শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১

SW News24
মঙ্গলবার ● ১১ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » পরিবেশ রক্ষায় নিমগাছ
প্রথম পাতা » মুক্তমত » পরিবেশ রক্ষায় নিমগাছ
১৮৩ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ১১ জুন ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পরিবেশ রক্ষায় নিমগাছ

 ---  প্রকাশ ঘোষ বিধান

পরিবেশ রক্ষায় নিমগাছ অতি প্রয়োজনীয় বৃক্ষ। প্রকৃতির অনিন্দ্যসুন্দর সৃষ্টি ও আমাদের বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপাদান অক্সিজেনের জোগানদাতা হল গাছ। উদ্ভিদের যেসব প্রজাতি রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদের নাম হল নিম। প্রকৃতির প্রতিটি গাছ যদিও অক্সিজেনের ভাণ্ডার তারপরও নিমের গুরুত্ব আলাদা। একটি নিমগাছ বাড়িতে থাকা মানে ঔষধি উদ্ভিদের যেমন পরিপূর্ণতা তেমনি পরিবেশেরও বিশুদ্ধতা। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য বিশুদ্ধ অক্সিজেন দরকার। আর এই  অক্সিজেনের  একমাত্র আধার হলো বৃক্ষ। নিম পরিবেশ রক্ষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাতাস শোধন করে এবং বাতাসকে অনেক অনুজীব ও ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখে। নিম তার সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অন্যান্য উদ্ভিদের চেয়ে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন নির্গত করে।পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নিম অধিক ভূমিকা রাখে।

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায়, মাটিকে শীতল রাখতে গাছপালার জুড়ি নেই। বৃক্ষরাজি আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে বৃষ্টিপাতের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে বিরাট ভূমিকা পালন করে। বাতাসের বিষাক্ত কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ করে। দিনেরবেলায় অক্সিজেনের বৃদ্ধি ঘটায়। মানুষ পশুপাখির নানা রোগ নিরাময় এবং নিম একটি ঔষধি গাছ। যার ডাল, পাতা, রস সবই মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বহুবিধ কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।

বৃক্ষরাজির মধ্যে প্রাণী ও উদ্ভিদকূলের জন্য নিম বৃক্ষের মত এত উপকারী বৃক্ষ অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয়নি। নিমের নানাবিধ গুণাগুণের কথা বিবেচনা করেই বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা নিমকে “একুশ শতকের বৃক্ষ” বলে ঘোষণা করেছে।আয়ুর্বেদিক ও ভেষজগুণ সমৃদ্ধ নিমগাছ আমাদের অনেক উপকার করে থাকে। নানা রোগের উপশমের জন্য নিমগাছের নানা অংশ কাজে লাগে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা মনে করেন নিম গাছের ছায়া অত্যন্ত সুশীতল এবং পরিবেশ রক্ষায় এর জুড়ি নেই।

নিম গাছ পরিবেশগতভাবে খুবই উপকারী। গাছ সাধারণত দিনের বেলায় অক্সিজেন ছাড়ে আর রাতে ছাড়ে কার্বন ডাই অক্সাইড। কিন্তু প্রকৃতির এই নিয়ম মেনে চলে না এমন গাছ নিম। রাতে বাতাস শুদ্ধ করতে সাহায্য করে। এটি খুব বেশি মাত্রার দূষণ সহ্য করতে পারে এবং শুষ্ক মৌসুমে পাতা পড়ে গেলেও সেগুলোতে তাড়াতাড়ি নতুন পাতা চলে আসে। নিম গাছের পাতা তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে সীসা শোষণ করে।বাতাস শোধন করে এবং বাতাসকে অনেক অনুজীব ও ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখে। ধূলিকণা, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার অক্সাইড এবং নাইট্রোজেনের মতো দূষক শোষণ করার ক্ষমতা নিম গাছের রয়েছে। নিমের কার্বন ডাই-অক্সাইড ফিক্সেশন করার ক্ষমতা অন্যান্য গাছের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি। এটি প্রতি সেকেন্ডে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ১৪ টি মাইক্রোমোল ( প্রতি বর্গ মিটার) ঠিক করতে পারে। একটি পরিপূর্ণ নিম গাছ প্রায় ১০ টন এসির সমপরিমাণ ঠান্ডা রাখে তার চার পাশের বাতাসকে।

প্রাচীনকাল থেকে কৃষিতে নানাভাবে নিমের ব্যবহার হয়ে আসছে। গুদামে শস্য সংরক্ষণে নিমের শুকনো পাতার ব্যবহার গ্রামবাংলায় প্রচলিত অনাদিকাল থেকে, নিম পাতার নির্যাস কীটনাশক হিসেবে জমিতে ব্যবহার করা হয়। তবে সুখের কথা হলো এটি কোন উপকারী পোকাকে ধ্বংস করে না। তাছাড়া এই কীটনাশক ফসলে ব্যবহার করলে বিষমুক্ত নিরাপদও এর গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকে, নিমের পরিপক্ব বীজের শাঁস থেকে তেল বের করে নেয়ার পর যে খৈল পাওয়া যায় তা জৈব সার হিসেবে উত্তম। অন্যান্য কম্পোস্ট সারের চেয়ে এই সারে সর্বাধিক নাইট্রোজেন ও ফসফরাস থাকে, যা মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি করে ফসলের অধিক ফলন দেয়।

বিশ্বব্যাপী নিম গাছ, গাছের পাতা, শিকড়, নিম ফল ও বাকল ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে পরিচিত। বর্তমান বিশ্বে নিমের কদর তা কিন্তু এর অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহারের জন্য। নিম ছত্রাকনাশক হিসেবে, ব্যাকটেরিয়া রোধক হিসেবে, ভাইরাসরোধক হিসেবে, কীট-পতঙ্গ বিনাশে, ছত্রাক রোধ ও নিয়ন্ত্রণে, ম্যালেরিয়া নিরাময়ে, দন্ত চিকিৎসায় ব্যথামুক্তি ও জ্বর কমাতে, জন্ম নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়।নিম গাছের পাতা, ফল, শিকড় ও বাকল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়। পাতা শাক হিসেবে অনেকে খেয়ে থাকে। এর শিকড় থেকে জ্বর ও পাতা থেকে চর্মরোগের ওষুধ তৈরি করা হয়। নিমের তেল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। নিমের শুকনো পাতা কাপড় চোপড় ও ঘরের চালের পোকামাকড় নিবারণে অত্যন্ত কার্যকরী।যে বাড়ির আঙিনায় নিমগাছ রয়েছে, সেখানে অসুখ-বিসুখের প্রকোপ অনেক কম।

বৃক্ষ মানবজাতির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বৃক্ষ রক্ষা মানে নিজেদের জীবনকে রক্ষা। নিমের গুণাগুণ অপরিসীম। নিম পরিবেশ রক্ষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিম তার সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অন্যান্য উদ্ভিদের চেয়ে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন নির্গত করে। বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য আমরা প্রচুর পরিমানে নিমগাছ লাগাতে পারি। বিশেষ করে স্কুল কলেজের আঙ্গিনার ফাকা জায়গায়, রোড এন্ড হাইওয়ের দুপাশে সারি সারি নিমগাছ লাগানো যেতে পারে। শহরের শ্রীবর্ধনেও নিমগাছের বিকল্প নেই। তাই প্রত্যেক বাড়ির আঙিনায়, অনাবাদি জমি ও আশপাশের ফাঁকা জায়গায় একটি করে হলেও নিমগাছ লাগানো দরকার।

লেখক; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)