

মঙ্গলবার ● ১৪ অক্টোবর ২০২৫
প্রথম পাতা » আঞ্চলিক » দীর্ঘ ৩০ বছরেও পাকা হয়নি রাস্তা দিঘি গ্রামবাসীর ক্ষোভ -আগে রাস্তা পরে ভোট
দীর্ঘ ৩০ বছরেও পাকা হয়নি রাস্তা দিঘি গ্রামবাসীর ক্ষোভ -আগে রাস্তা পরে ভোট
শাহীন আলম তুহিন,মাগুরা থেকে : আগে রাস্তা পরে ভোট এমনই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, শালিখার আড়পাড়া ইউনিয়নের দিঘি গ্রামের অসহায় মানুষ। গ্রামের মূল এ রাস্তাটি দীর্ঘ ৩০ বছরেও ঠিক না হওয়াতে বিপাকে পড়েছেন এই গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। গ্রামের এই রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় মাটির কাঁচা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে আসছেন অসংখ্য মানুষ। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হলেই কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় এই রাস্তাটি। এ সময় বিপাকে পড়ে এ গ্রামের স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিশু কিশোররা। পিঠে বইয়ের ব্যাগ আর এক হাতে স্যান্ডেল নিয়েই যেতে হয় স্কুলে। স্কুল শেষে আবার পায়ে হেঁটে কাদা মেখে বাড়িতে ফিরে শিশুরা। এমন দৃশ্য গ্রামে প্রতিনিয়ত। আবার বর্ষা মৌসুমে কৃষকরা পড়েন মহাবিপদে। দূর দূরান্ত মাঠ থেকে মৌসুমী ফসল মাথায় করে বাড়িতে নিয়ে আসেন তারা। গ্রামবাসী নানা অভিযোগ তুলে বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছরেও দিঘি এই রাস্তাটি ঠিক না হওয়াতে আমাদের জীবন যাত্রার মান অনেকটা পিছিয়ে গেছে। এ গ্রামের কোন রোগী অসুস্থ হয়ে পড়লে কাঁচা রাস্তায় কোন গাড়ি আসতে পারে না। ফলে অনেক রোগী সংকটাপণ্য হয়ে গ্রামেই মারা যায়।
এ গ্রামের কৃষক মোস্তাক শেখ জানান, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে রাস্তাটি টেন্ডার হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। দীর্ঘদিন যাবত দিঘি গ্রামের এ রাস্তাটি না হওয়াতে আমরা বিপাকে আছি।
কৃষক রমজান আলী জানান, বিভিন্ন মৌসুমে আমাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ধান,পাট,সরিষা,মুশুরিসহ অন্যান্য ফসল ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারি না। রাস্তা পাকা না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলতে খুব কষ্ট হয়। আমরা বিভিন্ন ফসল ক্ষেত থেকে মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। এজন্য অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে বেশি টাকা খরচ করে আমাদের ফসল ঘরে তুলতে হয়। একটি ফসল ঘরে তুলে শ্রমিকের খরচ বাদে আমাদের কোন অর্থ থাকে না। তাই এই রাস্তাটি পাকা হওয়া খুব জরি হয়ে পড়েছে।
এ গ্রামের নারী হাজেরা বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর এ রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় আমরা বিপাকে আছি। কাঁচা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে আমাদের খুবই কষ্ট হয়। আমাদের গ্রামের কোন নারী অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নিতে খুব কষ্ট হয়। একটু বর্ষা হলেই পুরো রাস্তায় পানি জমে কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। কোন গাড়ি আসতে পারে না ফলে অনেক অসুস্থ রোগী চিকিৎসার অভাবে মারাও যায়।
এ গ্রামের ব্যবসায়ী আনারুল জানান, গ্রামের মাঝখানেই আমার একটি দোকান আছে। অনেক মালামাল আনতে আড়পাড়া বাজারে যেতে হয়। রাস্তা পাকা না হওয়ায় বিভিন্ন পণ্যের গাড়ি আমাদের গ্রামে আসতে পারে না ফলে গুরুত্বপূর্ণ দৈনন্দিন পণ্য আমাদের দূরের বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এ রাস্তাটির সংস্কারের জন্য আমরা গ্রামবাসীরা একাধিকবার চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন জানিয়েছি কিন্তু কোন ফল পাইনি। সামনে আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে তাই আমরা ক্ষোভের সাথে গ্রামবাসীরা বারবার বলছি, আগে রাস্তা পরে ভোট।
শালিখা উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরজ আলী বিশ্বাস, এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই রাস্তাটি টেন্ডার হলেও তা বাতিল হয়ে যায়। এই রাস্তাটির কিছু অংশ ইটের সলিং করা হয়েছিল । কিন্তু সেটিও এখন বর্তমানে ভেঙে পড়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট রাস্তাটি সংস্কারের জন্য বার বার তাগিদ দিয়েছি। টেন্ডার সম্পূর্ণ হলেই আশা রাখি রাস্তার কাজ শুরু হবে।