। প্রাণ বাঁচাতে মরণপণ লড়াই করে বেঁচে ফিরে আসা তারপরও সমাজের কাছে তারা অবহেলিত, উপেক্ষিত এর পাশাপাশি অপবাদ শুনে বাঁচতে হচ্ছে। বাঘের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আসা বীর সন্তানদের মতই সম্মানের। এমনই একজন বাঘের সঙ্গে লড়াই করে জীবন বাঁচিয়ে ফিরে আসা পাইকগাছার হিতামপুর গ্রামের মালো পাড়ার বিষ্ণু বিশ্বাস। ---

বিষ্ণু বিশ্বাস জানান, আনুমানিক ২০ বছর আগে ২০০০ সালে আশ্বিন মাসের ঘটনা। সেদিন তারা জ্বালানীর জন্য গরান কাটতে বনের ভিতরে প্রবেশ করে। তারা এক সঙ্গে ৭/৮ জন বনে গরান কাটতে যায়। সুন্দরবনে রুপের গাঙ্গের মুখে গরান কাটতে থাকে। তারা পাশাপাশি গরান কাটা শুরু করে। কিছুক্ষণ পরে বিষ্ণু গরান কাটতে কাটতে নিচু হয়ে সামনে এগুতে থাকে। এ সময় পাশের ঝোপের ভিতর থেকে ভঙ্কর শব্দ করে বাঘ তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিষ্ণু তখন দাদা আমাকে বাঘে ধরেছে, বাঁচাও। এ সময় সাথীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। কেউ কেউ ভয়তে গাছে গিয়ে উঠে। বিষ্ণুর দাদা বেশ কিছুটা দুরে ছিল। বাঘ বিষ্ণুর পিছে থাবা মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। এ সময় বিষ্ণুর একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। বাঘের সঙ্গে বিষ্ণুর ধস্তাধাস্তি চলতে থাকে। বাঘের সামনের ডান পায়ের ধারালো নখ দিয়ে বিষ্ণুর পিঠে চেপে ধরে রাখে। পিছের পা দিয়ে আচড় মেরে বিষ্ণুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। বিষ্ণ বাম হাত দিয়ে বাঘের সামনের বামপা ধরে রাখে। বাঘ তার বুকের বিভিন্ন স্থানে দাঁত বসাতে থাকে। বাঘ তার গলা কামড়ে ধরলে সে আর কোন কথা বলতে পারে না। এ সময় বিষ্ণুর ডান হাতে থাকা দা দিয়ে বাঘের পেটে কোপ বসিয়ে দেয়। এর মধ্যে বিষ্ণুর দাদা কৃষ্ণ বিশ্বাস তাকে উদ্ধার করতে আসলে বাঘ দৌড়ে পালিয়ে যায়। বাঘের আক্রমনে বিষ্ণুর পিঠের বিভিন্ন স্থান চোখের নিচে, গলা, হাত, পেট, বুক, উরু, পিট, নাভীর নিচে ক্ষতবিক্ষত হয়। গলায় কামড়ে দেওয়ায় বিষ্ণুর কথা বন্ধ হয়ে যায়। ইশারায় ছাড়া সে আর কোন কথা বলতে পারিনি। রুপেরগাঙ্গ থেকে হিরোন পয়েন্ট নৌবাহিনীর টহল ফাঁড়িতে বিষ্ণুকে নিয়ে যায়। বিষ্ণুর সারা শরীরে ব্যান্ডেজ, সেলাইন ও ঔষধ দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মোংলা থেকে পাইকগাছা হাসপাতালে নিয়ে আসে। কিন্তু পাইকগাছা হাসপাতাল তাকে ভর্তি না করায় খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। হাসপাতালে দীর্ঘ ৬১ দিন চিকিৎসার পর বাড়ী ফেরে বিষ্ণু। বাড়ীতে আরও ৪৫ দিন চিকিৎসার নেওয়ার পর বিষ্ণুর গায়ের ঘা শুকিয়ে সুস্থ্য হয়ে উঠে। তার পর থেকে সপ্তাহে ৪ দিন নিয়মিত ঔষধ খেতে হয়। ---

বিষ্ণুর চার মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। তার সর্বমোট ৭ শতক জমি। বঙ্গবসাগরে মাছ ধরা ব্যবসা পরিচালনা করে তার সংসার চলে। বাঘের ভয় উপেক্ষা করে সংসার চালানোর জন্য আবারও সুন্দরবনে যেতে হয় মাছ ধরতে। এখন নিজে কাজ করতে পারে না। লোক নিয়ে কাজ করাতে হয়। হাটতে কষ্ট হয়, মাজায় ব্যাথা করে। বাঘে ধরার পর থেকে হঠাৎ হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ সময় তার গাল দিয়ে লালা ঝড়তে থাকে।

