

রবিবার ● ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » সুন্দরবনে শামুক নিধনে হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য
সুন্দরবনে শামুক নিধনে হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসে অসাধু চক্র নতুন কৌশল নিয়ে মাছ ও জলজ প্রাণী শিকারের পাশাপাশি নির্বিচারে শামুক আহরণ শুরু করেছে। এতে শুধু সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য নয়, জেলেদের ভবিষ্যৎ জীবিকাও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
সুন্দরবনের নদী-খাল থেকে প্রতিদিন প্রকাশ্যে ট্রলার ও নৌকায় ভরে নির্বিচারে শামুক সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরে এসব শামুক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার হচ্ছে। এই শামুকগুলো মূলত চিংড়ি ও কাঁকড়ার খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছের খাবার হিসেবেও এর চাহিদা বাড়ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চড়া দামে এসব শামুক অবৈধ পথে ভারতে পাচার করছে, যেখানে চিংড়ি চাষের জন্য এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শামুক হচ্ছে জলাশয়ের স্বাভাবিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এটি নদী-খালের তলদেশে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ শোষণ করে পানির গুণগত মান ঠিক রাখে। কিন্তু নির্বিচারে শামুক নিধন করলে শুধু প্রাকৃতিক ভারসাম্যই নষ্ট হবে না, বরং জলজ প্রাণীদের খাদ্যচক্রেও বিরূপ প্রভাব পড়বে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, টাকার লোভ দেখিয়ে এই কাজে জড়ানো হচ্ছে প্রান্তিক জেলেদের। যাদের অধিকাংশই নারী। এভাবে কয়েক শ মণ শামুক একদিনেই সংগ্রহ করা হচ্ছে সুন্দরবন থেকে। আর সে শামুক সড়কপথে ও নদীপথে পাচার করা হচ্ছে। স্থানীয় জেলেরা অসাধু ওই চক্রের কাছে সেগুলো বর্তমানে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শামুক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি পানির দূষণ কমাতে সহায়তা করে এবং মাছ ও কাঁকড়ার জন্য প্রধান খাদ্য। শামুক নিধন চলতে থাকলে শুধু পরিবেশ নয়, স্থানীয় অর্থনীতিও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। তাই এখনই এ অপতৎপরতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা ফজলুল হক বলেন, শামুক নিধন ও পাচার নজরে রয়েছে এবং বন বিভাগের নিয়মিত অভিযান চলছে। মাঝে মাঝে বিপুল শামুক উদ্ধার করে নদীতে অবমুক্ত করা হচ্ছে, পাশাপাশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
সচেতন মহল বলছেন, দ্রুত কঠোর আইন প্রয়োগ ও প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে অচিরেই বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ভয়াবহ সংকটে পড়বে।