

রবিবার ● ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » শরতের স্নিগ্ধতায় কাশফুল
শরতের স্নিগ্ধতায় কাশফুল
প্রকৃতিতে যখন শরৎকাল আসে; তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় এর আগমনী বার্তা। এ ঋতুতে পালকের মতো নরম এবং ধবধবে সাদা রঙের কাশফুল ফোটে। বর্ষা ঋতুকে বিদায় জানিয়ে নীল আকাশে সাদা তুলার মতো মেঘের সঙ্গে কাশফুলের মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া প্রকৃতিতে শুধুই মুগ্ধতা ছড়ায়। দিগন্তজোড়া শুভ্র কাশফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। নীল আকাশের নিচে সাদা কাশফুল যখন বাতাসে দুলতে থাকে; তখন মনে হয় শ্বেত বসনা একঝাঁক নৃত্যশিল্পী নৃত্য করছে।
শরৎ এলে নদীর ধারে, বিলে ও জলাভূমির প্রান্তরে শোভা পায় কাশফুল। প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে কাশফুলের শুভ্র রূপ। কাশফুলের এই সৌন্দর্য উপভোগে ছুটে যান অনেকেই। কাশফুল মানেই শরতের শুভ্রতা, নিঃশব্দ ভালোবাসা আর প্রকৃতির এক অনন্য শান্ত সৌন্দর্য। এই ফুল যেন প্রকৃতির গভীর ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি যেখানে বাতাসে দোল খেয়ে ওঠে স্মৃতির ঢেউ।
কাশফুল একধরনের বহুবর্ষজীবী ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। কাশফুল উদ্ভিদটি উচ্চতায় সাধারণত ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনা রুক্ষ এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। তবে নদীর তীরেই এদের বেশি জন্মাতে দেখা যায়। নদীর তীরে ফুলফোটা শ্বেতশুভ্র কাশবন দেখতে খুবই সুন্দর। এর আদিবাস রোমানিয়া। গাছটির চিরল পাতার দুই পাশ বেশ ধারালো। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই কাশফুল দেখতে পাওয়া যায়।
গ্রাম এলাকার জ্বালানি ও কম দামে পানের বরজের ছাউনি হিসেবে কাশের ব্যবহার হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। কাশ দিয়ে গ্রামের বধূরা ঝাঁটা, ডালি, মাদুর তৈরি করে থাকে। ঘরের চাল, বাড়ির সীমানার বেড়া ও কৃষকের মাথাল তৈরিতেও কাশগাছ ব্যবহার করা হয়।
কাশফুলের বেশ কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। যেমন, পিত্তথলিতে পাথর হলে নিয়মিত গাছের মূলসহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে ওষুধ তৈরি করে পান করলে পিত্তথলির পাথর দূর হয়। কাশমূল বেটে চন্দনের মতো নিয়মিত গায়ে মাখলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর হয়। এ ছাড়া শরীরে ব্যথানাশক ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশের মূল ব্যবহৃত হয়।
গ্রামবাংলায় বিশ্বাস করা হয়, কাশফুল মনের কালিমা দূর করে। তাই শুভ কাজে কাশফুলের পাতা বা ফুল ব্যবহার করা হয়।প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বাংলাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে কাশফুল ছিল। কাশফুলের অন্য একটি প্রজাতির নাম কুশ। এরা দেখতে প্রায় কাশফুলের মতোই। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পুরাণ-এ কুশের স্থান খুব উঁচুতে। সাহিত্যে কাশফুলের কথা এসেছে নানাভাবে।
কাশফুল মূলত ছন গোত্রীয় এক ধরনের ঘাস। নদীর তীরেই এদের বেশি জন্মাতে দেখা যায়। তবে জমি দখল আর নদের তীরে চাষাবাদ বেড়ে যাওয়ায় কাশবনের পরিধি কমে এসেছে।