বাঘ আক্রমণ করে শুধুই মানুষ মারে না, মানুষকে খেয়ে ফেলে। তাই সহজে কেউ মেনে নিতে পারে না। বাঘের হাতে প্রাণ হারানো মনে করা হয় অত্যান্ত ভঙ্কর দুঃখজনক ঘটনা। বাঘ কামড়ালে আক্রান্তের শরীরে এক ধরনের বোঁটকা গন্ধ হয়। গাল দিয়ে লাল ঝড়তে থাকে। বাঘের কামড় বা পায়ের ধারালো নখের থাবা মারলে আক্রান্ত স্থানটি কুড়াল দিয়ে কেটে নেয়ার মত মনে হয়। কারণ যে বাঘ একবার মানুষের রক্তের সাধ পেয়েছে, তার পর থেকে সে বাঘ মানুষ শিকার করার জন্য চেষ্টা করবে। বাঘের আক্রমণ অধিকাংশ সময়ে বুঝা যায় না। কারণ বাঘ দেখা যায় না। লুকিয়ে থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঘটনাটি খুবই দ্রুত ও চোখের নিমিষে ঘটে।

বাঘের মুখ থেকে ফিরে আসা মানুষদের সম্মানের আসনে বসিয়ে সব রকম সুযোগ সুবিধা ও সহযোগিতার হাত বাড়ানোর মানসিকতা তৈরী করা বড়ই প্রয়োজন। বর্তমানে সরকার বন্য প্রাণীর হামলায় আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। তবে ইতোপূর্বে যে সকল বনজীবীরা বন্য প্রাণীর আক্রমনে নিহত ও আহত হয়েছে তাদের তালিকা তৈরী করে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর জন্য সরকার সুদৃষ্টি কামনা করেছে সচেতন মহল। তাহলে বাঘে ধরা বা বাঘ বিধোবাদের অপবাদ, লাঞ্চনা, গঞ্জনা অনেকাংশে কমে যাবে এবং সমাজে তারা অন্য দশ জনের মত স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবে।





উপকূল এর আরও খবর

১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস ঘোষণা করা হোক ১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস ঘোষণা করা হোক
দুবলারচরে রাস উৎসবে যেতে উপকূলবাসীর মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি; তৎপর শিকারীরাও দুবলারচরে রাস উৎসবে যেতে উপকূলবাসীর মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি; তৎপর শিকারীরাও
জীবনের ঝুঁকি ও সুদের বোঝা মাথায় নিয়ে জীবিকার লক্ষে জেলেদের সমুদ্রযাত্রা জীবনের ঝুঁকি ও সুদের বোঝা মাথায় নিয়ে জীবিকার লক্ষে জেলেদের সমুদ্রযাত্রা
সুন্দরবনের দুবলারচরে রাসপূজায় যেতে বন বিভাগের পাঁচটি রুট নির্ধারণ সুন্দরবনের দুবলারচরে রাসপূজায় যেতে বন বিভাগের পাঁচটি রুট নির্ধারণ
শীত মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যেতে পাইকগাছার জেলে পল্লীতে প্রস্তুতি চলছে শীত মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যেতে পাইকগাছার জেলে পল্লীতে প্রস্তুতি চলছে
উপকূলীয় কেওড়া ফল বাণিজ্যিকীকরণ অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা আনতে পারে উপকূলীয় কেওড়া ফল বাণিজ্যিকীকরণ অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা আনতে পারে
পাইকগাছায় শিবসা নদিতে ধরা পড়ছে ইলিশ; নাগালের বাইরে দাম পাইকগাছায় শিবসা নদিতে ধরা পড়ছে ইলিশ; নাগালের বাইরে দাম
ভারী বর্ষণে পাইকগাছা শহর ও নিন্মাঞ্চল প্লাবিত; ফসলের ক্ষতি বেড়েছে জনদূর্ভোগ ভারী বর্ষণে পাইকগাছা শহর ও নিন্মাঞ্চল প্লাবিত; ফসলের ক্ষতি বেড়েছে জনদূর্ভোগ
আইলার ১৬ বছর ; আজও উপকূলবাসীকে কাঁদায় আইলার ১৬ বছর ; আজও উপকূলবাসীকে কাঁদায়
সাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় শক্তি; উপকূলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে সাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় শক্তি; উপকূলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে

আর্কাইভ